অবশেষে উৎপাদিত টেস্টিং কিট পরীক্ষার জন্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রক্ত পেতে যাচ্ছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গতকাল বুধবার চিঠি দিয়ে সংস্থাটিকে অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।.আজ বৃহস্পতিবার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এর পর টেস্টিং কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে আগামী শনিবার সরকারকে কিট হস্তান্তর করা যাবে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিবাচক থাকায় যখন যে বাধা আসছে, তারা তা অতিক্রম করতে পারছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা না পেলে হয়তো এই কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীগোষ্ঠী বিদেশ থেকে কিট আমদানি করতে চায়। কিন্তু সরকার কাউকেই আমদানির অনুমতি দেয়নি। এর মধ্যে অনেকেই কিট এনে জমা
করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু কিছু উদ্ধারও করছে। তারাই মূলত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই কিট উৎপাদনের মূল বাধা হিসেবে কাজ করছে। এ স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীরা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উৎপাদন বিলম্বিত করে সরকারকে তাদের কাছ থেকে কিট কিনতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকার এ ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এর আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পাঁচ করোনা রোগীর রক্ত পেয়েছিল। সে সময় ল্যাবরেটরিতে ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল গোলযোগ তৈরি হয়। এখন আমরা আবার কিট উৎপাদন শুরু করেছি। তাই গবেষণার জন্য আবারও করোনা রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয়েছে।
গত ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লেখা চিঠিতে ১০ করোনা রোগীর তিন সিসি করে রক্তের নমুনার প্রয়োজনের কথা জানায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অধিদপ্তর এ চিঠির উত্তর দেয়নি।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক কর্মীকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বসিয়ে রাখা হয়। ডিজি অনেকক্ষণ পরে বলেছেন, ফাইল নাই, ফাইল পাই না। এর পর ৪টার দিকে ওই কর্মীকে বলা হয়েছে, আজকে চলে যান। এ ঘটনার পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহযোগিতায় গতকাল বেলা ১১টার দিকে সেই চিঠির উত্তর পাওয়া যায়।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাবে কিট উৎপাদন চলছে। এ কিটের কার্যকারিতা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত। অধিকতর পরীক্ষা করে আরও নিশ্চিত হব। বাংলাদেশের প্রয়োজন তো মিটবেই, আরও পাঁচ-ছয়টি দেশে আমরা কিট রপ্তানি করতে পারব। সরকারের কাছে প্রত্যাশা, যত দ্রুত সম্ভব গণস্বাস্থ্যের কিট পরীক্ষার ব্যবস্থা যেন করা হয়। রক্তের নমুনা দেওয়ার মতো যেন আটকে না থাকে। তিনি বলেন, এই রক্ত দিয়ে গবেষণার কাজ চলবে। কিট উৎপাদনের কাজ চলছে। আগামী শনিবার আমরা সরকারকে কিট সরবরাহ করতে পারব।
এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকার বলেন, আমরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেয়েছি। এ রক্ত সংগ্রহের কিছু প্রক্রিয়া আছে। আশা করছি, বৃহস্পতিবার (আজ) রক্তের নমুনা পেয়ে গেলে শুক্রবারের মধ্যে আমাদের টেস্টিং কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পারব। এটা হয়ে গেলে আমরা সরকারকে নমুনা টেস্টিং কিট দেব। এ জন্য ২৫ এপ্রিলকে আমরা টার্গেট করেছি। এর পর যদি সরকার আরও নমুনা কিট চায়, আমরা দেব। সরকারের সহযোগিতা পেলে পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দিতে পারবে বলে জানান তিনি।
ডা. মুহিব উল্লাহ জানান, এ কিটের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও ভারত থেকে কাঁচামাল আমদানি করা হয়। ভারত এখন সব ধরনের মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। অবস্থার অবনতি হলে ভবিষ্যতে অনেক দেশই ভারতের পথে হাঁটতে পারে।