কক্সবাজারের টেকনাফে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শনিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় এই তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এখনও কাজ শুরু করতে পারেননি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা এখনও চিঠি হাতে পাননি। চিঠি হাতে পেলেই তদন্ত কাজ শুরু করবেন। রবিবার (২ আগস্ট) সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর জানা যাবে কী ঘটেছিল। এই মুহূর্তে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমি যা মন্তব্য করবো তাতেই একটি প্রভাব পড়বে। তাই এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হিসেবে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত একজন পুলিশ সুপার এবং ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তবে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন রবিবার বলেন, ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নাম চেয়ে একটি চিঠি এসেছিল। পুলিশ সুপার আমার (ইকবাল হোসেন) নাম সংযুক্ত করে সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন। পরবর্তী চিঠি আমি এখনও হাতে পাইনি। চিঠি হাতে পেলেই আমরা তদন্ত কাজ শুরু করবো।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশের গুলিতে একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও তদন্ত কমিটিকে ঘটনার যথাযথ কারণ অনুসন্ধান করে নিরপেক্ষভাবে যার যা দায় তা নিরূপণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় মতামত দিতেও বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ খান নিহত হন। ঘটনার পর পুলিশের দাবি, ওই সেনা কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে এক সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তার সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়।
পুলিশ বলছে, তারা গাড়িটি তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট, কিছু গাঁজা ও দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ নিহত সেনা কর্মকর্তার পিস্তলটি জব্দ করেছে।
জানা গেছে, একটি তথ্যচিত্র ধারণের কাজে আরও চার জন সঙ্গীসহ এক মাস ধরে হিমছড়ির নীলিমা রেস্ট হাউজে অবস্থান করছিলেন মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান। তিনি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ট্রাভেল শো ‘জাস্ট গো’ নামে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করছিলেন। ঘটনার দিন তারা বাহারছড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় রাতে ভিডিও করার জন্য একটি পাহাড় দেখতে আসেন। লাইটের আলো দিয়ে পাহাড় দেখার সময় স্থানীয় লোকজন তাদের ডাকাত ভেবে পুলিশে খবর দেয়। এই পরিস্থিতিতে মেজর সিনহা ও সিফাত পাহাড় থেকে নেমে রিসোর্টে ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। পথে বিজিবির চেকপোস্টে পরিচয় দিয়ে চলে এলেও পুলিশের চেকপোস্টে তাদের গাড়ি তল্লাশি করতে চাইলে কথা কাটাকাটি হয়। এরই একপর্যায়ে টেকনাফ থানার পরিদর্শক লিয়াকত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
বার্তা বিভাগ প্রধান