Home » করোনায় অর্থকষ্টে এসএ গেমসের স্বর্ণকন্যা অন্তরা

করোনায় অর্থকষ্টে এসএ গেমসের স্বর্ণকন্যা অন্তরা

এসএ গেমসে সোনার পদক গলায় পরে আনন্দে কেঁদেছিলেন। পোডিয়ামে দাঁড়ানোর পর যখন ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত শুনেছিলেন, তখনই মনের ভেতরে স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন কারাতেকা হুমায়রা আক্তার অন্তরা। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে গত ডিসেম্বরে নেপাল থেকে দেশকে এনে দিয়েছিলেন আরও দুই পদক ব্রোঞ্জ ও রৌপ্য। একমাত্র কারাতেকা হিসেবে সর্বোচ্চ তিনটি ইভেন্টে খেলে দেশকে তিনটি পদক উপহার দেওয়া অন্তরার স্বপ্নে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। বৈশ্বিক এ মহামারির কারণে অন্য সবার মতো ভালো নেই ২০ বছর বয়সী এ কারাতেকা। আর্থিক অনিশ্চয়তা পেয়ে বসেছে তাকে। খেলা নেই বলে আয়ের পথও বন্ধ। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবার ব্যবসাও ভালো যাচ্ছে না। সংসারের বড় মেয়ে হিসেবে কারাতে খেলে যেটুকু আয় করতেন অন্তরা, তা দিয়ে বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ঘরবন্দি অন্তরারা চলছেন বাংলাদেশ আনসারের কাছ থেকে পাওয়া ভাতার টাকায়। চার বোনসহ মোট সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে বেশ কষ্টে আছেন অন্তরা। দেশকে বড় সাফল্য এনে দেওয়ার পর অন্তরাদের কপালে জুটেছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) থেকে সংবর্ধনা ও কিছু অর্থ। সেই টাকা পুরিয়ে যাওয়ায় অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে তার। অর্থকষ্টে থাকলেও সাহায্য চান না তিনি। বরং আনসারে একটি স্থায়ী চাকরি চান অন্তরা। ২০১৪ সাল থেকে আনসারের ভাতাভুক্ত খেলোয়াড় অন্তরা। তার অন্য তিন বোনও কারাতেকা। জাতীয় পর্যায়ে এরই মধ্যে নিজেকে মেলে ধরা জান্নাতুল ফেরদৌসও আনসারের ভাতাভুক্ত খেলোয়াড়। আনসার থেকে পাওয়া দুই বোনের মাসিক ভাতা থেকেই তাদের চার বোনের পড়াশোনার খরচ চলে। কারাতে খেলা ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাবে কোচিং করাতেন অন্তরা। তার সঙ্গে ছিল বাবার ব্যবসা। বেশ ভালোই চলছিল অন্তরাদের সংসার। এখন করোনার থাবায় সব এলোমেলো হয়ে গেছে। নিজের কষ্টের কথা এভাবেই বললেন ঢাকা সিটি কলেজের অ্যাকাউন্টিংয়ের এ ছাত্রী, ‘আমরা যদি কোনো গেমস হয় কিংবা প্রতিযোগিতা হয়, তখন ওখান থেকে অর্থ পাই। আর অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য আমি কয়েকটি ক্লাবে কারাতে শেখাই। বলতে পারেন আমি কোচ হিসেবে কাজ করি। খেলে এবং কোচিং করিয়ে যে অর্থ পেতাম, তা দিয়ে বেশ চলতে পারতাম। সংসারেও সাহায্য করতে পারতাম। কিন্তু এখন তো সবই বন্ধ। আয়ের পথও খোলা নেই। এখন তো প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দিতে হচ্ছে। আর যে ভাতা পাই, তা দিয়ে তো আর বাসা ভাড়া দিতে পারিনি। বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, সেটা যদি সামনেও থাকে, তাহলে বাসা ছেড়ে আমাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে হবে।’

এত সমস্যার পরেও কারও দয়া চাচ্ছেন না অন্তরা। বরং আনসারের চাকরিটা খুব করে চাইছেন তিনি, ‘যে ভাতা পাই, তা দিয়ে চলতে কষ্ট হয়। আসলে গত এপ্রিলে আনসারে একটা সার্কুলার হওয়ার কথা ছিল। সেখানে আমার এবং আমার ছোট বোনের চাকরি হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে চাকরিটা এখন আর হয়নি। আমি তো এখন চলতে পারছি। এমন অনেক অ্যাথলেট আছেন, যাদের চলতে কষ্ট হচ্ছে। আমি চাই তাদের সাহায্য করুন। আর আমার পরিবারের জন্য আমি একটা চাকরি খুব করে চাইছি।’ অন্তরার মনের ভেতর কাজ করছে অজানা এক ভয়। করোনার কারণে যদি বন্ধ হয়ে যায় আনসারের ভাতাও, ‘আমাদের যে টাকাটা আসত, সেখান থেকে নিজেদের পড়াশোনার খরচটা ম্যানেজ করতাম। এখন যদি এটা বন্ধ হয়ে যায়, অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ব।’

করোনার সময় কারাতেকারা কেমন আছেন, তার খোঁজখবর খুব একটা নিচ্ছেন না ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। মেসেজ দিয়ে খবর নিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ তাদের। কারাতে খেলোয়াড়দের কষ্টের কথা নাকি জানেনই না ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ক্য শৈহদ্মা, ‘আমি তো যুগ্ম সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আর অন্তরার বিষয়টি আমি জানি না। বর্তমানে আমি বান্দরবানে আছি। ওর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *