Home » প্রিপেইড মিটার রিচার্জ: নির্দেশ মানছেন না এজেন্টরা, গ্রাহক বিপাকে

প্রিপেইড মিটার রিচার্জ: নির্দেশ মানছেন না এজেন্টরা, গ্রাহক বিপাকে

করোনাভাইরাসের দুর্যোগকালে ডিপিডিসির প্রিপেইড মিটার রিচার্জে এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। এতে করে ভোগান্তি বেড়েছে রাজধানীর গ্রাহকদের। করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করেই তাদের বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখতে দৌড়াতে হচ্ছে মিটার রিচার্জ করতে।

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি ঘরে থাকতে হবে। এজন্য সরকার বিদ্যুৎ বিল এবং গ্যাস বিলে বিলম্ব মাশুল মওকুফ করে দিয়েছে। প্রিপেইড মিটারে যারা গ্যাস ব্যবহার করছেন, তাদেরও জরুরি আপৎকালীন সময়ের জন্য ২০০ টাকা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহক দুই হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যবহারের পর তার লাইন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে একজন সাধারণ গ্রাহককে অন্তত তিন মাস আর বিল নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু বাদ সেধেছে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার। স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের ইমার্জেন্সি আওয়ার ১৫ দিন পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকো। তবে ডিপিডিসির সাধারণ প্রিপেইড মিটারের ইমার্জেন্সি আওয়ার তিন দিনের বেশি বৃদ্ধি করা যায় না। ফলে গ্রাহককে বাইরে যেতেই হচ্ছে বিল পরিশোধ করতে।

করোনার প্রকোপ কমাতে সারাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছে। দ্বিতীয়বার বেড়ে সেই ছুটি এখনও চলছে। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এই ছুটি আরও বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করবে তারা। এ সময় সাধারণ মানুষ যাতে বিল নিয়ে ব্যাংকে জড়ো না হয়, সে জন্য বিলম্ব মাশুল মওকুফ করে দিয়েছে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বিভাগ। সরকারের জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎ আর গ্যাসের বিল বিলম্ব মাশুল ছাড়াই দেওয়া যাবে। কারণ, হিসেবে বলা হয়েছে—বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের বিল দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলোতে অনেক লোক জড়ো হয়। আর এতে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে।

সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিও (ডিপিডিসি) একটি আদেশ জারি করে। ওই আদেশে বলা হয়, গ্রাহক ফোন করলে বাড়ি গিয়ে তাদের এজেন্টরা প্রিপেইড বিদ্যুৎ মিটার কার্ড রিচার্জ করে দিয়ে আসবেন। এজন্য ডিপিডিসি এজেন্টদের একটি তালিকা ফোন নম্বরসহ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।

এ অবস্থায় গত সপ্তাহের শেষে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসিন্দা জামাল উদ্দিনের প্রিপেইড মিটারের কার্ডের টাকা ফুরিয়ে আসায়, তিনি ডিপিডিসির এজেন্টদের ফোন দেন। ডিপিডিসির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া তালিকা ধরে ফোন দেন তার এলাকার এজেন্টদের। কিন্তু জবাবে এজেন্টরা জানান, তারা কেউ বাসায় গিয়ে রিচার্জ করেন না। এরপর জামাল সাহেব বাসা থেকে বাধ্য হয়ে বের হন। তার বাসার কাছাকাছি শেরশাহ সুরি রোড, সলিমুল্লাহ রোড, রাজিয়া সুলতানা রোডের তিনটি এজেন্টের দোকানে যান। এরমধ্যে রাজিয়া সুলতানা ও সলিমুল্লাহ রোডের এজেন্টের দোকান দুপুর ২টার আগেই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি শেরশাহ সুরি রোডে এজেন্টের দোকানে গিয়ে জানতে পারেন, তাদের নেটওয়ার্ক নেই। এরপর তিনি বাসায় চলে আসেন এবং পরদিন আবারও শেরশাহ সুরি রোডে গিয়ে কার্ড রিচার্জ করান।

এর আগে এজেন্টরা বাসায় আসতে রাজি না হওয়ায় জামাল সাহেব ডিপিডিসির কল সেন্টার ১৬১১৬ নম্বরে কল দেন। সেখানে বিল্লাল নামে একজন ফোন ধরেন এবং জামাল সাহেবকে বলেন, ‘বাসায় গিয়ে রিচার্জ না করতে চাইলে কিছু করার নাই। আপনি দোকানে গিয়ে রিচার্জ করিয়ে নেন।’

জামাল সাহেবের মতো ভোগান্তির শিকার আরও কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বললে তারাও একই ধরনের অভিযোগের কথা জানান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  ডিপিডিসির এমন আদেশ জারি করার আগে এজেন্টরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রিচার্জ করতে সক্ষম কিনা, তা বিবেচনা করা উচিত ছিল। একটি দোকানে একজনই এই কাজটি করে থাকেন। শুধু ডিপিডিসির রিচার্জই নয়, একইসঙ্গে ওই এজেন্টকে তার ব্যবসার অন্যান্য দিকও সামাল দিতে হয়। সেই এজেন্টকে যদি গ্রাহকের বাড়ি গিয়ে রিচার্জের কাজ করতে হয়, তাহলে তার ব্যবসা সামলাবে কে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন এজেন্টরা।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক এজেন্ট বলেছেন—তারা আদৌ এ কাজটি করতে পারবেন কিনা, তা বিবেচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে এখন তাদের করার কিছু নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস নতুন ধরনের বিপত্তি হলেও বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এখানে প্রায় প্রতিবছরই ঝড়বৃষ্টি লেগে থাকে। ফলে মিটার কেনার সময়ই ইমার্জেন্সি আওয়ার বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল, যা করা হয়নি বলেই এই বিপত্তি ঘটেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমরা এজেন্টদের বলে দিয়েছি, প্রয়োজনে তারা বাসায় যাবেন। এক্ষেত্রে কেউ যদি যেতে না চান, তাহলে গ্রাহকরা আমাদের কল সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা দরকার হলে কল সেন্টার থেকে খবর পেয়ে লোক পাঠাবো।’  তিনি বলেন, ‘করোনার এই সময়ে কেউই কারও বাসায় যেতে চায় না। নিরাপত্তার কারণে আমরাও খুব বেশি জোর করতে পারছি না।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *