সময় গড়ানোর সাথে সাথে সিলেটে ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনার সংক্রমণ। করোনাক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সিলেটে প্রথম দুই মাসে যতো রোগী ছিল, এর পরের দেড় মাসে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি! গেল সপ্তাহের শুরুর দিকে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও গত কয়েক দিনে বেড়ে গেছে আক্রান্তের হার। নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার প্রায় চল্লিশ ভাগ। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত সিলেটের স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, সিলেট বিভাগের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হন গত ৫ এপ্রিল। সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেটের বাসিন্দা ডা. মঈন উদ্দিন ছিলেন ওই শনাক্ত হওয়া রোগী। ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেশের প্রথম চিকিৎসক হিসেবে করোনায় ১৫ এপ্রিল মারা যান তিনি। এপ্রিল ও মে মাসে সিলেটে সংক্রমণের হার অনেক কম ছিল। এ দুই মাসে সিলেটজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪০ জন। কিন্তু জুন থেকে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়াবহভাবে। জুনের পুরোটা ও চলতি জুলাই মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত সিলেটে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও ৫ হাজার ৩৬৬ জন! গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা অবধি সিলেটজুড়ে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৪০৬ জন।
একই সময়ে মৃত্যুর সংখ্যায়ও উল্লম্ফন ঘটেছে। এপ্রিল ও মে মিলিয়ে করোনায় সিলেটে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৯। জুন মাস আর জুলাইয়ের অর্ধেক মিলিয়ে সেই সংখ্যা এখন ১১৩। গেল দেড় মাসে মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের!
এদিকে, গেল সপ্তাহের শুরুর দিকে সিলেটে করোনার সংক্রমণের হার কিছুটা কমে এসেছিল। ফলে সাধারণ মানুষসহ সবার মধ্যে খানিকটা স্বস্তি ফিরছিল, সংক্রমণের হার বুঝি এখন আরো কমে আসবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি! বিগত তিন দিনের সংক্রমণের হার বলছে, পরিস্থিতি মোড় নিচ্ছে আরো বিপজ্জনক দিকে। গেল মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৩৪ জন। এ তিন দিনে ল্যাবে ১১২৮ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরিসংখ্যান বলছে, এ সময়ে শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৪৭ ভাগ।
এদিকে ১১ জুলাই থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এই সময়েই সিলেট বিভাগে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে শতর ঘর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে অনেক মানুষ উপসর্গ ছাড়াও করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করিয়েছেন। ফলে শনাক্তের হার কম ছিল। বর্তমানে যাদের উপসর্গ আছে, শুধু তারাই এসে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। ফলে শনাক্তের হারও এখন বাড়ছে। তবে গোটা পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক বলছেন দায়িত্বশীলরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনা করলে পরিস্থিতি আসলে ভালো নয়। এখন উপসর্গযুক্ত মানুষের পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে গেছে। এর ফলে শনাক্ত সংখ্যাও বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের ভাবনা অবশ্যই আছে। তবে মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই এই মুহুর্তে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।’
প্রতিনিধি