Home » তাহলে কাশ্মীরী কন্যা নাফিসা উমরের প্রার্থনা কি মঞ্জুর হয়ে গেল

তাহলে কাশ্মীরী কন্যা নাফিসা উমরের প্রার্থনা কি মঞ্জুর হয়ে গেল

নাফিসা উমর। কাশ্মিরের এক মেয়ে। যার একটি দোয়া (প্রার্থনা)-র কথা উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক অরবিন্দ মিশ্র। কাশ্মিরে লকডাউন ছিল দীর্ঘ সাতমাস। তার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন সাংসদকে এনে কাশ্মির পরিদর্শন করানোর করে ভারত সরকার। সেই পরিদর্শকদলের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় দেশের কয়েকজন ‘বাছাই করা’ সাংবাদিককে, যাতে কাশ্মির নিয়ে রিপোর্টিং করা হলেও তা যেন সরকারের প্রতিকূলে না যায়। সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন ইকোনমিক টাইমসের অরবিন্দ মিশ্র। কয়েকদিন আগে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ওই কাশ্মির ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি পোস্ট করেন, যেটি ভাইরাল হয়। এখানে পেশ করলাম সেই ভাইরাল হওয়া পোস্টটির সম্পাদিত বঙ্গায়ন :

শ্রীনগরের এক গলির মুখে একটি বাড়ির জানালায় দেখতে পাই এক পর্দানশীন মেয়েকে। মেয়েটি আওয়াজ দিতে আমি থেমে যাই। আমাকে দেখে বলেন, ‘ভাইয়া ! আপনি বিলালের বন্ধু, দিল্লিতে থাকেন, তাই না?’
আমি বললাম, হ্যাঁ।
তখন মেয়েটি বললেন, ‘বিলাল আপনার খুব তারিফ করে। বলে, আপনি খুব বুঝদার মানুষ। মানুষের দুঃখ বোঝেন। আমি নাফিসা উমর। বিলালের ফুফাতো বোন…’

সময়ের স্বল্পতা বুঝে মেয়েটি তাড়াহুড়ো করে যে কথাগুলো বলেছিলেন, তাঁর সেই কথাগুলো শুনে আমি কয়েকদিন ঘুমাতে পারিনি। আর সেই কথাগুলো আজ আপনাদের কাছে বলাটা জরুরি মনে করছি। নাফিসা বলেছিলেন :

‘যদি কোনো জায়গায় লাগাতার সাত মাস ধরে কারফিউ চলে,
বাড়ি থেকে বের হওয়া দূরের কথা, বাইরে উঁকি দেওয়াও কঠিন হয়,
এলাকাজুড়ে ৮–৯ লক্ষ সেনা মোতায়েন থাকে,
ইন্টারনেট বন্ধ থাকে,
মোবাইল বন্ধ থাকে,
ল্যান্ডলাইন ফোনও বন্ধ থাকে,
বাড়ি বাড়ি থেকে শিশু-যুবক-বৃদ্ধসহ হাজারো বেকসুরদের গ্রেফতার করা হয়ে থাকে,
ছোট-বড় সমস্ত নেতাদের জেলবন্দি করা হয়ে থাকে,
স্কুল-কলেজ-দপ্তর সব বন্ধ থাকে,
তাহলে কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে মানুষ?
তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা কী হবে? অসুস্থদের অবস্থা কী হবে?
এসব কথা ভাবার মতো কেউ নেই।
যদি এলাকার জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ অবসাদে ভুগতে ভুগতে মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়ে পড়ে,
বাচ্চারা আতঙ্কিত হয়ে থাকে,
ভবিষ্যৎ থাকে অন্ধকারে,
নির্যাতন-নিপীড়ন চরমে পৌঁছয়,
আলোর কোনো রেখা দেখা না যায়,
অবস্থা ভালো করার মতো কেউ যদি না থাকে
এবং গোটা দুনিয়া চুপচাপ তামাশা দেখতে থাকে…’

নাফিসা এরপর কাঁদতে কাঁদতে বলেন :

‘আমরা সব সহ্য করছি। যথেষ্ট সহ্য করছি। কিন্তু ওই সময় অন্তর কেঁদে ওঠে, মনটা বড়ো ছটফট করে, যখন শুনতে হয়, ওদিকের কিছু লোক বলে, ”ভালোই হয়েছে, ওদের সঙ্গে এরকমই হওয়া দরকার ছিল”! তবুও আমরা ওদের জন্য, কিংবা অন্য কারোর জন্যেও, কখনো বদদোয়া করিনি, অভিশাপ দিইনি। কারোর খারাপ চাইনি। শুধু একটাই দোয়া/প্রার্থনা করেছি, যাতে সমস্ত মানুষ এবং গোটা দুনিয়া আমাদের অবস্থা কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারে। অরবিন্দ ভাইয়া, আপনি দেখে নেবেন, আমার প্রার্থনা খুব শীঘ্রই মঞ্জুর হবে।’

এবার আমি জানতে চাইলাম, ‘আপনি কী প্রার্থনা করেছেন, বোন?’

তখন নাফিসা ডুকরে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে যা বলেছিলেন—আমার কানে অনেক দিন বেজেছে—এখন চোখের সামনে দেখতেও পাচ্ছি—তাঁর ব্যথা অনুভব করার চেষ্টা করবেন, হুবহু তাঁর কথাগুলোই তুলে ধরছি :

‘ইয়া আল্লাহ ! যাকিছু আমাদের ওপর হচ্ছে তা যেন অন্য কারোর উপর না হয়, শুধু তুমি এমন একটা কিছু করে দাও যাতে গোটা পৃথিবী কিছুদিনের জন্য নিজেদের ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য হয়, সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়, থেমে যায়। তাহলে হয়তো দুনিয়া এটা অনুভব করতে পারবে যে, আমরা বেঁচে আছি কেমন করে !’

আজ আমরা সবাই যে যার ঘরে বন্দি। আমার কানে নাফিসার সেই কথাগুলো যেন বাজছে—

‘ভাইয়া, আপনি দেখে নেবেন, আমার দোয়া খুব শীঘ্রই কবুল হবে…!’

আল্লাহ কাশ্মীরীদের রক্ষা করো,  আমিনআল্লাহুম্মা আমিন  ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *