অনলাইন ডেস্ক: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে মাত্র চার মাসে তৈরি হওয়া এই চাডক্স১ এনকভ-১৯ (ChAdOx1 nCoV-19) ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে প্রথমদিন দুজন বিজ্ঞানী (একজন পুরুষ, একজন নারী) অংশ নেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছে।
প্রথমদিন টিকা নেওয়া দুজন বিজ্ঞানী হলেন, অণুজীব বিজ্ঞানী এলিসা গ্রানাটো এবং ক্যানসার গবেষক এডওয়ার্ড ও’নিল। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তারা জানান, তারা পৃথিবীকে করোনামুক্ত করতে এগিয়ে এসেছেন। প্রথম দিন এই দুজন অংশগ্রহণকারীর একজনকে চাডক্স১ এনকভ-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, আরেকজনকে দেওয়া হয়েছে নিবন্ধিত ভ্যাকসিন।
এই দুজনকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তৃতীয়দিন একইভাবে আরও ছয়জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পঞ্চমদিন আরেক গ্রুপকে দেওয়া হবে।
ভ্যাকসিন দেওয়ার পর সবাইকে একটি করে ই-ডায়েরি দেওয়া হবে। পরবর্তী সাতদিনে কারও কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটি সেখানে নোট করে রাখতে হবে।
সব ডেটা বিশ্লেষণ করতে আনুমানিক ৬ মাস লাগবে। নতুন ভ্যাকসিন অধিকাংশ সময় প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল দেয় না। এক্ষেত্রে সেটি হলে পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে সাজানো হতে পারে। ডোজের মাত্রা পাল্টানো হতে পারে। অথবা প্রোগ্রামটি বন্ধ করা হতে পারে।
পরীক্ষায় যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের অর্ধেককে কোভিড-১৯ টিকা এবং বাকি অর্ধেককে করোনাভাইরাস নয় বরং ম্যানিনজাইটিস প্রতিরোধক টিকা দেওয়া হবে। টিকা যারা নেবেন তারা জানতে পারবেন না যে তাদের কোন টিকা দেওয়া হয়েছে। কেবল চিকিৎসকরাই তা জানবেন।
৩২তম জন্মদিনে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশ নেওয়া এলিসা বিবিসিকে বলেন, ‘আমি একজন বিজ্ঞানী। তাই যেভাবে পারি বিজ্ঞানকে সাহায্য করতে চেয়েছি। এভাবে মানুষের জন্য নিজেকে এগিয়ে নিতে পেরে আমি দারুণ রোমাঞ্চিত।’
পুরুষদের ভেতর প্রথম ভ্যাকসিনে নেয়া ও’নিল বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এটাই সঠিক পথ।’
চাডক্স১ এনকভ-১৯ (ChAdOx1 nCoV-19) তৈরি হয়েছে চাডক্স১ (ChAdOx1) থেকে। এটি সাধারণ কোল্ড ভাইরাসের (adenovirus) দুর্বলতম ভার্সন। এই ভাইরাস শিম্পাঞ্জির ইনফেকশনের কারণ। এটি জেনেটিকালি পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে এর পক্ষে মানবদেহে বেড়ে ওঠা অসম্ভব হয়।
চাডক্স১ তৈরি করতে যে জিনগত উপাদান যোগ করা হয়েছে, সেটি কভিড-১৯ (সার্স-কভ-২) থেকে প্রোটিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। একে বলা হয়, স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন। এই প্রোটিন সার্স-কভ-২’তে দেখা গেছে। সংক্রমণের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সার্স-কভ-২ করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে মানব কোষের এসিই২ রিসেপ্টরকে আটকে ফেলে। এরপর শরীরে সংক্রমণ ঘটায়।
গবেষকদের আশা, চাডক্স১ এনকভ-১৯ ব্যবহার করে ওই স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো যাবে।