Home » আরও ৪ হাজার নার্স নিয়োগ করা হবে, সংসদে প্রধানমন্ত্রী

আরও ৪ হাজার নার্স নিয়োগ করা হবে, সংসদে প্রধানমন্ত্রী

করোনা মোকাবিলায় আরও চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আরও চার হাজার নার্স নিয়োগ দিচ্ছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি। শিগগিরই এই নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে।’

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই তথ্য জানান।আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনায় সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে অল্প সময়ের মধ্যে দুই হাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও দুই হাজার চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে তিন হাজার টেকনিশিয়ানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাঁদের নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যন্ত্রপাতি, টেস্ট কিট, সরঞ্জামাদি কেনাসহ চিকিৎসাসুবিধা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা দ্রুততম সময়ে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। আরও একটি প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে করোনা মোকাবিলায় আমাদের সামর্থ্য আরও বাড়বে বলে বিশ্বাস করি।’

দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার কম বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৭ জুনের বিশ্ব ও বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সময়ে বিশ্বে করোনার সংক্রমণের সংখ্যা ১ কোটি ২ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫ লাখ ১ হাজার ৬৪৪ জন। অর্থাৎ, মৃত্যুর হার ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সে তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমিত হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন। ১ হাজার ৭৩৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ৫৫ হাজার ৭২৭ জন সুস্থ হয়ে ফিরেছেন।

কোনো মৃত্যুই কাম্য নয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি দেখি, আক্রান্তের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। যেখানে ভারতে ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাংশ। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাংলাদেশে আমরা করোনাভাইরাসজনিত মৃত্যুর হার কম রাখতে সক্ষম হয়েছি। যদিও আমরা চাই না কেউ মৃত্যুবরণ করুক।’

করোনা পরিস্থিতির এই বাজেটে কর্মস্থানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই জুলাই থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে। এর লক্ষ্য হবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গতিশীল করা।

বিগত ১২ বছরে ১ দশমিক ৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। আশা ছিল, এবার আরও কমিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) এ দারিদ্র্য বিমোচনের ধারায় কিছুটা ছন্দপতন হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মহামারির কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় আমাদের দারিদ্র্যসীমার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কেউ কেউ করছেন। কিন্তু অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আমরা সুবিশাল যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছি, তার মাধ্যমে এই আশঙ্কা অনেকটাই রোধ করতে সক্ষম হব বলে বিশ্বাস করি।’

করোনা মোকাবিলায় অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গতানুগতিক বাজেট থেকে সরে এসে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে এবার সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করে জনজীবনকে সুরক্ষার লক্ষে ন্যাশনাল প্রিপার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

করোনাকালে নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোডিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় ৫ হাজার ৫ কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দের দিক থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের অবস্থান পঞ্চম। গত অর্থবছরে ছিল অষ্টম।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কীভাবে মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আমরা বারবার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি। নিজেকে সুরক্ষিত রাখা ও সেই সঙ্গে অপরকে সুরক্ষা দেওয়া প্রত্যেকের দায়িত্ব। আশা করি, সবাই এটা পালন করবেন।’

বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট একটু বেশি আশাবাদী বলে অনেকেই বলেছেন। আমাদের তো একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। আজ সবকিছু স্থবির। কিন্তু হঠাৎ এই স্থবিরতার উত্তরণ ঘটলে আমরা কী করব? হয়তো আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব না। কিন্তু প্রত্যাশা তো থাকা উচিত। প্রস্তুতিও রাখা দরকার।’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতির মূল উৎপাটন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ও সরকারের অর্জন সমুন্নত রাখতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

বাজেট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কখনোই হতাশায় ভুগি না। সব সময় একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যাই। এ জন্যই বাজেট সেভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পান সফলভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো বন্যা আসবে। সেটাও মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

সূত্র: প্রথম আলো

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *