সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ পরীক্ষাগারে গত ২৩ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া হয়। করোনার উপসর্গ না থাকায় তাঁরা কর্মস্থলে দায়িত্বও পালন করছিলেন। নমুনা দেওয়ার ১৩ দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার নিশ্চিত হওয়া যায়, তাঁদের পাঁচজনই করোনার রোগী। একই তারিখে নমুনা দিয়ে গত মঙ্গলবার জেলার বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন নার্স নিশ্চিত হয়েছেন, তাঁরা করোনা আক্রান্ত। এঁরা দুজনও টানা ১৩ দিন স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছিলেন।
পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ওই সদস্যদের মতো সিলেট বিভাগের চার জেলার অনেকে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করে যাচ্ছেন। ফলে তাঁরা অনেকের সংস্পর্শেও আসছেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে দেরি হওয়ায় অনেকে মনে করছেন, তাঁদের শরীরে করোনাভাইরাস নেই। পরে যখন করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে, তখন এসব রোগীরা ওই সময়ের ভেতরে ঠিক কতজনের সংস্পর্শে এসেছেন, তা নির্ধারণে হিমশিম খেতে হয়। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা সবার কোয়ারেন্টিনও নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
করোনাভাইরাস শনাক্তে সম্পৃক্ত চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য একটি পরীক্ষাগারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে সিলেট বিভাগের চারটি জেলাকে। এ কারণে নমুনার স্তূপ জমে যাচ্ছে সেখানে। প্রতিদিন চার থেকে ছয় দিন আগে সংগ্রহ করা নমুনার পরীক্ষা হচ্ছে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নমুনার ফল জানানো সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, সিলেট মহানগরে অবস্থিত এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে। সিলেট ছাড়াও মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে এখানে। সেখানে প্রতিদিন দুই ধাপে সর্বোচ্চ ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, সিলেটে ৭ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা শুরু হয়। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত নমুনা জমা হয়েছে ৫ হাজার ২৬৫টি। এর মধ্যে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে ৪ হাজার ২৭০টি। প্রচুর নমুনা জমা পড়ে যাওয়ায় জট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে ১ হাজার ১৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করিয়ে আনিয়ে হয়। বাকিগুলো ওসমানীতে পরীক্ষা করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৯৯৫টি নমুনা পরীক্ষার বাকি ছিল।
একই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটে পরীক্ষাগার স্থাপনের আগে গত ৫ ও ৬ এপ্রিল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথে (আইপিএইচ) ৪০টি এবং এরও আগে ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) ৫০টির মতো নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর বাইরে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলাটি সিলেট মহানগরের অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় সেখানকার নমুনাগুলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। ধরমপাশা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ঝন্টু সরকার আজ বুধবার জানিয়েছেন, তাঁর উপজেলা থেকে ৭৮টি নমুনা পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ৬২টির ফলাফল জানা গেছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, ‘যাঁদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে তাঁদের ফলাফল পেতে গড়ে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগছে। ১৩ দিন পর্যন্ত সময় লেগেছে, এমন উদাহরণও আছে। এতে আক্রান্তদের যথাযথ হোম কোয়ারেন্টিন ও সেবা নিশ্চিত করতে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই এ সমস্যা কাটবে বলে তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষাগারে একদিনে দুই ধাপে সর্বোচ্চ ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। এর মধ্যে আবার কিছু নমুনা রিজেক্ট হচ্ছে, তাই পরবর্তী সময়ে সেগুলোও পুনরায় পরীক্ষা করতে হচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকটি ল্যাব স্থাপিত হচ্ছে, সেটি হলে ফলাফল জট কিছুটা কমবে।’ তিনি গত মঙ্গলবারের উদাহরণ টেনে বলেন, ওইদিন ৩৩৮টি নমুনা জমা পড়েছিল। সেখান থেকে ১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো
বার্তা বিভাগ প্রধান