সিলেটে বাড়ছে করোনার ভয়াবহতা। সাধারণ মানুষের সাথে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সাংবাদিক। তবে এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশ। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত পুলিশের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশের প্রায় একশত সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা থেকে আত্মরক্ষার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের নিরাপদে দায়িত্ব পালনে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।
লকডাউনের শুরু থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার রুটিন ওয়ার্কের বাইরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও মানবিক সহায়তার কাজ করে যাচ্ছে সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশ। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। দিনদিন বাড়তে থাকে আক্রান্তের এই সংখ্যা।
ইতোমধ্যে সিলেট জেলা পুলিশের ৬৪ জন ও মহানগর পুলিশের ২২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জেলা পুলিশের আওতাধীন বিশ্বনাথ থানার ৮৩ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন। তবে ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের ১৭ জন ও মহানগরের ২ জন সুস্থ হয়ে ওঠেছেন। সুস্থ হওয়ার পথে আছেন অনেকে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। বাংলাদেশে এই প্রথম কোন জেলার সবকটি থানায় বসানো হয়েছে ডিসইনফেকশন টানেল। এতে থানার ভেতর দায়িত্বপালনরত পুলিশ সদস্য ও সেবাগ্রহীতাদের অনেকটা সুরক্ষিত রাখবে বলে মনে করছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফুর রহমান।
পুলিশের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতিটি থানা পুলিশকে তিন-চারটি ইউনিটে ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে। এতে এক ইউনিটের কোন সদস্য আক্রান্ত হলে অন্য ইউনিটের সদস্যদের সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকবে। এছাড়া অস্থায়ী ব্যারাকগুলোতেও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে। ডাইনিংয়ে বসে খাবার গ্রহণের পরিবর্তে সকল পুলিশ সদস্যকে টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। খাবারের সাথে যুক্ত করা হয়েছে ভিটামিন সি যুক্ত ফল। সকল পুলিশ সদস্যকে গরম পানি চা ও পানি পান, গরম ভাপ নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কিছু ঔষধও দেওয়া হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।
করোনা পরিস্থিতি পুলিশের দায়িত্ব পালনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আগের চেয়ে টহল কমানো হয়েছে। ইমার্জেন্সি টহল চলছে। চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ সদস্য কমানো হয়েছে। প্রতিটি থানার পুলিশদের ৩/৪টি কোম্পানিতে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ লাইনের ফোর্সদের মধ্যে পুরুষদের ৭টি ও মহিলা সদস্যদের জন্য ৩টি কোম্পানি করা হয়েছে।
এদিকে, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) পক্ষ থেকেও পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মুসা জানান, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি, ব্যারাক ও অফিসে নিয়মিত জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। পুলিশ সদস্যদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিনিধি