কোনও পরিযায়ী শ্রমিককে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে না, সরকার তার ফেরার ব্যবস্থা করবে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের এই নিদান থাকা সত্ত্বেও ছবিটা একই রয়েছে। নয়ত কিশোর সাহুকে ৬৫০ কিমি রিকশা চালিয়ে হাওড়ায় নিজের বাড়িতে ফিরতে হতো না।
ঠিকই শুনেছেন। ৬৫০ কিমি রিকশা চালিয়েছেন কিশোর সাহু। পেশায় রিকশাচালক উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু কোনও উপায় পাননি ফেরার। ৪০ বছরের সাহু তাই ঠিক করেন রিকশা চালিয়ে পেটের ভাত যখন জোটে, বাড়ির আশ্রয়ও এই রিকশাই দেবে। সেই ভেবেই চারটি রাজ্য পেরিয়ে ৬৫০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে দেশের বাড়ি হাওড়ায় পৌঁছলেন তিনি।
রিকশায় ছিল যৎসামান্য টাকা ও নিজের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। নিজের সম্বলকে আঁকড়ে প্যাডেলে পা রাখেন কিশোর। বারাণসীর ভারত সেবাশ্রম সংঘের অস্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে ২৮শে এপ্রিল হাওড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। প্রতিদিনের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পেটে টান পড়েছিল তাঁর। ফুরিয়ে আসছিল জমানো টাকাও। অনাহারে ও স্বল্পাহারে কাটিয়ে কোনও রকমে নিজের বাড়ি পৌঁছেছেন তিনি।
৮দিনের মাথায় ঝাড়খণ্ডে এসে পৌঁছন তিনি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে পারেননি আন্তঃরাজ্য সীমান্ত সিল থাকায়। আশ্রয় ছাড়া, খাবার ছাড়াই ঝাড়খণ্ডে থাকতে বাধ্য হন সপ্তাহের পর সপ্তাহ।
চৌঠা মে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জারি করা হয় নির্দেশ। এরপরেই খুলে দেওয়া হয় সীমানা। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে শারীরিক পরীক্ষার পর রাজ্যে ঢোকার সুযোগ পান কিশোর। পা রাখেন আসানসোল জেলায়, যেখান থেকে বাড়ি পৌঁছনোর জন্য তাঁকে পেরোতে হত আরও ২০০ কিলোমিটার। অবশেষে পথ শেষ হল।
এদিকে, শুক্রবার সকালে পরিযায়ী শ্রমিকদের দেহের ওপর দিয়ে চলে যায় একটি মালবাহী ট্রেনের খালি রেক। ঔরঙ্গাবাদের কাছে রেল লাইনে বিশ্রাম নেওয়ার সময় মালগাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় ১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। মহারাষ্ট্র থেকে রেল লাইন ধরে হেঁটে মধ্যপ্রদেশে যাচ্ছিলেন তাঁরা। পথে ক্লান্ত হয়ে পড়লে রেল লাইনেই ঘুমিয়ে পড়েন ওই শ্রমিকরা। তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তারা ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা বলে জানা যাচ্ছে।
জানা গিয়েছে, রেলট্রাক ধরে হাটছিলেন ওই শ্রমিকেরা। জালনা থেকে ভূষাভালের দিকে যাচ্ছিল তারা। খুব সম্ভবত, দিনভর হাঁটার পর তারা ক্লান্ত হয়ে রেললাইনের ওপরেই বিশ্রাম নিচ্ছিল। ভোর ৫ টা ১৫ নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নির্বাহী সম্পাদক