বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে একেবারে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৮ ই মার্চ দেশে প্রথম কোন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে সনাক্ত হবার পর থেকে যে কেউ মারা গেলেই তাকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
যে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা মৃত্যুবরণ করলে সেই পরিবারকে কার্যত একঘরে করে করে দেবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
ফেনী জেলার বাসিন্দা মো: নূর উন নবী নারায়ণগঞ্জে একটি মাছের আড়তের ম্যানেজার ছিলেন। সম্প্রতি তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পর জ্বরে ভুগতে থাকেন।
তখনই থেকে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে যায় এই ভেবে যে নূর-উন-নবী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এরপর থেকে তার পরিবার রীতিমতো একঘরে হয়ে পড়েন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষা করার জন্য তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর কয়েকঘন্টা পরে নূর-উন-নবী মারা যান।
তার জানাজায় পরিবারের চারজন সদস্য ছাড়া আর কেউ অংশ নেয়নি। প্রশাসনের নজরদারির মধ্যে তার দাফনও হয়।
গতকাল নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে আসে যে মৃত নূর উন নবী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। তার ছেলে নূরউদ্দিন বাদশা বলছিলেন, এলাকায় যে কোন অসুস্থতাকে এখন করোনাভাইরাস বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
“এলাকার মানুষ তো হান্ড্রেড পার্সেন্ট ধরে নিয়েছিল যে উনি করোনাভাইরাসে মারা গেছে। যে কারো হাঁচি-কাশি হলেই ধরে নিচ্ছে যে এটা করোনাভাইরাস,” বলছিলেন মি: বাদশা।
কয়েকদিন আগে সুনামগঞ্জের একটি খবর ফেসবুকে বেশ আলোচিত হচ্ছিল। একটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল দুই ভাই এবং বাবা কাঁধে নিয়ে এক তরুণকে দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছে। যে যুবকের মৃত্যু করোনাভাইরাসে হয়েছে বলে সন্দেহ করে এলাকাবাসী। ফলে তার মৃতদেহ বহন কারার জন্য মসজিদ থেকে কোন খাটিয়া দেয়া হয়নি। মৃত সালাম মিয়ার মা ছালেমা আক্তার বলছিলেন তার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে জন্ডিসে ভুগছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর এলাকাবাসী তাদের রীতিমতো একঘরে করে দেয়।
“সমাজ আছে না আমরার, তারা বলছে মরলে তোমরা মরো, আমরা মরতাম তাম না,” বলছিলেন ছালেমা খাতুন।
তবে এমন বেশ কিছু ঘটনাও দেখা গেছে যে মৃত্যু পর পরীক্ষার ফলাফলে তার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গড়ে আড়াই হাজারের মতো মানুষ মারা যায়।
এর একটি বড় অংশ হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তাৎক্ষনিখভাবেই মৃত্যুবরণ করছে।
কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে দেখা যাচ্ছে, মৃত্যু মানেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন – এমন ধারণা বেশ প্রবল।
“এ ধারণার কারণে এখন কেউ যদি প্রকৃতই করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ থাকে তাহলে তারা সেটি প্রকাশ করছেন না”, বলছিলেন বাংলাদেশের সংক্রামক রোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন।
মি: হোসেন বলেন, ব্যাপকভাবেই মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা হয়েছে যে মৃত্যু মানেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের একটি বড় অংশের মানুষের মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ আর আতঙ্ক থাকলেও সচেতনতা নেই। যেসব ব্যক্তি অন্যদের একঘরে দিচ্ছেন, তারাও নিজেরাও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মানছেন না ।বিবিসি
নির্বাহী সম্পাদক