কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে হামলা চালিয়ে বড় ভাইকে গুরুতর আহত ঘটনায় হামলাকারী ভাইয়ের বিরুদ্ধে তদন্তকারী পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে।
আহত শামসুল হক জাহাঙ্গীর এর স্ত্রী রোমানা আক্তার রবিবার বিকাল ৩ টায় বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কমলগঞ্জ ইউনিটের শমশেরনগরস্থ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।
তবে অভিযুক্ত আশরাফুল হক বদরুল অভিযোগ অস্বীকার করে বড় ভাই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রোমানা আক্তার বলেন, আমার স্বামী শামসুল হক জাহাঙ্গীর এর ছোট ভাই সাবেক পৌর কাউন্সিলর আশরাফুল হক বদরুলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে বদরুল আমার স্বামীকে আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় মামলা (নং-০৪/২০১৬) করে। এ ঘটনায় গত ৪ এপ্রিল আমি ও আমার স্বামী কমলগঞ্জ পৌর মেয়র এর কাছে গিয়ে বিষয়টি আপোষে নিষ্পত্তির অনুরোধ করি। মেয়র এর কাছে যাওয়ার কারনে বদরুল ও তার বড় ভাই আলমগীর এবং আলমগীরের স্ত্রী পারভীন আক্তার ক্ষুব্ধ হয়ে ঐ দিন বিকালে বাসায় ঝগড়াঝাটি করে ও আমাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
পরদিন ৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় আমার পিত্রালয়ে যাওয়ার পথে বদরুল ও তার সহযোগিরা পৌর এলাকার বালিগাঁও গ্রামের পেট্রোল পাম্পের কাছে যাওয়ার পর আমার স্বামীকে পথরোধ করে স্ট্যাম্পে সই দিতে বলে। সই না দেয়ায় বদরুল ও তার সহযোগিরা অস্ত্রসস্ত্র যোগে আক্রমণ করে আমার স্বামী শামসুল হক জাহাঙ্গীর এর উপর হামলা চালিয়ে বামচোখে আঘাত করে। তাকে দ্রুত কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করলে অবস্থা গুরুতর থাকায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মৌলভীবাজার চক্ষু হাসপাতালে রেফার করা হয়। এ ঘটনায় আমার স্বামী বাদী হয়ে আশরাফুল হক বদরুল সহ তিনজনকে আসামী ও অজ্ঞাতনামা দিয়ে ৬ এপ্রিল কমলগঞ্জ থানায় মামলা (নং-৪/২০১৮) করেন।
থানায় মামলা দায়েরের পর আসামী বদরুল প্রভাব বিস্তার করে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাজেদুল কবির ও হারবাল সহকারী রাধাকান্ত পালের সাথে যোগসাজষ করে একটি সাধারণ জখমের মেডিকেল রিপোর্ট প্রেরণ করে। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সাথে আতাত করে আরও একটি সাধারণ রিপোর্ট প্রেরণ করে। অভিযুক্ত বদরুল নিজের প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে আমার স্বামীর মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সুরুজ আলীকেও প্রভাবিত করায় তিনি আসামী গ্রেফতার করছেন না। অপরদিকে বদরুল তার আত্মীয় স্বজনকে দিয়ে আমাকে ও আমার স্বামীকে হয়রানির করার উদ্দেশ্যে মৌলভীবাজার আদালতে পরপর দু’টি মামলা দায়ের করে। এসব ঘটনায় রোমানা আক্তার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার দাবি করেন।
তবে অভিযুক্ত আশরাফুল হক বদরুল অভিযোগ অস্বীকার করে বড় ভাই জাহাঙ্গীর এর সাথে বিরোধ চলছে স্বীকার করে বলেন, তিনি মাদকাসক্ত। মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাছাড়া চিকিৎসক ও তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করার কোন প্রশ্নই উঠে না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুরুজ আলী বলেন, অভিযোগে হামলার কথা বলা হলেও কেউ কেউ বলছেন দুর্ঘটনা। তাই অভিযোগ তদন্তাধীন আছে। মামলার দুই আসামী আদালতের জামিনে ও একজন পলাতক আছেন। কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জরুরী বিভাগে মোবাইলে ফোন দিলে ডা. সাজেদুল কবির বলেন, আমি জেলা সিভিল সার্জন অফিসে মিটিং এ আছি। হাসপাতালের হারবাল সহকারী রাধাকান্ত পাল বলেন, তাদের অনুরোধে ডাক্তার আমার মাধ্যমে মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছেন। তবে রিপোর্টে যা আছে তাই দেয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইয়াহিয়া বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক ও হারবাল সহকারীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে।
নির্বাহী সম্পাদক