তাবলীগের নামে সৌদি আরব গিয়ে ইমাম মাহদী সাথে সাক্ষাতের আশায় একমাস পূর্বে কথিত ‘হিজরত’ করা জেএমবির ১৭ অনুসারীকে রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের এডিসি তহিদুল ইসলাম জানান, ৪ মে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় কাকরাইল মসজিদ এর বিপরীত পাশে পাবলিক হেলথ্ কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের নিকট হতে বিভিন্ন ধরনের ১৯টি মুঠোফোন ফোন, ২ লক্ষ ৩৪ হাজার বাংলাদেশি টাকা ও ৯২২ মার্কিন ডলার জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান নামে একজন বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি জিহাদের পক্ষে ইমাম মাহদীর সৈনিক হিসাবে বিভিন্ন বক্তব্য এবং গাজওয়াতুল হিন্দ নামক স্থানে মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে অডিও ভিডিও প্রকাশ করেন। গ্রেফতারকৃতরা তাঁর বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর সাথে যোগাযোগ করে ইমাম মাহদীর সৈনিক হিসাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. হায়দার আলী (৪৪), মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, মোঃ জামিরুল ইসলাম (২৪), মোঃ বিল্লাল হোসেন (৩৮), মোঃ শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), মোঃ ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৫), মোঃ মোজাম্মেল হক (৩৩), মোঃ শাহজালাল(৩৪), মোঃ আক্তারুজ্জামান (৩০), মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), মোঃ আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), মোঃ সোহাইল সরদার (৩৩), মোঃ ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মোঃ মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল ( ২৮) ও মোঃ সোহাগ হাসান (২০)।
গ্রেফতারকৃতরা জানান, তারা পলাতক রবিউল সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় তারা পরস্পর যোগাযোগ করে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। তাবলীগ-জামায়াতের আড়ালে সাতক্ষীরা বা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত-কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরব পৌঁছাবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাদেরকে বলা হয়েছিলো করোনার দুর্যোগে আকাশ থেকে একধরনের গজব নেমে আসবে এবং সমস্ত কিছু ধোঁয়াছন্ন হয়ে যাবে তখন সীমান্তে কোন পাহারা থাকবেনা। এই সময় তারা যেন চলে আসেন। এই বিশ্বাস নিয়ে গত ১৮ মার্চ তারা প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করেন ভারতে যাওয়ার জন্য। তাদেরকে আরো জানানো হয়েছিলো আগামী চল্লিশ দিন সূর্য উঠবে না, আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে, কাফিররা সবাই মারা যাবে, ইমানদারদের শুধু হালকা কাশি হবে। ইমাম মাহদীর আগমন এই রমজানে সমাগত তাই তারা যেভাবে পারে সেভাবে যেন আসার চেষ্টা করে। তারা সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে মোতাবেক তারা ঢাকায় আসেন।
এডিসি তোহিদ বলেন, সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচনায় এবং তার সাথে যোগাযোগ করে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে গমন করে আর ফিরে আসেননি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সা’দ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম এবং রাশেদ নামে আরও ৭ জন ইমাম মাহদীর সৈনিক হিসেবে যোগদানের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব হিজরত করেছেন বলে গ্রেফতারকৃতরা জানান।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সূত্র: ইত্তেফাক
বার্তা বিভাগ প্রধান