ক্যালেন্ডারের পাতায় আজ ১৩ এপ্রিল। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের গৌরবান্বিত এক দিন। ঘরবন্দি থাকা সময়টাতে গৌরব উজ্জ্বল সেই টাটকা স্মৃতির বিস্তারিত সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার জন্যই এই লেখাটি আমার ক্ষুদ্র এক প্রয়াস। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়া এই ম্যাচের বিবরণ নানাভাবে নানা আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়তো যাবে, কিন্তু যতই তুলে ধরা হোক এই অর্জনের মাহাত্ত কি কখনো লেখার অক্ষরে বা মুখের ভাষায় প্রকাশ করা যায়? এমন কিছু অর্জন থাকে যা অনুভব করেই উপলব্ধি করা যায়, পড়ে বা শুনে নয়! এই লেখার মাধ্যমে সামান্য চেষ্টা করা হয়েছে অতীতের গৌরবময় এমন স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য। কারণ পরে আইসিসি ট্রফি জয়ের ফলেই আমরা খেলতে পেরেছিলাম বিশ্বকাপ, পেয়েছিলাম দ্রুতই ওয়ানডে আর টেস্ট স্ট্যাটাস।
আইসিসি ট্রফির সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকেট নেয়ার পাশাপাশি ফাইনাল খেলাও নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ফাইনালে প্রতিপক্ষ তখনকার শক্তিশালী দল কেনিয়া, যারা ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ খেলেছিল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭৩ রানে হারিয়ে তখন ওয়ানডে ফরম্যাটে ইতিহাসের সেরা অঘটনের জন্ম দিয়েছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশের ২০০৫ সালে অজিদের হারানোর পর এই ম্যাচটাকেই এখনও সবচেয়ে বড় অঘটন হিসেবে গণ্য করা হয়। সেমিফাইনাল ম্যাচের মতো ফাইনাল ম্যাচেও যথারীতি বৃষ্টি বাগড়া দিয়েছিলো। রিজার্ভ ডে থাকার কারণে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় দুইদিন ধরে খেলা হবে। এক দল প্রথম দিন ও আরেক দল দ্বিতীয় দিন ব্যাট করবে। খেলা হবে ৫০ ওভার।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আকরাম খান টস জিতে ভারী আউটফিল্ড থাকার কারণে ফিল্ডিং বেঁছে নেন। টাইগার পেসার সাইফুল ইসলাম প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেন আসিফ করিমকে বোল্ড করে। শুন্য রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে বসে কেনিয়া। দলীয় ১৫ রানে ওয়ান ডাউনে নামা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান কেনেডি ওটিয়েনো এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান, বোলার সেই সাইফুল। তারপর সঞ্জীব গুপ্তা ও কেনিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভ টিকোলো দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন। উল্লেখ্য, টিকোলোর ব্যাটিং সেই সময় বিশ্ব ক্রিকেটেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল তার ক্ল্যাসিক শটের জন্য এবং দীর্ঘ ইনিংস খেলতে পারার জন্য। সঞ্জীব গুপ্তা-স্টিভ টিকোলো জুটি ৪৩ রান যোগ করার পর কেনিয়ার দলীয় ৫৮ রানে খালেদ মাহমুদের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান গুপ্তা। তারপর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মরিস উদম্বে। এই জুটি বাংলাদেশের বোলারদের নাকাল করে ছেড়ে দেয়। অনেকটাই ফেভিকলের আঠার মতো তাদের জুটি লেগে যায় ক্রিজে আর রান করতে থাকে সাবলীলভাবে। টিকোলো তো রীতিমত শাসন করতে লাগলো বাংলাদেশি বোলারদের। চতুর্থ উইকেটে টিকোলো-উদম্বে ১৩৮ রানের জুটি গড়ে ফেলার সময় বিশাল রানের পাহাড়ে চাপা পড়ার শঙ্কায় তখন কোটি টাইগার সমর্থকদের মনে। এমন সময়ে ত্রাতা হয়ে আসলেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ রফিক। ব্যক্তিগত ৪৩ রান করে পাইলট তার বলে উদম্বেকে স্ট্যাম্পিং করলে ১৯৬ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন হয় কেনিয়ার। পরে কেনিয়ার পেস অলরাউন্ডার টমাস ওদোয়ো দলীয় ২১২ রানের সময় মাত্র ১ রান করে বোল্ড হয়ে যায়। রানের গতি তখন কমতে শুরু করে। দলীয় ২৩০ রানে খালেদ মাহমুদের বলে সাইফুল দারুণ এক ক্যাচ ধরলে শেষ হয় স্টিভ টিকোলোর ১৪৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস, যা তিনি খেলেছিলেন ১২টি চার ও ৩ ছক্কার সাহায্যে। ১৫২ বলে খেলা এই ইনিংস ছিল প্রথমে ধরে খেলা তারপর মেরে খেলার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। টিকোলো আউট হলে রানের পাহাড়ে চাপা পড়ার সব সংশয় দূর হয়ে যায়, কারণ ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর কেনিয়ার টেল এল্ডাররাই ব্যাট করতে আসা বাকি ছিল। শেষ ওভারের শেষ বলে টনি সুজিকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন রফিক, কেনিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৪১ রান। কেনিয়ার ইনিংস শেষের মধ্য দিয়ে প্রথমদিনের খেলার সমাপ্তি ঘটে। একটা সময় টিকোলো আর উদম্বে এমনভাবে ব্যাট করছিল যে রান ৩০০ এর কাছাকাছি যাবে মনে হচ্ছিল। কিন্তু পরে উইকেট তুলে বোলাররা ম্যাচে ফিরিয়ে আনে দলকে। রফিক ৩টি , সাইফুল ও সুজন ২টি করে উইকেট নেন। ২৪১ বড় রান না হলেও বৃষ্টি ভেজা মাঠ বিবেচনায় মোটেও কম রান ছিল না। কন্ডিশন নিয়ে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ নিয়েই সেদিন রাত পার করে দেশবাসী। তবে অজানা এক আত্মবিশ্বাস ১১ কোটি মানুষের হৃদয়ে ভর করেছিল যে আমরাই জিততে চলেছি।
১৩ এপ্রিল ১৯৯৭, বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টায় খেলা শুরু হবে। বেতার ছেড়ে বসে আছে দেশবাসী। ভেসে আসল চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাতের কণ্ঠ। চরম দুঃসংবাদ! মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে কুয়ালালামপুরে, ম্যাচ অনিশ্চিত! মাঠের ড্রেনেজ সিস্টেম তেমন ভালো নয়। আগের দিন সারারাত বৃষ্টির পর সকালেও তা থামেনি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যেন একেবারেই অনুকূলে ছিল না। একসময় বৃষ্টি থামলেও মাঠ পানিতে ভেসে গেছে! ম্যাচ আদৌ হবে কি না, সেই নিয়ে তখন দুশ্চিন্তায় প্রহর পার করতে শুরু করলো কোটি বাঙালি। তারপর যা হয়ে গেল তা ক্রিকেট ইতিহাসে আর কোনোদিন হয়েছে বলে জানা নেই। বহুসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি যারা খেলা দেখতে মাঠে ছিলেন, তারা পানি ভরা মাঠে নেমে স্বেচ্ছায় গ্রাউন্ডসম্যান হয়ে গেলেন! তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীও তাদের সাথে যোগ দিলেন! বালতি-বেলচা, ঝাড়ু আর তোয়ালে যে যেভাবে পেরেছেন, তাই নিয়ে কাজ শুরু করলেন সবাই, যাতে যেকোনো মূল্যে খেলা শুরু করানো যায়। ভাবা যায়, কতটা দেশপ্রেম থাকলে উপস্থিত সকলে এমনটা করতে পেরেছিলেন। আসলে সেই প্রবাসীরা ছিলেন কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের নেপথ্যের অবিসংবাদিত মহানায়ক! আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের হোমড়া চোমড়া কর্তারাও একই কাজ করেছিলেন! এটাও বোধহয় ইতিহাসে নাই। অনেক বাংলাদেশি দেশ থেকেও গিয়েছিলেন ঐতিহাসিক এই ফাইনাল ম্যাচ দেখার জন্য। দেশের তারকা খ্যাতি নিয়ে চলা একাধিক মানুষজন মাঠ পরিচর্যায় নেমেছিলেন। শুধু দেশের জন্য! কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীর ক্রিকেট মাঠে গ্রাউন্ডসম্যান হয়ে যাওয়া ইতিহাসে নেই, এটা অন্তত চ্যালেঞ্জ করে বলাই যায়! ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত খ্যাতিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী যেন আরেক রকম সংগ্রামে নেমেছিলেন! ম্যাচ মাঠে গড়ানোর সংগ্রাম!
একসময় মাঠ থেকে পানি সরানো গেল, সূর্য মামা উঁকি দিল! মাঠ শুকানোর পালা এবার। অবশেষে এলো সুখবর! সবার অক্লান্ত, আন্তরিকতা আর অবিশ্বাস্য পরিশ্রমের পর জানা গেল বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় শুরু হবে ম্যাচ! এই ঘোষণার পর যেন চিৎকার করে উঠল টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া! অনেক দেরিতে ম্যাচ শুরু হওয়াতে জানাই ছিল ওভার অনেক কমে যাবে। তখনকার নিয়ম ছিল কোনো দলকে কমপক্ষে ২৫ ওভার ব্যাট করতে হবে। সেই সময় পাওয়া না গেলে ম্যাচ পরিত্যক্ত হবে। কোনোমতে ২৫ ওভারই পাওয়া গেল। কিন্তু বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়াল ১৬৬ রান। দেশবাসীর মাথায় হাত! ওভারে ৬ এর ওপরে রান তুলতে পারবে তো তারা? এমন প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাওয়ার পাশাপাশি চিন্তায় তখন কাতর দেশের মানুষ। প্রসঙ্গত, সেই ঘটনার আট বছর পর ২০০৫ সালে প্রথমবার আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ হয়েছে। আর তখনকার যুগে প্রতি ওভারে ৬ এর উপরে রান তাড়া করে জেতার ঘটনা ছিল হাতে গোনা। আর বাংলাদেশের তো এমন কীর্তি গড়ার তখন পর্যন্ত রেকর্ডই ছিল না।
কোটি মানুষের আশঙ্কার ভেতরেই দুই ওপেনার ব্যাট করতে নামলেন। এখানেই চমক, দুর্জয়ের সাথে আতাহারকে না নামিয়ে পাঠানো হলো হার্ড হিটিং করতে পারা রফিককে! অর্থাৎ জয়ের জন্য যা করা দরকার তেমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল টিম ম্যানেজমেন্ট। স্ট্রাইকে তখন দুর্জয়, তিনি প্রথম ওভারের প্রথম বলেই পেসার মার্টিন সুজির বলে বোল্ড হয়ে গেলেন। শুরুতেই এমন আঘাত ছিল টাইগার সমর্থকদের জন্য হৃদয়ে বজ্রাঘাত! তারপর নান্নু ব্যাট করতে নামলেন আর রফিক ঝড় তোলা শুরু করলেন। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করে রফিক খুব দ্রুত নান্নুর সাথে ৫০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। ঠিক তখনই ১৫ বলে ২ চার আর ২ ছক্কার কল্যাণে ২৬ রান করে রফিক আউট হয়ে যান। দলীয় ৬৩ রানে নান্নুও ব্যক্তিগত ২৬ রান করে আউট হয়ে গেলে দল একটু চাপে পড়ে যায়। তারপর অধিনায়ক আকরাম খান আর সহ-অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল দারুণ একটা সময় উপযোগী জুটি গড়েন। আকরাম খান এমন এক বিশাল ছক্কা মেরেছিলেন, যা স্টেডিয়ামের বাইরে চলে যায়! রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে দারুণ এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। আকরাম-বুলবুল ৫৩ রানের জুটি গড়ার পর আসিফ করিমের বলে ৩৭ রান করে বোল্ড হয়ে যান বুলবুল। দলের রান তখন ১১৬, জয় থেকে মাত্র ৫০ রান দূরে। বুলবুল আউট হলেও সোজাই মনে হচ্ছিল এই মহামূল্যবান জুটির পর হাতে ৬ উইকেট থাকার কারণে। কিন্তু দলের ১১৮ রানে আকরাম ব্যক্তিগত ২২ রান করে ও ১২৩ রানে এনামুল হক মণি মাত্র ৫ রান করে আউট হলে কেনিয়া ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরে আসে এবং চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ক্রিজে তখন সাইফুল ইসলাম আর অভিজ্ঞ বীর সেনানী খালেদ মাসুদ পাইলট। দলের প্রয়োজনে ১৩ বলে ১৪ রানের মহামূল্যবান একটা ছোট অথচ ইতিহাস গড়তে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেললেন সাইফুল। যার ভেতর একটা ছক্কার মার ছিল। ১৩৯ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসাবে সাইফুল আউট হলে দল আবার বিপদে পড়ে। রান রেট বাড়তে শুরু করেছে আর উইকেট পড়ে যাচ্ছে একের পর এক। এরপর সুজন ক্রিজে আসলেন। পাইলট একটি ছক্কা এবং খালেদ মাহমুদ সুজন একটি বাউন্ডারি মারায় একটু স্বস্তি ফিরে আসে টাইগার শিবিরে। কিন্তু জয় থেকে ১৫ রান দূরে থাকতে সুজন মাত্র ৫ রান করে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হলে ৮ উইকেট পড়ে যায় টাইগারদের।
২৪ ওভার শেষ, রান তখন ৮ উইকেটে ১৫৫। শেষ ৬ বলে ১১ রান দরকার। ১১ কোটি মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসছে এমন এক অবস্থা। সারা বাংলাদেশ থমকে গেছে আর রেডিওতে কান পেতে আছে! গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশিদের চিৎকার বেতারেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল! কেনিয়ার অধিনায়ক মরিস উদম্বে শেষ ওভারে বল তুলে দিলেন মার্টিন সুজির হাতে। স্ট্রাইকে পাইলট মাঠের চারপাশের গ্যাপ দেখে নিচ্ছিলেন বেশ সময় নিয়ে। তার আগে তিনি অপর প্রান্তে থাকা হাসিবুল হোসেন শান্তর সাথে কথা সেরে নিলেন। কেনিয়ার ফিল্ডাররাও লম্বা সময় নিল কথা বলায়। তারপর শুরু হলো শেষ ওভার! এই ওভারেই হয়ে যাবে ম্যাচের ফয়সালা! ওভারের প্রথম বলে ফুলটস পেয়ে পাইলটের স্ট্রেইট শটে বল গ্যালারিতে, যার মানে ছক্কা! ৫ বলে দরকার ৫ রান। কাঁপছে গোটা বাংলাদেশ, কাঁপছে কিলাত ক্লাব মাঠ। পরের বলে সুজি ভালো কামব্যাক করলো। টাইমিং হলো না, ডট বল। সমীকরণ তখন ৪ বলে দরকার ৫ রান। পরের বল লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে যাওয়ায় হয়ে গেল ওয়াইড! তখন বাংলাদেশের জয়ের জন্য চাই ৪ বল ৪ রান! পরের বল সুজি ভালো করলেও পাইলট কোনোমতে বল ব্যাটে লাগিয়ে সজোরে দৌড়, সাথে শান্তও ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়ালে ১ রান নিলে সমীকরণ দাঁড়ায় ৩ বলে ৩ রান। বুক থেকে হৃদপিণ্ড বেরিয়ে আসছে এমন অবস্থা বেতারে কান পেতে থাকা কোটি মানুষের! চতুর্থ বলে শান্ত স্ট্রাইকে ছিল, কিন্তু টাইমিং করতে না পারায় রান হলো না, তাই তখন ২ বলে দরকার ৩ রান! এ সময় বাংলাদেশ দলের ডাগআউটে ভীষণ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে! দলের খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজার, বোর্ড কর্মকর্তা, তৎকালীন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের ও তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ সবাই চিৎকার করছে উত্তেজনায় আর ব্যাটসম্যানদের কি যেন বলছিলেন, যা খেলোয়াড়দের পক্ষে আসলে পক্ষে ক্রিজে থেকে শোনা সম্ভব ছিল না! পরের বল শান্তর জোরালো শট! সবাই ধরে নিয়েছে এটাই উইনিং শট! কিন্তু ভেজা আউট ফিল্ডে শটের গতি থাকলেও বল গড়ানোর সময় স্লো হয়ে যায় বাউন্ডারি লাইনে থাকা ফিল্ডারের দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর দ্রুত থ্রো করায় ২ রানের বেশি হলো না। অর্থাৎ শেষ বলের নাটকীয়তা, ১ বলে ১ রান! তখনকার ডার্ক লুইস মেথডের হিসাব অনুযায়ী ১ রান নিতে না পারলে ম্যাচে টাই হতো না, দশমিকের ব্যবধানে কেনিয়া বিজয়ী হয়ে যাবে এমন অবস্থা! শেষ বলের আগে দুই দলই সময় পার করছিল কথা বলায়। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনারত। পরে দৌড় শুরু করলেন সুজি, প্রস্তুত শান্ত। শেষ বলটি লেগ স্ট্যাম্পের বাহিরে বের হতে যাওয়ার আগেই তা শান্তর প্যাডে লাগার সঙ্গে সঙ্গে শান্ত আর পাইলটের ভো দৌড়! বল চলে গেল ফাইন লেগে থাকা ফিল্ডারের হাতে আর ১ রান নেয়ার সাথে সাথে চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত বলে উঠলেন চিৎকার করে- ”এবং বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি ১৯৯৭ সালের চ্যাম্পিয়ন’! সাথে সাথেই উৎসবের দেশ হয়ে গেল বাংলাদেশ! কিলাত ক্লাব মাঠে ভরে গেল বাংলাদেশি সমর্থকে! খেলোয়াড়রা তখন কিছুতেই আবেগ সামলাতে পারছিলেন না। আসলে ১১ কোটি মানুষের কেউ পারেনি! বাংলা নববর্ষের আগের দিনটায় দেশবাসী এমন আনন্দঘন আর আবেগময় মুহূর্তের অপেক্ষাতেই ছিল! গোটা দেশ তখন মেতে উঠেছিল রঙ খেলায়। রাস্তায় নামা মানুষজন কেউ সেই রঙ লাগা থেকে রেহাই পাননি! এমন অবিস্মরণীয় অর্জন নিয়ে আসলে লেখা শেষ হওয়ার নয়। কারণ এই বিজয় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর আবারো সবাইকে এক সুতোয় গাঁথতে পেরেছিল।
বার্তা বিভাগ প্রধান