প্রযুক্তি আজ আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িয়ে গেছে। এটি ছাড়া এখন একটি দিনও ভাবতে পারি না আমরা। তবে, প্রযুক্তি কি শুধুই আশির্বাদ হয়ে এসেছে আমাদের জীবনে? নাকি কখনো কখনো এটি অভিশাপ হয়েও দাঁড়াতে পারে? সে গল্পই বলা হয়েছে এ লেখায়।
ইলমি (ছদ্মনাম), বয়স আনুমানিক ১৬ বছর। বাবা মায়ের সাথে ফতুল্লা, নারায়নগঞ্জে বসবাস করেন। মেধাবী ছাত্রী ইলমি সদা হস্যোজ্জ¦ল ও প্রাণবন্ত মেয়ে, গোটা পরিবারের মধ্যমণি। হঠাৎ একদিন বাবা-মায়ের কাছে বায়না, তার একটি মোবাইল ফোন লাগবে। বাবা মা চিন্তায় পড়ে যান, এ সময় তার কাছে মোবাইল ফোন দেয়া সমীচীন হবে কি? কিন্তু মেয়ের আবদারের কাছে হেরে যান তাঁরা। কিনে দেন একটি নতুন এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। মহাখুশি ইলমি। তবে, ইলমির বাবা-মা কি বুঝতে পেরেছিলেন যে মেয়ের হাতে জীবন বিধ্বংসী এক যন্ত্র তুলে দিয়েছেন তাঁরা।
নতুন মোবাইলে সকল প্রকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপ ডাউনলোড করে নেয় ইলমি। তার সকল নেশা এখন মোবাইল ঘিরে। ফেসবুকে নতুন নতুন বন্ধু বানানো, তাদের সাথে চ্যাট করা আর কথা বলা এখন তার প্রতিদিনের কাজ। এভাবেই পরিচয় হয় ঢাকার মিরপুর রূপনগর এলাকায় ছেলে মোঃ জাকির হোসেনের সাথে। তাদের মাঝে একপর্যায়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সময়ের পরিক্রমায় এ বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমের সম্পর্কে। মেসেঞ্জারে দিন রাত চলতে থাকে চ্যাটিং, আর কখনো কখনো অডিও-ভিডিও কল। ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে উভয়ের মধ্যে। জাকির প্রেমের কথা বলে বলে ইলমিকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে থাকে। ধীরে ধীরে জাকির ইলমির কাছে বিভিন্ন অন্যায় আবাদার করতে থাকে। ছোট্ট ইলমি না বুঝে জাকিরের সকল অন্যায় আবদারে সাড়া দিতে থাকে। ভিডিও কলে চলতে থাকে নগ্ন ও আপত্তিকর ভিডিও চ্যাট। একপর্যায়ে ধূর্ত জাকির ইলমির নগ্ন ভিডিও রেকর্ড করতে থাকে। এরপর ইলমির জীবনে নেমে আসে ভয়ংকর এক কালো অধ্যায়।
প্রেমিক জাকির পাল্টে ফেলে তার চিরচেনা চেহারা। ভয়ংকর হতে থাকে তার কথা বার্তা। শুরু হয় ইলমির উপর মানুসিক নির্যাতন। ইলমি তার বাবা মায়ের কাছে ভয়ে কিছুই বলতে পারে না। এদিকে জাকির ইলমিকে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওর ভয় দেখিয়ে ইলমির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। ইলমি ভয়ে বাবা মায়ের টাকা চুরি করে জাকিরকে দিতে থাকে। এভাবে অর্থের লালসা বাড়তে থাকে জাকিরের। এবার সে ইলমিকে বলে বসে তার ২ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। আর যদি সে ২ লক্ষ টাকা তাকে না দেয় তাহলে সে ইলমির সব আপত্তিকর ছবি ও নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে ছেড়ে দিবে। প্রমাণ স্বরূপ ইলমির মোবাইলে সে ইলমির কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও প্রেরণ করে।
উপায়ান্তর না দেখে এক পর্যয়ে সব ঘটনা বাবা মাকে খুলে বলে ইলমি। ইলমির বাবা-মা সব জানতে পেরে গত ১৪ জুলাই ২০২০ সিআইডি, ঢাকার সাইবার মনিটরিং সেলে ফোন করে বিষয়টি জানায়। তদন্তে নামে সাইবার মনিটরিং টিম। ১৭ জুলাই ২০২০ সন্ধ্যা ৬.০০ ঘটিকায় আসামি মোঃ জাকির হোসেনকে মিরপুর রূপনগর এলাকায় তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। সেই সাথে তার ব্যবহারের মোবাইল ফোনটি তথ্য প্রমাণসহ জব্দ করে। আসামি জাকিরের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় পর্ণোগ্রাফী ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। জাকির ইতোমধ্যে তার দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেছে।
ইলমি তার ভুল বুঝতে পেরেছে। ভুল বুঝতে পেরেছেন ইলমির বাবা-মা’ও। কিন্তু তাদের এ ভুলের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। হয়তো তার চেয়ে আরো বেশি মূল্যও দিতে হতে পারতো। তবে, তাঁরা ঘটনাটি জানতে পারার সাথে সাথেই পুলিশকে অবগত করায় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই অপরাধীকে ধরা সম্ভব হয়েছে।
আপনি আপনার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের হাতে এরকম কোনো ভয়ঙ্কর অস্ত্র তুলে দেননি তো? খেয়াল রাখছেন তো, আপনার অবুঝ সন্তান আপনার অগোচরে কি করছে, কাদের সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে?
সূত্র: বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া সেল
বার্তা বিভাগ প্রধান