করোনা আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে যাত্রা শুরু করলো সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়াস্থ ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন সিলেট-১ আসনের সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
আজ শনিবার (২৭ জুন) দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধনকালে খাদিমপাড়া হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া, জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিভাগীয় স্বাস্থ্য সহকারী পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান, সিলেট জেলা সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল ও সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গতকাল পর্যন্ত সিলেটে তিনটি হাসপাতালে করোনাক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছিলো। তন্মধ্যে একটিমাত্র, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল পুরোপুরিভাবে করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ ছিলো। এই সরকারি হাসপাতাল ছাড়া বাকি দুটি বেসরকারি, যেগুলোতে করোনা চিকিৎসায় গুনতে হচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা।
কিন্তু সবার পক্ষে, বিশেষ করে দরিদ্র আর মধ্যবিত্তদের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন সম্ভব নয়। ফলে এ দুই শ্রেণির মানুষ আক্রান্ত হলে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেই ছুটে যান। যে কারণে এ হাসপাতালে এখন রোগীদের প্রচণ্ড চাপ।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিলেটে আরেকটি হাসপাতালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় শুরু হলো করোনাক্রান্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসাসেবা।
আজ শনিবার থেকে সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়াস্থ ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এই চিকিৎসা প্রদান শুরু হচ্ছে। এ হাসপাতালে সাধারণ মানুষ কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই চিকিৎসাসেবা পাবেন।
জানা গেছে, সিলেটের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গেল ৯ জুন বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিলেটের করোনা চিকিৎসা সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়াসহ শীর্ষ কর্মকর্তা ও কিডনি ফাউন্ডেশনের সাথে জড়িতরা যুক্ত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কিডনি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট খাদিমপাড়া হাসপাতাল ও দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে করোনা চিকিৎসার জন্য কাজে লাগানো হবে। এ দুই হাসপাতাল মিলিয়ে শয্যাসংখ্যা হয় ৬২টি।
সিদ্ধান্তের পর হাসপাতল দুটিকে প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি আনা, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করাসহ আনুষাঙ্গিক কাজ করা হয়েছে। ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়েছে হাসপাতাল দুটিকে। তবে এ দুই হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা থাকছে না।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘খাদিমপাড়া হাসপাতাল আর দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলে করোনা চিকিৎসায় সিলেটে ৬২ শয্যা বাড়ছে। কিডনি ফাউন্ডেশন, প্রবাসীরা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল দুটি চলবে। এর মধ্যে শনিবার চালু হচ্ছে খাদিমপাড়াস্থ হাসপাতালটি।
তিনি জানান, খাদিমপাড়াস্থ হাসপাতালে বর্তমানে সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে অক্সিজেন সরবরার ব্যবস্থার কাজ করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. আনিস বলেন, ‘যেসব রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হবে, তাদেরকে দ্রুত শামসুদ্দিনে নিয়ে আসা হবে। এক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স থাকবে সবসময় প্রস্তুত।’
এদিকে, খাদিমপাড়াস্থ হাসপাতালে তিনটি শিফটে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্যরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল। তবে কতো জন চিকিৎসক, নার্স সেখানে দায়িত্বে থাকবেন প্রতি শিফটে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনের মহাসচিব কর্নেল (অব.) আবদুস সালাম বীরপ্রতীক জানিয়েছেন, খাদিমপাড়া হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও সন্দিগ্ধদের সেবা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করছেন। এ হাসপাতালের আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য ইতোমধ্যে বড় অঙ্কের একটি তহবিলও গঠন করেছে কিডনি ফাউন্ডেশন।
প্রতিনিধি