দেশজুড়ে শোকের ছায়া নামিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন বাংলাদেশের ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ এন্ড্রু কিশোর।
দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগে সোমবার সন্ধ্যায় জন্মস্থান রাজশাহীতে মহিষবাথান এলাকায় তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
নিজের জীবনের গল্পটা অন্যভাবে লিখতে পারতেন এন্ড্রু কিশোর। যেভাবে লিখেছেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্নিক ঘটক, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চ্যাটার্জির মতো কিংবদন্তিরা।
ঢাকাই ছবির ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ না হয়ে হতে পারতেন জনপ্রিয় বলিউড সিংগার।
ভারতের একজন কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক নিজেই এন্ড্রু কিশোরের রোমান্টিক ও দরাজ কণ্ঠে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুম্বাইয়ে স্থায়ী হয়ে বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার। হিন্দিতে গান করার।
কিন্তু দেশের মায়ায় এন্ড্রু সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি। বিনয়ের সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে নিজের দেশের সংগীতেই নিমগ্ন হয়েছিলেন।
বেশ কয়েক বছর আগে একটি সাক্ষাৎকারে এন্ড্রু কিশোর নিজেই জানিয়েছিলেন সেই ঘটনা।
সেখানে এন্ড্রু বলেছিলেন, আমাকে বলিউডে নিয়মিত হতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারতের কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক আরডি বর্মণ। বলেছিলেন তিনি আমার গানে মুগ্ধ।
এন্ড্রু জানিয়েছিলেন, আমিই একমাত্র বাংলাদেশি যে, আরডি বর্মণের সুরে গান গেয়েছি। ১৯৮৫ সালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার নির্মিত ছবি ‘শত্রু’তে তিনটি গান গেয়েছিলাম। দুটি হিন্দিতে এবং বাংলা ছবির জন্য একটি বাংলায়। ‘ইসকি টুপি উসকি সার’ নামের গানটা হিন্দিতে গেয়েছিলেন কিশোর কুমার, যার বাংলা ভার্সনটা আমি গেয়েছিলাম। বিখ্যাত গীতিকার মাজরু সুলতানপুরির লেখা দুটি হিন্দি গান গাওয়ার পাশাপাশি বাংলা ‘মুখে বলো তুমি হ্যাঁ, ‘এর টুপি ওর মাথায়’ এবং ‘আজো বয়ে চলে পদ্মা মেঘনা’ গানগুলো গেয়েছিলাম। ’
এন্ড্রু আরও জানিয়েছিলেন, এসব গান করতে গিয়ে আর ডি বর্মণের সঙ্গে বেশ সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি আদর করে আমাকে ‘ঢাকাইয়া’ বলতেন। একদিন তিনি বললেন, ‘ঢাকাইয়া, তোকে বাংলাদেশ থেকে ডেকে এখানে এনে গান গাওয়ানো সম্ভব না। তুই এখানে থেকে যা। এখানেই বিয়ে কর। স্যাটেল হয়ে যা। বলিউডে ক্যারিয়ার গড়। তুই চিন্তা করিস না। আমি সহায়তা করব।’
এমন প্রস্তাবে এন্ড্রু কিশোর মুহূর্তের মধ্যেই আরডিকে জবাব দিয়েছিলেন, ‘দাদা, আমি আমার দেশে খুব ভালো আছি এবং ওই জগৎটাই আমার। এই জগৎটা আমার জন্য নয়।’
প্রসঙ্গত, আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
১৯৭৭ সালে এন্ড্রু কিশোর আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু করেন।
তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙ্গাল’ প্রভৃতি।
প্রতিনিধি