Home » করভেট ক্লাস যুদ্ধজাহাজ সংগ্রামের উদ্বোধন করেন : প্রধানমন্ত্রী

করভেট ক্লাস যুদ্ধজাহাজ সংগ্রামের উদ্বোধন করেন : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের নদীসীমা সুরক্ষায় নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নৌবহরে যুক্ত হলো নতুন করভেট ক্লাস যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ‘সংগ্রাম’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের এর মাধ্যমে চট্টগ্রামস্থ নৌ জেটিতে বানৌজা সংগ্রাম এর কমিশনিং অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন।

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাহাজটি কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও টেলি কনফারেন্স (ভিটিসি) এর মাধ্যমে জাহাজটি কমিশনিং করেন। কমিশনিং শেষে জাহাজটি আগামী ৯ জুলাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে লেবাননের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। লেবাননের ভূ-মধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সের সদস্য হিসেবে উপমহাদেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বিশ্বশান্তির দূত হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। নতুন এ যুদ্ধজাহাজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সমুদ্রসীমা পেরিয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ করেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে চট্টগ্রাম নৌ জেটিতে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে জাহাজের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এফ এম আরিফুর রহমান ভূঁইয়ার হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধজাহাজটি নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে একটা অস্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে এই অনুষ্ঠানটা হলো, তারপরও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত।

নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহারে যুদ্ধজাহাজ তৈরির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামীতে আমরাও যেন যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে পারি সে চিন্তা আমাদের করতে হবে। এছাড়া আমাদের নিজেদের প্রয়োজন ছাড়াও এ ধরনের জাহাজ যেন আমরা বিদেশে রফতানি করতে পারি সেভাবে আমাদের কাজ করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, নৌবাহিনীকে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। আমরা আরও সুযোগ-সুবিধা দেব। বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রযুক্তি জানতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল, আমাদের প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল, কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তি (করোনাভাইরাস) এসে সব উন্নয়ন অগ্রগতি স্তব্ধ করে দিয়েছে। উন্নত ও খুব শক্তিশালী এবং অতি দরিদ্র সকলের একই অবস্থা সৃষ্টি করেছে এই অদৃশ্য শক্তি। এর বিরুদ্ধে কেউ লড়তে পারছে না। তিনি নৌবাহিনীর সব সদস্যকে সুরক্ষিত থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় । বঙ্গবন্ধুর এই নীতিতে আমরা বিশ্বাসী।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা দেশের উন্নয়ন করতে চাই। তিনি আশা করেন এ ক্ষেত্রে নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

চীনে তৈরি বানৌজা ‘সংগ্রাম’র দৈর্ঘ্য ৯০ মিটার এবং প্রস্থ ১১ মিটার। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। শত্রু বিমান, জাহাজ এবং স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম জাহাজটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে এবং ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইল, অত্যাধুনিক থ্রিডি রাডার, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, রাডার জ্যামিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত।

জাহাজটিতে হেলিকপ্টার অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য ডেক ল্যান্ডিংসহ অন্যান্য সুবিধাদি রয়েছে।

গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ সময়ব্যাপী মোতায়েনযোগ্য এ জাহাজর মাধ্যমে বিশাল সমুদ্র এলাকায় অনুপ্রবেশ ঠেকানো, চোরাচালান ও জলদস্যুতা রোধ, সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা, সমুদ্র অর্থনীতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বরাদ্দকৃত ব্লকসমূহের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *