শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোরডটকম :বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী বলেন, যাঁরা ইসলামের খেদমতে নিবেদিতপ্রাণ, তাদেরকে চাইলেও ভুলে যাওয়া যায় না। পলাশীর পরাজয়ের পর ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলাম ও মুসলমানের চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস, তাহযীব-তামাদ্দুন তখন ভুলুণ্ঠিত হয়েছিল।
অন্ধকারাচ্ছান্ন এবং শিরক-বিদআত ও কুসংস্কারের নিগড়ে আবদ্ধ সে মুসলিম সমাজে তখন ইসলামের প্রকৃত আদর্শ পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন যিনি দেখেছিলেন, তিনি হলেন হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.)। তাঁর শাহাদাতের দুশো বছর পর আবার আমাদের এ সমাজ জাহিলিয়্যাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) এর অনুসারীদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, দুয়ারে দুয়ারে মানবতার বাণী পৌঁছাতে হবে, ইসলামের প্রকৃত আকীদা-আদর্শে মানুষদের উজ্জীবীত করতে হবে।
তিনি আজ (৫মে) শনিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররমস্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আযাদী আন্দোলনের অকুতোভয় সিপাহসালার, ঈমানী চেতনার প্রাণপুরুষ, আমীরুল মু’মিনীন, ইমামুত তরীকত, শহীদে বালাকোট হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মরণে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বালাকোট-চেতনা উজ্জীবন পরিষদের উদ্যোগে পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক, বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন মাওলানা আবু নছর জিহাদীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সদস্য সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী।
বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজমুল হুদা খান এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা আজির উদ্দীন পাশার যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি ড. এম. শমসের আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ.আর.এম. আলী হায়দার মুর্শিদী, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব আলহাজ্জ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, শামসেবাদ দরবারের পীর ছাহের মাওলানা শামসুল হক, যশোর দারিয়াপুরের পীর ছাহেব অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম, নেছারাবাদের পীর ছাহেব হযরত মাওলানা খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ মহাসচিব মাওলানা এ কে এম মনোওর আলী, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম-মহাসচিব ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান, দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবু বকর সিদ্দিক, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, কুমিল্লা বার্ড’র যুগ্ম-পরিচালক আলহাজ¦ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল কাদের, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা হাসান মাহমুদ।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, নয়াটুলা কামিল মাদরাসা ঢাকা’র অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ রেজাউল করীম, ফেনী ছাগলনাইয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ ভূঁইয়া, চাঁদপুর ফকিরবাজার ইসলামিয়া ছুন্নিয়া সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান সরকার, মোহাম্মদপুর গাউছিয়া ফাজিল মাদরাসা ঢাকা’র অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইজহারুল হক, চট্টগ্রাম সুফিয়া নুরিয়া ফাযিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হক, কুমিল্লা আহমদিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম মীরেরসরাই লতিফিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা একরামুল হক, বিশ্বনাথ আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নুমান আহমদ, মহাখালী হোসাইনিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, জুরানপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান প্রফেসর আবদুল হামিদ, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মুহিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসাইন জাহেদ।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবু ছালেহ মোহাম্মদ কুতবুল আলম, অফিস সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নজীর আহমদ হেলাল, মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, বৃন্দাবন সরকারী কলেজ হবিগনজের প্রভাষক নুমান আহমদ, লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটি ঢাকার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইকবাল খন্দকার, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ কাওছার আহমদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ নেত্রকোণা জেলা সভাপতি মাওলানা সৈয়দ তোফায়েল আহমদ, কুমিল্লা জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমীন, ঢাকা মহানগরী সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসেন সালেহী, সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ছালেহ আহমদ, সুনামগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক মাও. মাহবুবুর রহমান তাজুল, মৌলভীবাজার জেলা সহ সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইছহাক আহমদ, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান শাহেদ, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম আহমদ, সহ প্রচার সম্পাদক ওসমান গনী, আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা মুজিবুর রহমান মাদানী, মাস্টার আহমদ আলী, দারুল আমান দরবার শরীফের পীরজাদা মারুফ সিদ্দিকী, তালামীযে ইসলামিয়া ঢাকা মহানগরী সভাপতি মুজিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মারজান আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসাইন,সিলেট পশ্চিম জেলা সভাপতি জাহেদুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি মোবাশ্বির হুসাইন, সিলেট মহানগরী সভাপতি মাহবুবুর রহমান ফরহাদ, সাধারণ সম্পাদক শেখ মনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিতত্ব করেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান। শেষে মুনাজাত করেন শামসেবাদ দরবারের পীর ছাহেব হযরত মাওলানা শামসুল হক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী বলেন, সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.)’র আন্দোলন ও সংগ্রাম বুঝতে হলে তাঁর সময়ের প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। সেসময় ব্রিটিশদের শাসননীতি ছিল ‘বিভাজন ও শাসন নীতি’। এ শোষণ নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের আযাদী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.)। তাঁর শাহাদতের মাধ্যমে এ আন্দোলন আরো শক্তিশালী হয়েছে। এ চেতনার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। তাঁর রূহানী চেতনায় বলীয়ান হয়ে আযাদী এসেছে, ইসলামের প্রকৃত আকীদা-বিশ্বাস এ উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজি বলেন, আউলিয়ায়ে কিরামের উত্তরসূরী সকলকে সব মতপার্থক্য পেছনে ফেলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কেননা আউলিয়ায়ে কিরামবিরোধীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্ধকারে থেকে যাবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে পরিষদের সদস্য সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী বলেন, সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী রহ. শিখ রাজা রণজিৎ সিং-এর নির্যাতন থেকে মুসলমানদেরকে রক্ষা করার জন্য তার বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত হয়েছিলেন। সায়্যিদ আহমদ শহীদ (র.) রাজার বেশে ছিলেন, কিন্তু সে রাজকীয় অবস্থা পরিত্যাগ করে তিনি মুসলমানদের রক্ষার জন্য জিহাদে লিপ্ত হয়ে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। সায়্যিদ আহমদ শহীদ (রহ.) এর নামের সাথে আমাদের চেতনা, আমাদের ঈমান, আমাদের আত্মপরিচয়ের সম্পর্ক। তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলমানদের রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখা। এ সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম কারণ হলো, আমরা তাঁর নাম শুনে উজ্জীবীত হই, তার কর্ম সম্পর্কে জেনে আমরা অনুপ্রাণিত হই।
ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, সায়্যিদ আহমদ বেরলভী (র.)’র আন্দোলন ছিল বহুমুখী আন্দোলন। তাঁর আন্দোলন একদিকে ছিল মানুষের আত্মশুদ্ধির আন্দোলন, আরেক দিকে এটি ছিল মুসলিম সমাজে প্রচলিত বিদ‘আত ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, আরেক দিকে এ আন্দোলন ছিল সমাজে প্রচলিত অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম।