১৪ দিনেও উদঘাটন হয়নি সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর থেকে উদ্ধার হওয়া হাফিজ ইফজালের লাশের ‘রহস্য’, বরং আরও ঘণীভূত হচ্ছে দিন দিন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা থেকে রহস্যজনকভাবে দূরে রাখা হয়েছে ইফজালের পরিবারকে।
জানা গেছে, হাফিজ ইফজালের লাশ উদ্ধারের পর দায়ের করা মামলার বাদি হননি আপন কেউ। দূরসম্পর্কীয় এক আত্মীয় মামলা করেছেন, তাও অপমৃত্যুর। কিন্তু নিহত ইফজালের মুখে ও হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিলো বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিকটাত্মীয়দের অভিযোগ- বেশ কিছু ক্লু থাকা সত্বেও পুলিশ তদন্তে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
সিলেট নগরের উপশহরের বি ব্লকের ১৮ নং রোডের ৩নং বাহার মঞ্জিলের তৃতীয় তলায় বোন ও দুই ভাগনা নিয়ে থাকতেন কানাইঘাটের হাফিজ ইফজাল। ইফজালের বোনের স্বামী প্রবাসে থাকেন। গত ২৪ জুন দিনগত রাত ১টার দিকে নিজের শয়নকক্ষে ঘুমিয়ে পড়লে সকালে উঠে বোন দেখতে পান সামনের দরজা খোলা, ইফজাল ঘরে নেই। এরপর সকাল ১০টার দিকে নিচ তলার পিছনের দেয়ালের পাশে ভাইয়ের লাশ পড়ে থাকার বিষয়টি জানতে পারেন তিনি।
খবর পেয়ে শাহপরান থানার পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ইফজালের লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ২৫ জুন দিনগত রাতে ইফজালের মরদেহ কানাইঘাটের ৮নং ঝিংগাবাড়ি ইউনিয়নের কাপ্তানপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পরদিন ঝিংগাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিনকে সাথে নিয়ে ইফজালের বোন নাসিমা বেগমের ভাসুর আবুল হোসেন বাদি হয়ে সিলেট শাহপরান থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, এ ঘটনায় ইফজালের বোনের ভূমিকা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। তিনি রহস্যজনকভাবে এ বিষয়ে নিরব রয়েছেন।
একটি সূত্র জানায়, বাসায় ইফজালের সঙ্গে একই কক্ষে থাকতো তার বোনের দেবর মিনহাজ। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও ইফজালের সঙ্গে মিনহাজের বাকবিতন্ডা হয়। এরপর মিনহাজ ওই বাসা থেকে চলে যায়। পরে ইফজালের মা বুঝিয়ে মিনহাজকে আবার ঐ বাসায় পাঠিয়েছিলেন। এরপর ইফজালের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ইফজালের মৃত্যুর পর তার বোনের সঙ্গে ভাসুর আবুল হোসেন ও দেবর মিনহাজের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিলো। পরে তা মিটমাট হয়।
অপরদিকে, ঘটনার ১৪দিন অতিবাহিত হতে চললেও পুলিশের তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। পুলিশ বলছে, ময়না তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তারা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না- এটি হত্যা, আত্মহত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু।
এ ব্যাপারে শাহপরান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, এটি আত্মহত্যা, হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্য তা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তবে কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি, যার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।
এদিকে, ইফজালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সিলেট শহীদ মিনার ও এমসি কলেজের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সহপাঠী, বন্ধুসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ বিষয়ে ইফজালের বোনের রহস্যজনক নিরবতা নিয়েও ফেসবুকে লেখালেখি করছেন তার সহপাঠীরা।
প্রতিনিধি