বর্তমান শিক্ষা বান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ শিক্ষার মান নিয়ে সর্বত্রই প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্ত প্রাথমিক শিক্ষা পরবর্তী সকল শিক্ষার মূল ভিত্তি। তাই প্রাথমিক শিক্ষা, তথা সকল শিক্ষার এই মূল ভিত্তি দুর্বল থেকে গেলে শিক্ষার্থীর পরবর্তী শিক্ষা জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরা স্বাভাবিক। প্রাথমিক শিক্ষার মূল ভিত্তিকে মজবুত করতে প্রথমেই শিক্ষক সংকট দূর করতে হবে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে আমাদের দেশে তার বদলে শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় এ সংকট আরো প্রকোট আকার ধারণ করে শিশুরা তাদের ন্যায্য মৌলিক শিক্ষা তথা জ্ঞান লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যার ফলে,শিক্ষার্থীরা মৌলিক অধিকার তথা জ্ঞান অর্জন থেকে পিছিয়ে আছে। আবার শতাব্দীর ভয়াবহ আতংক “করোনা”k ভাইরাসের কারনে বিগত কয়েক মাস থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো বন্ধ থাকার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরকে বিপর্যস্ত করেছে। আর কবে যে “করোনা’ ভাইরাস থেকে আমরা, আমাদের অর্থব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা পরিত্রাণ পাবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভবও না। তাই শিক্ষক সংকট দূরীকরণ ও করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট বিপর্যস্ত প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষতিকে পুষিয়ে আনতে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ -২০১৮ এর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ কারী ৩৭ হাজার মেধাবীকে প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগের বিকল্প নেই।
নিম্নে প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের যৌক্তিক কারণ সমূহ তুলে ধরা হলোঃ-
১) প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,” মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না।” এবং বিগত ৯ ই মার্চ ২০২০ ইংরেজি তারিখে যশোর সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষা সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেছেন, মুজিববর্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শূন্যপদ থাকবে না। মুজিববর্ষের সময় কাল ২০২০-২১ সাল কিন্তু ইতিমধ্যে মুজিব বর্ষের মাঝামাঝি এবং করোনার সংকটাপন্ন অবস্থায় প্রায় পুরো ২০২০ সালই এই অবস্থায় চলে যাবে। তাহলে, মুজিব বর্ষের কেবল একটি বছর হাতে থাকবে। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ইংরেজি তারিখে মহান জাতীয় সংসদের তথ্যমতে শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার এবং বিভিন্ন পত্রিকা ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত তথ্যমতে ৪০ হাজারের অধিক শূন্যপদ রয়েছে। চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়াও সময় সাপেক্ষ তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতেও প্রায় ২-৩ বছর লেগে যায় আর মুজিব বর্ষের কেবল একটি মাত্র বছর হাতে থাকবে। তাহলে, এক বছরে কখনো কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাহলে, দেখা যাচ্ছে সহকারী শিক্ষক শিক্ষকের প্রায় ৪০ হাজার পদ, প্রাক-প্রাথমিকের প্রায় ২৭ হাজার পদ সহ লক্ষাধিক সহকারী শিক্ষকের পদ মুজিববর্ষে শূন্য থেকে যাচ্ছে। তাই আমরা ৩৭ হাজার প্রাথমিকে প্যানেল প্রত্যাশি মানবতার মায়ের কাছে দাবি জানাচ্ছি মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা যথাযথ বাস্তবায়ন একমাত্র ৩৭ হাজর মেধাবীদের প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদানেই সম্ভব।
২) প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঘরে ঘরে একজন করে চাকুরি দিবে সরকার। তার শতভাগ বাস্তবায়ন একমাত্র আমরা ৩৭ হাজার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ -২০১৮ এর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ কারী সবাইকে প্যানেলে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমেই সম্ভব। কারণ উক্ত ৩৭ হাজার প্যানেল প্রত্যাশির মধ্যে ৬১ জেলার শিক্ষিত ও যোগ্য বেকার রয়েছে আবার প্রতিটি জেলার মধ্যে প্রতি উপজেলার চাকরি প্রার্থী রয়েছে এভাবে প্রতিটি উপজেলার মধ্যে প্রতি ইউনিয়নের চাকুরী প্রার্থী রয়েছে অর্থাৎ ৩৭ হাজার প্যানেল প্রত্যাশির মধ্যে ৬১ জেলার সকল উপজেলা, ইউনিয়ন, এমনকি প্রতিটি গ্রামের চাকরি প্রার্থী রয়েছে। তাই আমরা ৩৭ হাজার মেধাবীকে প্যানেল আকারে নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
৩) যারা ২৪ লাখ প্রার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং যেখানে পাশের হার ২.৩ শতাংশ তাই তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলার কোনো সুযোগ নেই এবং প্যানেল তাদের অধিকার।
৪) বর্তমানে ১৮১৪৭ জনকে নিয়োগের পরও ৪০ হাজারের অধিক শূন্যপদ রয়েছে এবং ৬৫ হাজার রিজার্ভ টিচার নিয়োগের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
৫) ব্যাংকসহ সরকারি -বেসরকারি শতশত প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ থাকা সাপেক্ষে প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে কেননা এটা নিয়োগেরই অংশ।
৬) প্যানেলের মাধ্যমে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ এবার নতুন কিছু নয়। ২০১০,২০১২,২০১৩ ও ২০১৪ সালেও প্যানেলের মাধ্যমে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষক প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৭) প্যানেলে নিয়োগ হলো উচ্চ আদালতের রিট জনিত জটিলতা থাকবে না এবং দেশের শিক্ষিত মেধাবীরা বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাবে শুধু তাই নয় প্রাথমিকের দীর্ঘ দিনের শিক্ষক সংকট সমস্যা দূর হবে।
৮) বিগত ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতের রিট জনিত জটিলতায় দীর্ঘ চার বছর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বন্ধ থাকার কারণে আমরা শিক্ষা জীবনে মাত্র একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়েছি যার ফলে আমাদের অনেকেরই ২০২০ সালে চাকুরিতে আবেদনের আর কোনো সুযোগ নেই।
৯) সর্বোপরি,প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের কাছে চাওয়া, মুজিব বর্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বাংলা রিডিং পড়া শেখার স্বপ্ন পূরণ হবে।
লেখকঃ জাকির আহমেদ, সভাপতি, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ -২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশি কমিটি।
সুনামগঞ্জ জেলা শাখা।
নির্বাহী সম্পাদক