গেল মার্চে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে হানা দেয়। তখন দেশে একমাত্র ঢাকাস্থ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করতো। কিন্তু আইইডিসিআর সামাল দিতে না পারায় এবং সারা দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় করোনা পরীক্ষার ল্যাব সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরই প্রেক্ষিতে সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজে স্থাপিত ল্যাবে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল।
কিন্তু প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন বাড়ছে উদ্বেগ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সিলেটে করোনাভাইরাস শনাক্তের একমাত্র ল্যাবে বাড়ছে না পরীক্ষার সংখ্যা। ওসমানী মেডিকেল কলেজে স্থাপিত এই ল্যাবে সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনার স্তূপ জমা হয়ে আছে। ওসমানীর ল্যাবের এই চাপ কিছুটা কমাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের দিকে চোখ রাখছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই শাবির ল্যাব চালু হওয়ার কথা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওসমানীর ল্যাবে প্রতিদিন দুটি শিফটে ৯৪টি করে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। তবে প্রতিদিন এতো সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। কারণ, প্রথম শিফটে ৯৪টি নমুনার মধ্যে কিছু নমুনার ফলাফল আসে বিভ্রান্তিকর (না পজিটিভ, না নেগেটিভ)। ফলে এসব নমুনা আবার দ্বিতীয় শিফটে দিতে হয়। এতে দ্বিতীয় শিফটে ৯৪টি নতুন নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘ওসমানীর ল্যাবে প্রতিদিন ১৮৮টির মতো নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে। তবে কিছু নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করতে হয়, তাই সক্ষমতা অনুসারে পরীক্ষা হয় না।’ জানা গেছে, প্রতিদিন সিলেট বিভাগের চারটি জেলা থেকে করোনাক্রান্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শরীরের সংগৃহিত নমুনা ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে এসে জমা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের অধীনে নমুনা সংগ্রহ করে জমা দেওয়া হয়। বর্তমানে ওসমানীর ল্যাবে এক হাজারেরও বেশি নমুনা জমা হয়ে আছে। এর সাথে প্রতিদিন জমা হওয়া নমুনা যুক্ত হওয়ায় ওসমানীর ল্যাবে চাপ বাড়ছেই।
এ প্রেক্ষিতে গেল কয়েকদিন ধরে ঢাকায় নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কিন্তু ঢাকায়ও নমুনা পরীক্ষার ব্যাপক চাপ। ফলে সেখান থেকে দ্রুত ফলাফল জানা সম্ভব হচ্ছে না। গত ২৩ এপ্রিল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক ইন্টার্ন চিকিৎসক করোনাক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। তিনি ইন্টার্ন হোস্টেলে থাকেন। ওই হোস্টেলের ৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় ২৪ এপ্রিল। সেখান থেকে ১৬ জন পজিটিভ বলে ফলাফল আসে ৪ মে! এর মধ্যে আক্রান্ত ১৫ জনই সুস্থ হয়ে ওঠেন। এসব বিবেচনায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের ল্যাবে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা শুরুর তাড়না অনুভব করছেন সংশ্লিষ্টরা। শাবির ওই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও এ ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। মূলত তাদের আগ্রহের কারণেই এখানে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। শাবির জিইবি বিভাগের ল্যাব বর্তমানে প্রায় প্রস্তুত অবস্থায় আছে। এখন বায়ো সেফটি কেবিন আসার অপেক্ষা। আগামী মঙ্গল-বুধবার নাগাদ এ কেবিন চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। শাবির ল্যাবে জিইবি বিভাগের শিক্ষক এবং মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কাজ করবেন।
বার্তা বিভাগ প্রধান