কবি বলেছেন——
“কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক
কে বলে তা বহুদূর
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক
মানুষেতে সুরাসুর”
অপার্থিব জীবনে স্বর্গ ও নরক দুটি বিপরীতধর্মী বিষয়। কেবল জীবন সাঙ্গ হলেই এসব দেখবার বা বুঝবার সৌভাগ্য হবে। কিন্তু পার্থিব জীবনে স্বর্গের সুখ বা নরকের যন্ত্রণা এসব মানুষের কর্মেরই ফলাফল।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষই কোনো না কোনো সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমি সুখী নই কেন, অথবা আমার কপালে সুখ লেখা নেই কেন?’। কিন্তু সত্যিকারের বিষয়টি কি জানেন? কর্মফলের মাধ্যমেই মানুষ সুখের সুধা পান করে। বিবেকবােধ বিসর্জন দিয়ে অন্যায় ও অপকর্মে লিপ্ত হবার পর যখন মানুষ তার ভুল বুঝতে পারে, তখনই সে নরক যন্ত্রণা অনুভব করে। আবার যখন পরস্পর ভালােবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন সে অনুভব করে স্বর্গীয় আনন্দ।
In fact, সুখ হলো আপনার নিজের মনের ব্যাপার। আপনার মনকে যদি আপনি বুঝ দিতে পারেন যে আপনি সুখী আছেন তাহলে একটি ভাঙা ঘরে থেকে আধপেটা খেয়েও সুখে থাকতে পারবেন। আসলে আপনারই বাজে চিন্তা, বাজে অভ্যাসের কারণে আপনার মনের শান্তি নষ্ট হচ্ছে, যার ফলে আপনি একটি বড় বাড়ি কিংবা ভালো খেয়ে পরেও সুখে নেই একেবারেই। আপনারই কিছু খারাপ অভ্যাস কেড়ে নিচ্ছে আপনার মনের শান্তি। তবে বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে যারা নিজেদের অসুখী ভাবছেন সে বিষয়টি একটু ভিন্ন।
Generally, মানুষের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার অগণিত নেয়ামতসমূহের মাঝে অন্যতম একটি নেয়ামতের নাম হলো সুখ-শান্তি। সুখ আর শান্তি চায় না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্করই নয়, বরং অসম্ভব। পৃথিবীর বুকে প্রত্যেক মানুষই সুখ-শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের মতবাদ, জাতি, বর্ণ, উৎপত্তি, লক্ষ্য- উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন সবাই একটি উদ্দেশ্যে একমত, তা হলো সুখ ও প্রশান্তি তালাশ করা। যদি কোন লোককে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ তুমি এ কাজটি কেন করো? ইহা কি কারণে করবে? সে বলবেঃ সুখ-শান্তির জন্য। তা শব্দগতভাবে বলুক বা অর্থগতভাবে বলুক। অথবা প্রকৃত বা রূপক যে কোন অর্থেই বলুক।
However, প্রথমে জানা দরকার সুখ-শান্তি কি? কিভাবে বা ইহা পাওয়া যায়?
সাধারণত ‘সুখ’ আর ‘শান্তি’ শব্দ দুটি শুনতে একই রকম এবং ব্যবহারগত দিক দিয়ে অনুরূপ মনে হলেও উপভোগে ও অনুভবে এবং অর্থগতভাবে বিশদ ভিন্নতা রয়েছে। সুখ বলতে শাব্দিকভাবে বুঝায় উপভোগ, খুশি, আনন্দ, আরাম-আয়েশ, কামনা-বাসনা পূর্ণ করা ইত্যাদি। ইংরেজিতে ইহাকে বলা হয় Happiness, Cheer, Joy etc. আর আরবীতে “সায়্যিদাহ”। সুখ হলো আনন্দ, প্রশান্তি, ঔদার্য ও প্রফুল্লতার ধারাবাহিক অনুভূতি। এ সুখানুভূতি তিনটি জিনিসের স্থায়ী অনুভূতির ফলে আসে, তা হলোঃ আত্মার উৎকৃষ্টতা, জীবনের উৎকৃষ্টতা ও শেষ পরিণতির উৎকৃষ্টতা।।
সুখ আর শান্তির জন্যই এই পৃথিবীর মানুষগুলোর ছুটে চলা পৃথিবী থেকে চাঁদের দেশে এবং পাতাল থেকে মহাকাশে। পৃথিবীর মানুষের সকল চেষ্টা, সাধনা, আন্দোলন, যুদ্ধ, ত্যাগ এবং সর্বোপরি সকল কর্মই সুখ আর শান্তির আশায়। সুখ আর শান্তি অর্জন নিয়ে আজ সারা পৃথিবী ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থ-সম্পদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সাধ্যের সকল সামর্থ্য নিয়ে ছুটে চলছে অবিরাম।
কিন্তু সুখ আর শান্তি মানবজাতি আসলে কি যথার্থভাবে পেয়েছে বা পাচ্ছে? বরং বর্তমান আধুনিক বিশ্বে মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায়, অর্থ-সম্পদে যত বেশি উন্নত হচ্ছে মানসিক শান্তির গন্ডি থেকে ততই দূরে ছিটকে পড়ছে। ক্রমবর্ধমান বিজ্ঞান আজ মানুষের শারীরিক আরাম-আয়েশ, আমোদ-প্রমোদ এবং সুখে থাকার অগণিত উপকরণ আবিষ্কার করছে। কিন্তু যাদের অট্টালিকা, বাড়ি-গাড়ি, ধন-সম্পদ এবং শারীরিক সুখে থাকার অগণিত উপকরণ আছে, তাদেরকে কি বর্তমান আধুনিক পৃথিবী মানসিকভাবে শান্তি দিতে পেরেছে? আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি শান্তির পথে হেঁটে চলছে? শান্তি আসলে আমরা কিভাবে পেতে পারি? এই প্রশ্নের বিশালতা এবং গভীরতা অনেক বিস্তৃত।
সুখ হলো বাহ্যিক, যা দৃশ্যমান। মানুষ তার চর্ম শরীর বা দেহ দিয়ে যে আরাম-আয়েশ উপভোগ করে আনন্দ পায় তাই সুখ। যেমনঃ মানুষ তার দেহ বা শরীরকে সুখ দেওয়ার জন্য অনেক টাকা দিয়ে বাড়ি করে। দামী আসবাবপত্র দিয়ে ঘর সাজায়। আরামদায়ক খাট-পালঙ্ক, নাতিশীতোষ্ণ শয়নকক্ষ, পরিচর্যা-পরিপাট্য এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য কর্মচারী রাখে-এসবকেই আমরা সুখ বলে থাকি। বলা যায়, প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা পূরণের নামই ‘সুখ’। বাহ্যিক দৃষ্টিতে যার যত বেশি টাকা, ধন-সম্পদ আর প্রাচুর্য আছে আমরা তাকে তত বেশি সুখী মনে করি।
Personally, আমি মনে করি। সুখ হলো আপেক্ষিক বিষয়। অর্থাৎ যে যেভাবে চিন্তা করে অথবা যার যেমন চাহিদা থাকে। সুখ অনেক সময় মানুষের শারীরিক চাহিদার উপর নির্ভর করে। যেমন যে মানুষটার থাকার কোনো জায়গা বা ঘর নেই রাস্তায়-ফুটপাথে রাত্রিযাপন করে, সেই মানুষটা যদি একটি কুঁড়েঘর পায় তখন সেটাই তার জন্য অনেক সুখ। আবার যার একটা কুঁড়েঘর আছে, সে যদি ভালো টিনের ঘর পায় থাকার জন্য, তখন তার জন্য সেটাই বড় সুখ। একইভাবে সুখী হওয়ার জন্য টিনের ঘরে থাকা মানুষটা একটা পাকা ঘর চায়, আবার পাকা ঘর যার আছে সে চায় রাজপ্রাসাদ।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে সুখ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল এবং অস্থায়ী। যেমন একটা মানুষ যদি মাসে দশ হাজার টাকা আয় করে, সে আশা করে আমার যদি বিশ হাজার টাকা আয় আসতো তাহলে আমি আরো ভালোভাবে চলতে পেরে সুখী হতে পারতাম। কিন্তু যখন কিছুদিন পর তার আয় বেড়ে সেই প্রত্যাশিত বিশ হাজার টাকা হবে, তখন সে হয়তো কিছুদিন নিজেকে সুখী মনে করে তা উপভোগ করবে। কিন্তু আবার কিছু দিন পরে তার মনে হবে তার বিশ হাজার টাকায় সে পরিপূর্ণ সুখী হতে পারছে না, ত্রিশ হাজার হলে মনে হয় সে পরিপূর্ণ সুখী হবে। এভাবে সময় এবং চাহিদার সাথে তার সুখও পরিবর্তিত হতে থাকবে।
তেমনিভাবে তরুণদের তারুণ্যের প্রথম দিকে চাহিদা থাকে। যার একটা সাইকেল নেই, সে একটা সাইকেল নিতে পারলে অনেক খুশি হয়। কিন্তু সাইকেল পেয়ে যাওয়ার পর আবার কিছুদিন পর তার মনে হবে সাইকেল তার ভালো লাগে না। একটা মটর সাইকেল হলে তার নিজেকে ভাগ্যবান বা সুখী মনে হবে। তারপর আবার কিছুদিন পর সে পিছনের সুখ ভুলে গিয়ে তার মনের ভিতর নতুন চিন্তা জাগাবে, একটা দামী মোবাইল বা একটা আইফোন না হলে সে সুখী হতে পারবে না। এ রকম অস্থায়ীভাবে তাদের বয়স এবং Immature আবেগের কারণে সুখের এবং খুশির চাহিদা পরিবর্তিত হতেই থাকবে। আসলে সুখের আকর্ষণ মানুষের মনে ততক্ষণ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার প্রত্যাশিত সুখের উপকরণটা অর্জন করতে না পারে। উপকরণটা পেয়ে যাওয়ার পর তখন তার মন পূর্বের আকর্ষণ থেকে পরিবর্তিত হয়ে আরো উন্নত সুখের উপকরণে আকৃষ্ট হতে থাকে।
The matter of regret, অধিকাংশ মানুষই ভবিষ্যৎ গড়তে গিয়ে বর্তমানের সুখ-শান্তির কথা ভুলে যায়। মানুষ প্রথমে জীবনের সব কিছুই শুরু করে সুখে থাকার উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো মানুষ জীবনে যেগুলো প্রথমে শুরু করে সুখী হওয়ার জন্য, ঠিক সেগুলো পেয়ে যাওয়ার পরও আবার অপেক্ষা করতে থাকে সুখী হওয়ার জন্য। অধিকাংশ মানুষই সুখ আর শান্তির অপেক্ষা করতে করতে জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত চলে আসে। কিশোর জীবনে অপেক্ষায় থাকে পড়ালেখা করে ডিগ্রি নিয়ে কর্মজীবনে অনেক টাকা-পয়সা আয়-উপার্জন করে সুখ-শান্তি উপভোগ করবে। আর কর্মজীবন এলে অপেক্ষা করে বেশি করে টাকা-পয়সা জমা করে বিয়ে করে দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি উপভোগ করবে। কিন্তু যখনই টাকা উপার্জন শুরু করে তখন সুখে থাকার কথা ভুলে যায়। এক লক্ষ টাকা জমা করতে পারলে তখন চিন্তা শুরু করে দুই লক্ষ টাকা জমা করার। আবার দুই লক্ষ হলে তখন তিন লক্ষ জমা করার চিন্তা। এভাবে যখন কোটি হয় তখন দুই কোটি, তিন কোটি-এভাবে টাকার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে একটা সময় তারা তাদের অস্তিত্বই ভুলে যায়।
সুতরাং সুখ আসবে আসবে বলে এর অপেক্ষা করে থাকা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। জিম রণ এর ভাষায়—-
“সুখ ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেয়ার বিষয় নয়। বরং এটি বর্তমানের জন্য।”
সুখ আর শান্তির জন্য অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলো জীবনের তিনটি অধ্যায়ে ৩টি বাধার সম্মুখীন হয়ঃ
১. জীবনের প্রথম অধ্যায় ছাত্রজীবন বা কৈশোর । ছাত্রজীবনে সময় এবং শক্তি থাকে, কিন্তু টাকা থাকে না।
২. জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় কর্মজীবন বা যৌবন কাল। কর্মজীবনে মানুষের শক্তি এবং টাকা থাকে কিন্তু সময় থাকে না।
৩. জীবনের শেষ অধ্যায় অবসর জীবন বা বৃদ্ধকাল। অবসর জীবনে মানুষের টাকা এবং সময় থাকে, কিন্তু শক্তি থাকে না।
তাই শান্তির দূত মহানবী (সঃ) উক্ত বাধাগুলোর সমাধান দিয়ে বলেন, “পাঁচটি বিষয় আসার পূর্বেই পাঁচটি বিষয় থেকে সুবিধা গ্রহণ করো। বৃদ্ধ হওয়ার আগেই তারুণ্য-যৌবনাবস্থা থেকে সুবিধা গ্রহণ করো, অসুস্থ হওয়ার পূর্বেই সুস্বাস্থ্য থেকে সুবিধা গ্রহণ করো, দরিদ্রতা এসে যাবার আগেই সম্পদের সুব্যবহার করো, ব্যস্ততা এসে যাবার আগেই অবসর সময়কে কাজে লাগাও এবং মৃত্যু আসার আগেই জীবন নামক নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার করো।” (আল-হাদীস, মুস্তাদরাক-আল-হাকীম)
এতদিন আমরা ভেবেছি, যে দেশ যত ধনী, যার যত বেশি বিত্ত, সে তত সুখী। দেখা যাচ্ছে, কথাটা আদৌ সত্য নয়। জনমত জরিপ সংস্থা Galp এর উপাত্তের ভিত্তিতে সংস্থাটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে বিত্তের সঙ্গে সুখের সম্পর্ক খুব সামান্যই। এই প্রতিবেদন অনুসারে, সুখ নির্ভর করে ছয়টি জিনিসের ওপর- উপার্জন, সুস্থ আয়ুষ্কাল, সামাজিক নির্ভরশীলতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, অপরের উপর আস্থা ও উদারতা। উপার্জনকে যদি বিত্ত বলে ধরে নিই, তাহলে সুখের সে মোটে ৬ ভাগের ১ ভাগ। এই ছয়টি উপাদানের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে পৃথিবীর ১৫৬টি দেশের কে কতটা সুখী, তার এক তালিকা দেওয়া হয়েছে। এক নম্বরে, অর্থাৎ সবচেয়ে সুখী যে দেশ, সেটি হলো ফিনল্যান্ড। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে পৃথিবীর সেরা ধনী দেশ কাতার, সে রয়েছে ৯২ নম্বরে।
সুখ ব্যাপারটা ব্যক্তিগত হলেও তার অর্জন নির্ভর করে আমাদের পারিপার্শ্বিকতার উপর। আর সে জন্য আমাদের প্রত্যেককে কিছুটা হলেও উদ্যোগী হতে হবে। Dan Buettner নামের এক মার্কিন সমাজতাত্ত্বিক “Blue Zones of Happiness ” নামের একটি বই লিখেছেন। অসংখ্য মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হয়ে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, আমরা নিজেরা কেমন সামাজিক জীবন যাপন করি, তার ওপর নির্ভর করে আমরা কে কতটা সুখী। Dan এর পরামর্শঃ ঘরে বসে না থেকে বাইরে বের হন, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ুন, অপরের বিপদে হাত লাগান, পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হোন, শুধু জীবনযাপন না করে জীবন ধারণের কোনো Purpose-খুঁজে নিন। আর হ্যাঁ, ব্যক্তিগত ব্যবহারে যেমন, আহারেও পরিমিত হোন।
তবে কেবল সুখই জীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে না। কারণ বয়স, সময়, পরিবেশ এবং চাহিদার ভিন্নতার কারণে সুখের উপকরণের ভিন্নতা রয়েছে। শুধু শারীরিক সুখ দিয়ে মানুষের জীবনের পূর্ণতা কখনোই আসবে না। কারণ মানুষের দ্বারা সুখ উপভোগের সীমা-পরিসীমা খুঁজে পাওয়া সম্ভবপর নয়। যেমন কারো সুখের উপকরণ যদি আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস এবং আনন্দ উৎসব হয়ে থাকে, তাহলে সে তার সীমা-পরিসীমা খুঁজে পাবে না। কারণ বিজ্ঞানের এই যুগে পৃথিবীতে আরাম-আয়েশের উপকরণ এবং ধরনের কোন শেষ নেই। হরেক রকমের বিলাসিতা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন মানে এবং স্থানে রয়েছে, যা তার কল্পনা বিলাসেরও বাইরে। যা খুঁজে উপভোগ করতে করতে শরীর রোগাক্রান্ত হয়ে একদিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠবে।
কারো সুখের উপকরণ যদি সুন্দরী নারী হয়ে থাকে, তাহলেও সে এই সুন্দরের শেষ খুঁজে পাবে না। সারা পৃথিবীতে সুন্দরী নারীর অভাব নেই। বিভিন্ন দেশে আর জাতিতে বিভিন্ন প্রকৃতির, আকৃতির এবং রংধনুর মতো অনেক রঙের সুন্দরী নারী আছে, যারা তার স্বপ্ন এবং চাহিদারও বাইরে। যাদের খুঁজতে খুঁজতে একদিন সে নিস্তেজ এবং নিথর দেহে মৃত্যুর প্রহর গুণবে।
আবার কারো সুখের উপকরণ যদি হয় বেশি বেশি অর্থ-সম্পদ উপার্জন এবং জমা করা, তাহলেও সে সম্পদ অর্জনের কূলকিনারা পাবে না। কারণ পৃথিবীতে অর্থ সম্পদের কোনো শেষ নেই, তার পাহাড় পরিমাণ সম্পদ অর্জিত হলেও জীবনের পূর্ণতা আসবে না। আর একদিন এই সম্পদ ধরে রাখার দুশ্চিন্তায় এবং আরো অর্জনের লোভ-লালসায় হঠাৎ মৃত্যুর মাধ্যমে অগাধ অর্থ-সম্পদ অন্যের ভোগ-বিলাসের জন্য রেখে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। তাই রাসুল (সঃ) বলেন, ‘যদি আদম সন্তানের স্বর্ণপূর্ণ একটি উপত্যকাও থাকে তবে সে চাইবে যে, তার দুটি উপত্যকা হোক। আর মাটি ছাড়া কোন কিছুই তার মুখ বন্ধ করতে পারবে না।’ (হাদীস : বোখারী, মুসলিম)
বস্তুত সুখ খুঁজতে গিয়েই মানুষ আজ হিংস্র হচ্ছে ঠিক পশুর মতো। মানুষকে মরতে হয়, ধর্ষিত হতে হয় প্রতিদিন, তাও কেবলই সুখ পাওয়ার জন্য। এ সুখ বিকৃত মানুষের কুৎসিত মনের প্রতিচ্ছবি। সর্বত্রই এসব কুৎসিত মনের মানুষের চলাফেরা। তারা সুখ খুঁজতে এত ব্যস্ত যে এসব করতে গিয়ে সুখের কাছেই আমরা ঋণী হয়ে যাচ্ছি। বিচিত্র সব সুখের খোঁজে বিচিত্র মানুষের দল ছুটছে। দিন শেষে কে সুখ পেল আর কে বঞ্চিত হলো তার হিসাব রাখার জন্য কেউ নেই। যে হিসাব রাখবে, সেও হয়তো অসুখী। হয়তো দেখা যায়, সারা দিন রাস্তার পাশে পাথর ভাঙা সেই পেশিবহুল শ্রমিকটাই সুখী। তার কাটানো রাতটাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের কাটানো রাত হতে পারে।
লেখিকা – আয়েশা সিদ্দিকা লোপা
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী
বার্তা বিভাগ প্রধান