করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা ‘রূপকল্প-২০২১’ অর্জনকে যেন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য আগাম পরিকল্পনা ও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। বিশেষ করে আইসিটি খাতের অগ্রযাত্রা যাতে কোনওভাবে ব্যাহত না হয় সেজন্য পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসজনিত সংকট কেটে গেলে সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে বাস্তবায়নে হাত দেবে সরকার।
দেশে এই সময়ে বিরাজ করছে লকডাউন পরিস্থিতি। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সেবা ও ই-কমার্স খাত ছাড়া আর সব বন্ধ। তবে কল সেন্টারে কিছু কিছু কাজ হলেও সফটওয়্যার খাত থেমে আছে। পুরোপুরি বন্ধ হার্ডওয়্যার বাজার ও রাইড শেয়ারিং। মার্কেট প্লেসগুলোর কিছু অংশ খোলা থাকলেও ডেলিভারি ম্যান সংকটে সেগুলো প্রায় নিভু নিভু। বেশিরভাগ আউটসোর্সিংয়ের (অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং) কাজ বন্ধ। কিছু কাজ হলেও সেগুলোর বিল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে ফ্রিল্যান্সারদের মনে। এক প্রকার থেমে যাওয়া খাত আইসিটি নিয়ে তাই চিন্তা-ভাবনার শেষ নেই সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে একটি হলো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পরপরই এ খাতের জন্য যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে সেগুলোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া এবং তিনটি মেয়াদে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ। এজন্য কৌশলপত্র প্রণয়নের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের নাম হতে পারে ‘পোস্ট কোভিড-১৯ অ্যাকশানপ্ল্যান অন টেকিনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের অনেক কিছু ‘অ্যাচিভ’ করার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সেসবে কোনও প্রভাব ফেলবে কিনা, ফেললে সেই প্রভাব কতদূর যাবে তা আমাদের আগেই ঠিক করতে হবে। এজন্য আমি পরিকল্পনা করছি, উদ্যোগ নিচ্ছি যাতে করে কোনও সংকট তৈরি হলে আমরা দ্রুত সমাধান করতে পারি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পরিকল্পনা খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। পরিকল্পনায় কী কী বিষয় এলো, আর কী কী বিষয় আসতে পারে সেসব নিয়ে বিশ্লেষণের কাজ চলছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম কিছু প্রযুক্তি একটা নির্দিষ্ট সময়ে আসবে। সেভাবে পরিকল্পনা ধরেই আমরা অগ্রসর হচ্ছিলাম। কিন্তু করোনা সংকটে অনেক প্রযুক্তির ব্যবহার আগেই শুরু হয়ে গেলো। আমরা দেখলাম জুম সফটওয়্যারের (ভিডিও কলিং) ব্যবহার বেড়ে গেছে কিন্তু অন্য অনেক সফটওয়্যারের ব্যবহার কমে গেছে। কিছু নতুন পণ্য চলে এসেছে। আমরা এ সময়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা তৈরি হচ্ছে কিনা, কোনগুলোর চাহিদা কমে গেল কিনা ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ রাখছি ।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির ‘ইমিডিয়েট’ পরই আইসিটি খাতের সঙ্গে জড়িতদের কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে কাজ করবে আইসিটি বিভাগ। এরমধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, সুযোগ সুবিধা বাড়ানো, স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তার মতো বিভিন্ন উদ্যোগ। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ বিষয়ে বলেন, আমরা এখন বিষয়টি সমন্বয়ের কাজ করছি। কোভিড-১৯ পরবর্তী দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি কী হবে,যারা এখন মাঠে আছে (তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী) তাদের কী হবে সেসব নিয়েও আমরা ভাবছি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে স্টার্টআপ কমিউনিটির কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তাদের উদ্যোগ টিকিয়ে রাখতে হলে কী করা প্রয়োজন সেসব। ফলে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের চিন্তা-ভাবনাতেও আইসিটি খাত গুরুত্ব পাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে সরকার আইসিটি খাতের জন্য স্বল্প, মাধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০২১ সাল, ২০২৫ সাল ও ২০৩০ সালকে সামনে রেখে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও সেবাখাত বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে যে বিষয়গুলো অ্যাচিভ করা সম্ভব হবে না বা কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে সেগুলো পরবর্তী দুটো মেয়াদে ২০২৫ ও ২০৩০ সালের মেয়াদে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এ সময়ের মধ্যে আরও যেসব নতুন প্রযুক্তি চলে আসবে সেগুলোতেও এসব মেয়াদে সমন্বয় করে এখানে চালু করতে হবে। বর্তমানে এসবের খসড়ার কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বসে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
বার্তা বিভাগ প্রধান