বিলম্ব ন্যায়বিচারকে প্রতিহত করে তাই অধিকার প্রতিষ্ঠায় কখন আদালতের দ্বারস্থ হবেন? (Delay hinders justice so when to go to the court for establishing right)?
আমরা জানি, আইনের চোখে সবাই সমান। যে যত উঁচুই হোন না কেন, আইন সবার ঊর্ধ্বে। একটি রাষ্ট্রে বিচারালয় হচ্ছে ব্যক্তি, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন যে কারও জন্যই শেষ ভরসাস্থল। গ্রিক দার্শনিক মহামতি অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘ন্যায়বিচারের মধ্যেই সমাজের সুস্থিতি নির্ভরশীল।’
ভাই ভাইকে ঠকাতে পারে। পিতা পুত্রকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেও খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। সমাজে আজকাল এমন সব ঘটনা ঘটেই চলেছে। স্বার্থের দুনিয়া বলে কথা। বাবা বা মায়ের বিরুদ্ধে সন্তান কিংবা সন্তানের বিরুদ্ধে বাবা বা মাকেও আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে দেখা যায় আজকাল।
আইনের শাসনে পৃথিবীর সব দেশেই এমন বন্দোবস্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিচারালয় হচ্ছে সবার কাছেই অগাধ আস্থা আর বিশ্বাসের প্রতীক।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা একটি পবিত্র ও মহান দায়িত্ব। বিচারকের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও সততা ছাড়া ন্যায়বিচার সম্ভব নয়। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কেবল একা বিচারক, বা একজন আইনজীবীর পক্ষে সম্ভব নয় এই দু:সাধ্য কাজটি করা।
একটি মামলার সাথে জড়িত থাকে দুইটি পক্ষ-বাদী ও বিবাদী ও অনেক অংশীদার- বিচারক, আইনজীবী, আদালতের কর্মকর্তা, পুলিশ ও প্রশাসন। ফৌজদারি মামলায় থাকে আরো অনেক পক্ষ। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকার ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ও কখনো কখনো পক্ষ হয়ে যায়। সেটা কখনো প্রত্যক্ষ আবার কখনো পরোক্ষভাবে। এই সব পক্ষকে খুশি করতে পারলেই আসে আকাঙ্ক্ষিত ন্যায়বিচার।
Whatever, মামলা করতে হলে প্রথমেই বাদীকে সুনির্দিষ্ট আদালতে আবেদন করতে হয়। আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। তা না হলে মামলা গ্রহণ করা হয় না। কাজেই বাদীকেও সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়ে মামলা করতে হবে।
অসচেতনতার ফলে বিলম্বের কারণে অনেকেই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন না, কেননা আইনের সূত্র হচ্ছে ‘বিলম্ব ন্যায়বিচারকে প্রতিহত করে’। আইনের আরো একটি নিয়ম হচ্ছে ‘যে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট নয়, আইন তাকে সহায়তা করে না।’ আইন সচেতনতার এবং অবহেলার কারণে মানুষের অধিকার আদায় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। নিষ্ঠুর তামাদি আইনের প্রবল বাধা আর অতিক্রম করা যায় না। কেননা সময় একবার অতিবাহিত হয়ে গেলে আর তা ফিরে পাওয়া যায় না।
মূলত মামলা মোকদ্দমার আধিক্য কমাতে এবং নাগরিকদেরকে নিজ নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট করতেই জন্ম হয়েছে তামাদি আইনের। এজন্য অনেকে বলে থাকেন তামাদি আইন জবর দখলকে সমর্থন করে, কারণ নির্দিষ্ট সময় কালের মধ্যে জবর দখলকারীর বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা না করলে সংশ্লিষ্ট জমিতে জবর দখলকারীর এক প্রকার শক্তিশালী বিরুদ্ধ স্বত্ব জন্ম নেয়। যার ফলে তাকে আর উচ্ছেদ করা যায় না এবং বৈধ মালিক তার মালিকানা স্বত্ব হারায়।
সাধারণত কোন একটি বিষয়ে নালিশের উদ্ভব হলে অর্থাৎ কোন ব্যাপারে মামলা করার প্রয়োজন দেখা দিলে প্রশ্ন জাগে মামলাটি কখন করবো? আবার অনেকে মনে করেন- ‘করবো এক সময়’ বলে বসে থাকেন। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। আসলে কখন মামলা দায়ের করতে হবে সে প্রশ্নের সমাধান দিয়েছে তামাদি আইন। আর যারা মনে করেন যে, ‘করবো এক সময়’ তাদের সাবধান করেছেন এ আইন। যে কোন সময়, আপনার খেয়ালখুশি মতো আপনি আপনার দাবির স্বপক্ষে মামলা দায়ের করতে পারেন না, সব কিছুর যেমন একটি নিয়ম আছে, আইন আছে, মামলা দায়েরের ক্ষেত্রেও সময়ের সেই নিয়ম বেঁধে দিয়েছে তামাদি আইন।
তামাদি আইন মানুষকে সাবধান করেছে যে, একটি বিশেষ সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর আর মামলা করা চলবে না। দেশের প্রচলিত আইন এবং সরকার এটাই প্রত্যাশা করেন যে, প্রতিটি নাগরিক তাদের অধিকার সম্বন্ধে সদা জাগ্রত এবং সচেতন থাকবে। কেউ তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে বিচার প্রার্থনা করলে আদালত তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোতভাবে সাহায্য করবে। কিন্তু কেউ যদি নিজের অধিকারের বিষয়ে উদাসীন থাকে এবং আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিকারের জন্য আদালতে উপস্থিত না হয়, তবে সেই রকম ব্যক্তিকে আইন-আদালত সাহায্য করবে না। তামাদি আইন ধরেই নেয় যে, দাবি যার সত্য, সে তার দাবি আদায়ে তৎপর থাকবে।
এভাবে মামলা মোকদ্দমার সময়সীমা বিষয়ে কোন বাঁধা নিষেধ না থাকলে দীর্ঘদিন পরে আমাদের নানাভাবে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকতো। বিষয়াদি নিয়ে সর্বদা চিন্তিত থাকতে হতো। সে কারণে মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হতো। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হেতু প্রয়োজনীয় সাক্ষী এবং নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যের অভাব হতো, ফলে বিচারকের পক্ষে কোনো বিষয় সঠিকভাবে নিস্পত্তি করা কঠিন হয়ে পড়তো। আবার কোনো সময়সীমা বাধা না থাকলে মামলা মোকদ্দমা কোনো দিন শেষ হতো না।
তামাদি আইনে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে মামলা আপিল, দরখাস্ত, রিভিশন, রিভিউ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে না করলে প্রতিপক্ষ আপত্তি উত্থাপন করুক বা না করুক তামাদি আইনের নির্ধারিত নিয়মে আদালত সেটা Dismiss করে দেবেন। কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে এই আইনের প্রয়োগ যত রূঢ়ই মনে হোক না কেন আদালতের এ আইনের বিধান মেনে চলতে হবে। এই আইনের বিধান অনুযায়ী অনুমোদনযোগ্য না হলে কোনো প্রার্থীকে আদালত ন্যায়বিচারের খাতিরেও সময়সীমার ব্যাপারে কোনো অনুকম্পা প্রদর্শন করতে পারেন না।
তামাদি আইন বিভিন্ন ধরনের মামলা দায়েরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময়সীমা নির্দিষ্ট করেছে।
যেমনঃ
★ ঋণের টাকা আদায়ের মামলা দায়েরের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে তিন বছর।
অর্থাৎ ঋণের টাকা আদায়ের জন্য আপনাকে তিন বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। তিন বছর পার হয়ে গেলে ঋণের টাকার উপর আপনার দাবি আইনতঃ গ্রাহ্য হবে না। যদিও আপনার দাবি সত্য, কিন্তু সময় অতিক্রান্তের সাথে সাথে আপনার দাবির উপর তামাদি আইন বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, ফিরোজ আপনার বন্ধু। বন্ধুর বিপদে আপনি তাকে দশ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন ১৫ জুন ১৯৯৯ খ্রিঃ। কথোপকথন হয়েছিল যে ফিরোজ আপনাকে ছয় মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করার, কিন্তু ফিরোজ ৬(ছয়) মাস পরে ধার্য তারিখে বা দিনে তা পরিশোধ করলো না। আপনি বন্ধুত্বের খাতিরে তার কাছে ধার পরিশোধের কথা বলতেও পারছেন না।এদিকে ফিরোজও ধার পরিশোধের ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এমন করে বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর আপনি চক্ষুলজ্জা ত্যাগ করে ফিরোজকে টাকাটা পরিশোধের জন্য বললেন, জবাবে ফিরোজ যা বললো তা শুনে আপনার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কথায় বলে ‘অর্থ যত অনর্থের মুল’। আপনার বেলায়ও ঠিক তাই ঘটলো। সে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বসলো যে, সে আপনার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ধার নেয়নি বরং আপনি যে দশ হাজার টাকা তাকে ধার দিয়েছিলেন সে দশ হাজার টাকা ফিরোজের কাছ থেকে নেয়া ঋণের টাকাই শোধ করেছেন বা এমনও হতে পারে আপনার বন্ধু ফিরোজ আপনার কাছ থেকে যে টাকা ধার নিয়েছিল সে ধারের কথাই সম্পূর্ণ অস্বীকার করলো। অথবা অন্য যে কোন বাহানাতেই সে আপনার ঋণের টাকা ফেরত দিতে রাজী নয়। যদিও আপনার কাছ থেকে সে যে টাকা ধার নিয়েছে তার সমস্ত প্রমাণ আপনার কাছে আছে।
ধীরে ধীরে পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করলো যে মামলা না করে ফিরোজের কাছ থেকে টাকা আদায় করার পথ বাকী রইলনা। এখন আপনি চিন্তা করছেন কখন মামলা করবেন? কিন্তু মামলার কথা চিন্তা করার অনেক আগ থেকেই আপনার মামলার সময় বয়ে গেছে।
ধার নেয়ার ছ’মাস পর যেদিন ফিরোজের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল সেদিন থেকেই আপনার ফিরোজের বিরুদ্ধে মামলা করার চলমান সময় গণনা শুরু হয়েছে। নিয়ম হলো ফিরোজ যেদিন আপনার টাকা পরিশোধ করতে অস্বীকার করলো সেই দিন থেকে তিন বছরের মধ্যে আপনাকে আদালতে হাজির হয়ে ঋণের টাকা পরিশোধের দাবি জানিয়ে ফিরোজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে। এই গেল আপনার ঋণের টাকা পরিশোধের মামলা কখন করবেন তার সময়।
★ এবার দেখা যাক খাস দখলের মামলা কখন করবেন ?
আপনার নিজস্ব এক খন্ড জমি থেকে কেউ অন্যায় ও বেআইনিভাবে আপনাকে বেদখল করে দিল। এখন আপনি এই অন্যায় বেদখলদারকে জমি থেকে সমূলে উচ্ছেদ করে আপনার খাস দখল ফিরে পাওয়ার জন্য কখন মামলা করবেন? এই মামলাটি করতে হবে জমি থেকে আপনাকে বেদখল করে দেয়ার তারিখ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
এরপর বলা যায় আপনার ২০ বছরের অর্জিত ব্যবহারসিদ্ধ অধিকারে কেউ যদি বাঁধা দান করেন তবে আপনার ব্যবহারসিদ্ধ অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য বাধা দানের দিন থেকে ২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।
এ আইনটিও একটি উদাহরণ দ্বারা বোধগম্য করার চেষ্টা করছি : ধরা যাক, হাসান রাশেদের বাড়ীর পাশ দিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে যাওয়া আসা করে। অর্থাৎ হাসান তার বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়া এবং বাড়িতে ঢোকার জন্য রাশেদের বাড়ির এই অংশটিকে চলাচলের রাস্তা হিসেবে নিজ অধিকারে প্রকাশ্যে শান্তিপূর্ণভাবে রাশেদের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার প্রতিবাদ বা বাধাহীন অবস্থায় ২০ বছর ধরে একটানা নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহারের ফলে রাশেদের বাড়ির এই অংশটির উপর হাসানের তা ব্যবহার করার অধিকার জন্মেছে। কিন্তু ২০ বছর পর হঠাৎ হাসান একদিন দেখে রাশেদ হাসানের সেই চলাচলের রাস্তাটি বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। হাসান জানে রাশেদ দীর্ঘদিন পর তার এই চলাচলের পথ রোধ করতে পারে না। হাসান তার পথাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য মামলা করতে চাইলে বাঁধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর দিন থেকে ২ বছরের মধ্যে হাসানকে রাশেদের অন্যায় বাধা দানের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। হাসান যদি ২ বছরের মধ্যে মামলা না করে আর রাশেদ একটানা ২ বছর বাধা কার্যকর রাখতে পারে তবে হাসান তার পথাধিকার হারাবে এবং সে চলাচলের রাস্তায় রাশেদের পূর্ণ অধিকার বর্তাবে।
আরো এক ধরনের অধিকার খর্বের বিরুদ্ধে তামাদি মেয়াদ গণনা চলতে থাকে। সেটা হচ্ছে-
★ জবর দখলের অধিকার : এ অধিকার খর্ব করতে মামলা করতে হবে ১২ বছর এবং ৬০ বছরের মধ্যে। বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১২ বছর এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৬০ বছর ।
যেমন : আব্দুল কাদের খালেদের এক খন্ড জমিতে খালেদের জ্ঞাতসারে নিজের মধ্যে জোর করে ভোগ দাবি করে দখল করে চলছে। এভাবে টানা ১২ বছর জোর করে ভোগ দখল অক্ষুন্ন রাখতে পারলে খালেদের জমিতে আব্দুল কাদেরের স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে আর খালেদের স্বত্ব ক্ষুন্ন হবে। খালেদ তার জমিতে নিজ স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে বেদখল হওয়ার ১২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। জমিটি যদি সরকারি জমি হয় তবে একটানা ৬০ বছর আব্দুল কাদের জবর দখল করে রাখতে পারলে সে জমিতে তার স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে আর আব্দুল কাদেরকে উচ্ছেদ করতে হলে সরকারকে ৬০ বছরের মধ্যে তাকে উচ্ছেদ এর জন্য মামলা দায়ের করতে হবে।
★ Pre-emption বা অগ্রক্রয় : Pre-emption বা অগ্রক্রয়ের (হকশূফা) ক্ষেত্রে তামাদির সময় গণনা শুরু হয় জমিটি বিক্রি হওয়ার পর রেজিস্ট্রি হওয়ার খবর শোনার পর থেকে। কোনো বিক্রিত জমির উপর Pre-emption মামলা করতে হলে জমিটি বিক্রি সম্পন্ন হলে রেজিস্ট্রি অফিসে বালাম বইয়ে রেজিস্ট্রি দলিল লিপিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে পূর্বে ১২০ দিনের মধ্যে করতে হতো, বর্তমানে তা ১ মাস (৩০) দিনের মধ্যে করতে হবে।
যেমন : আব্দুল কাদের ও খালেদ দুই জনে পাশাপাশি দুইখন্ড জমির মালিক, আব্দুল কাদের তার জমিটি ফরিদের কাছে রেজিস্ট্রি কবলা মূলে বিক্রি করে দিল। খালেদ জানতে পারলো যে৷ আব্দুল কাদের তার জমিটি অন্যের নিকট বিক্রি করে দিয়েছে। এখন যে কোনো কারণে খালেদ যদি আব্দুল কাদেরের সেই বিক্রিত জমিটি নিজে কিনতে চায় তবে পার্শ্ববর্তী জমির মালিক হিসেবে অগ্রক্রয়ের শর্তে অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারেন। তবে সে মামলা করতে হলে খালেদকে আব্দুল কাদেরের জমি বিক্রির এবং লিখিত দলিলটি রেজিস্ট্রি অফিসের বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে করতে হবে।
উল্লেখ্য যার বিরুদ্ধে এই দাবি করা হয় সে যদি সরকার হয় তবে ২০ বছরের স্থলে ৬০ বছর পড়তে হয়।
*এভাবে মামলার আদেশ, রায়, ডিক্রী ইত্যাদির বিরুদ্ধে আইন, রিভিউ, রিভিশন জারি ইত্যাদি দায়েরের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। একইভাবে Special Law যেমন : সালিশী আইন, ট্রেডমার্ক ‘ল, রেজিস্ট্রেশন আইন, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইন ইত্যাদিতে সংশ্লিষ্ট তামাদির সময়কাল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
মোটামুটিভাবে এ হচ্ছে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে তামাদি আইনে বাদী পক্ষের সময়ের সীমাবদ্ধতা। এ সময়সীমা শেষে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বাদী পক্ষের কোন ওজর আপত্তিই আইনগত গ্রাহ্য হয় না। তবে মূল মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে নয়, আপিল, দরখাস্ত, রিভিশন, রিভিউ প্রভৃতি করার ক্ষেত্রে কয়েকদিন বিলম্ব হলেও যদি বিলম্বের যথেষ্ট কারণ দেখানো যায় তবে আদালত সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও আপিল, রিভিশন, রিভিউ বা আপিল দায়েরের অনুমতির দরখাস্ত গ্রহণ করতে পারেন।
তবে তামাদি আইনের এ সকল শর্ত/ধারা কেবলমাত্র সিভিল কোর্ট বা দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রেই কেবল তামাদি আইন কড়াকড়িভাবে বিধিনিষেধ দিয়েছে। ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে তামাদি আইন মূলতঃ প্রযোজ্য নয়। তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সাজা কয়েক যুগ পার হলেও তা তামাদি হয়না। যখন গ্রেফতার হবে তখন থেকে তা কার্যকরের সময় গণনা হবে।
সুতরাং মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সময় যাতে পার হয়ে না যায় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। নচেৎ তামাদি হয়ে যাওয়াতে বিষয়গুলো আরো জটিল হয়ে পড়বে। সবথেকে বড় বিষয় যেটি সেটি হলো নাগরিকগণ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবেন।
লেখিকা – আয়েশা সিদ্দিকা লোপা
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী
বার্তা বিভাগ প্রধান