Home » মানুষ সচেতন থাকায় ওই জানাজায় লোক কম হয়েছে: খেলাফত মজলিস মহাসচিব

মানুষ সচেতন থাকায় ওই জানাজায় লোক কম হয়েছে: খেলাফত মজলিস মহাসচিব

মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় লকডাউন ভেঙে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম বিষয়ে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের অধিকাংশ মানুষই কিন্তু কাছাকাছি থাকেন। দূর-দূরান্তের মানুষ খুবই কম। মাওলানা আনসারী আমাদের দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ছিলেন, দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি, সে কারণে আমরা একটা দায়িত্ববোধ আর দায়বোধ থেকেই কিছু মানুষ গিয়েছি। অনেকেই চেয়েছিলেন জানাজায় শরিক হতে। কিন্তু আমরা তাদের বলেছি যার-যার অবস্থান থেকে দোয়া করাটাই কর্তব্য। আর সবার পক্ষ থেকে আমরা দুই চারজন জানাজা পড়ে আমাদের দায়িত্ব সারার চেষ্টা করেছি।’

এর আগে শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, জানাজায় লাখ-লাখ মানুষ হয়েছে। তিনি জানান, মাওলানা আনসারীর জানাজার নামাজে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ইসমাঈল নূরপুরী, নায়েবে আমির মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা জুনাঈদ আল হাবীব, বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান, জামিআ ইউনুছিয়ার মুহতামিম মাওলানা মোবারক উল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা মুহসিনুল হাসান, রাবেতাতুল ওয়াজিনের উপদেষ্টা মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাসান জামিল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বি-বাড়িয়া জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খন্দকার মঈনুল ইসলামসহ স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ও রাজনৈতিক নেতারা।

লকডাউনের মধ্যে এতো মানুষের সমাগম প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘কাছাকাছির মানুষগুলোকে কীভাবে বাধা দেওয়া সম্ভব। আমার মনে হয়েছে, এ কারণেই জমায়েত হয়েছে বেশি। একদম কাছাকাছি সময়ে কাছাকাছি থাকা মানুষেরাই শরিক হয়েছেন জানাজায়।’

করোনাভাইরাসের কারণে যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে, সেদিক থেকে এই জমায়েত হুমকি তৈরি করতে পারে, এই প্রসঙ্গে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আজকেও তো পত্রিকায় এসেছে বাজারে মানুষজন যাচ্ছে। কাওরান বাজারের যে ছবি দেখেছি। বাজারে কিন্তু এরকম প্রতিদিনই ঘটছে। তাদের তো এই নির্দেশনা কেউই দিচ্ছি না আমরা। ফলে এখন কেউ যদি সতর্কতা অবলম্বন করে, তাহলে ভালো। কিন্তু বাজারঘাটে যেভাবে মানুষ যাচ্ছে, বিষয়টিকে সেই বিবেচনায় মনে করলে সহজ হয়।’

শনিবার বিকাল ৪টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন সিনিয়র মাদ্রাসা শিক্ষক নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘জানাজায় শরিক হতে তো কোনও আহ্বান জানানো হয়নি। আর মাইকে অনেকবার সামাজিক দূরত্ব, একজন-আরেকজন থেকে দূরে থেকে জানাজা পড়ার কথা বারবার ঘোষণা করা হলেও কেউ এটা মানেনি।’

তিনি নিজে এই জানাজায় ছিলেন জানিয়ে এই আলেম বলেন, ‘মাইকে বললেও কী হবে, জায়গা তো কম। মেইন রোডে অবস্থান নিয়েছে অনেকে। মাওলানা আনসারী অনেক জনপ্রিয়, বিশেষ করে সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট অঞ্চলে তিনি জনপ্রিয় বক্তা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়েছে। কিন্তু মানুষ আসলে বাধা দেওয়া যাবে কীভাবে।’

জেলা প্রশাসন অনেক চাপে আছে, মন্তব্য করে এই আলেম বলেন, ‘প্রশাসন চাপে আছে। এখন তো যার-যার এলাকায় চলে গেছে মানুষ।’

উল্লেখ্য, আজ শনিবার সকালে জামিয়া রাহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা এবং আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়তলা মাদ্রাসায় আসতে থাকে লোকজন। পরে সকাল ১০টার দিকে জানাজা শুরু হয়। মাদ্রাসা মাঠ ছাড়িয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে ছড়িয়ে যায় মানুষ। একদিকে বিশ্বরোড মোড় হয়ে সরাইলের মোড় পর্যন্ত, অন্যদিকে আশুগঞ্জের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে মানুষের ঢল। এছাড়া ওই এলাকার আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদেও মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। তবে সেখানে কিছু পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা ছিলেন এক রকম নীরব দর্শক। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, লোকজন চলে আসার পর তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি, তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত শনিবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় লকডাউন চলছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *