গত ২ এপ্রিল থেকে অসুস্থতা অনুভব করছিলেন চট্টগ্রামের গারটেক্স গার্মেন্টসের জুনিয়র কমার্শিয়াল ম্যানেজার ওমর আলী। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মেই তার সেবা করেছিলেন স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা। সর্বনাশ যা হওয়ার তাই হলো। ওই গার্মেন্টস কর্মকর্তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে সবাই করোনায় আক্রান্ত হন।
১৪ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া ১১ জনের মধ্যে পাহাড়তলী থানাধীন সাগরিকা এলাকায় বসবাসরত গার্মেন্টস কর্মকর্তার পরিবারের চার সদস্যের করোনা পজিটিভ আসে। শুধু সাড়ে তিন বছরের ছোট মেয়েটির ফলাফল নেগেটিভ আসে।
গতকাল বুধবার (২২ এপ্রিল) তাদের চারজনের সবার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। এর আগে মঙ্গলবার গার্মেন্টস কর্মকর্তা ওমর আলীর নমুনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এর মাধ্যমে পুরো পরিবারের ওপর নেমে আসা করোনা দুর্যোগের অবসান ঘটল।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক জামাল মোস্তফা বলেন, ‘মঙ্গলবার গার্মেন্টস কর্মকর্তা ওমর আলীর নমুনা পরীক্ষায় দ্বিতীয়বারের মতো নেগেটিভ আসে। ইতিমধ্যেই তিনি বাড়ি ফিরে গেছেন। বুধবার তার স্ত্রী-কন্যা ও সন্তানদের নমুনা রিপোর্টও নেগেটিভ আসে। তবে এক সন্তানের আরও একবার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন মনে করছি, তাই পরিবারটিকে শনিবার রিলিজ দেয়া হবে, তবে তারা সবাই এখন সুস্থ ও করোনামুক্ত।’
আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব জানান, করোনা পরীক্ষায় পর পর দুবার নেগেটিভ ফলাফল আসায় বৃহস্পতিবার আরও তিনজনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
তারা হলেন- নগরীর সাগরিকা এলাকার বাসিন্দা গার্মেন্টস কর্মকর্তা ওমর আলীর স্ত্রী শামীমা আক্তার (৩৫) এবং তার মেয়ে সামীরা আক্তার (১৮)। ওমর আলী তার স্ত্রীসহ পরিবারের পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন তিনজন পুরোপুরিই সুস্থ, বাকি দুজনের আরও একবার নেগেটিভ রিপোর্ট হলে তারা একসঙ্গে বাড়ি ফিরবেন।
এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলার জাকির হোসেন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন আজ। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট ১০ জন করোনা রোগী সুস্থ হলেন।
চট্টগ্রামে করোনাজয়ীদের বিষয়ে জানাতে গিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক জামাল মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি দিয়েছেন তা যেকোনো ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত থাকে। মূলত যেসব রোগীদের অ্যান্টিবডি শক্তিশালী তারা তাড়াতাড়ি সেরে উঠছেন। আমরা করোনা মোকাবিলায় জাতীয় গাইড লাইন অনুসরণ করে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।’
চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (হোমিও ও ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন) ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীকে বলেন, ‘দেশের ৮০ শতাংশ রোগী আক্রান্ত হয়ে সামান্য সর্দি কাশির পর ভালো হয়ে যাবেন। শুধু ২০ শতাংশ যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের নিয়ে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে আমাদের।’
প্রসঙ্গত, ৮ এপ্রিল করোনা শনাক্তের পর থেকে নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন গার্মেন্টস কর্মকর্তা ওমর আলী। ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া ১১ জনের মধ্যে চারজনই ওই গার্মেন্টস কর্মকর্তার পরিবারের সদস্য ছিলেন। সেদিন রাতেই তাদের চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিপত্তি দেখা দেয় সাড়ে তিন বছরের ছোট মেয়েটিকে নিয়ে, যে ছিল করোনামুক্ত।
সেদিন রাতেই চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই গার্মেন্টস কর্মকর্তা মুঠোফোনে আর্তনাদ করতে করতে বলছিলেন, ‘আমার ছোট্ট মেয়ে এখন কার কাছে থাকবে। সে একেবারে সুস্থ। পরিবারের সবাই করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসবে। মেয়েটাকে তো আত্মীয়-স্বজন কেউ রাখবে না। আর মেয়েটিও মা ছাড়া কারও কাছে থাকবে না। এই মেয়ের কিছু হলে আমার পরিবারের কেউ বাঁচবে না।’
অনেক অনুরোধের পর শিশুটিকে তার এক মামার হেফাজতে রাখা হয় বলে জানান পাহাড়তলী থানার ওসি মাইনুর রহমান।
সেদিন তিনি বলেন, ‘শিশুটির অবস্থান জানাজানি হলে ওই এলাকার লোকজন হয়তো আপত্তি জানাতে পারে। শিশুটির ভালো থাকাটাই জরুরি। আমরা নিয়মিত খোঁজ রাখছি।’
এবার পরিবারের বাকি সদস্যরা ফিরলেই আবারও হাসিখুশিতে ভরে উঠবে পরিবারটি। এভাবেই দেশে সবগুলো পরিবারে ফিরুক হাসি, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
নির্বাহী সম্পাদক