Home » মৃত্যুর আগে বরিস জনসনের উদ্দেশে যা বলেছিলেন বাংলাদেশি চিকিৎসক

মৃত্যুর আগে বরিস জনসনের উদ্দেশে যা বলেছিলেন বাংলাদেশি চিকিৎসক

যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ২০ দিন আগেও পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশি চিকিৎসক আব্দুল মাবুদ চৌধুরী। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পিপিই সরবরাহ করতে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। গত ১৮ মার্চ ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে উল্লেখ করে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, আর সব মানুষের মতো করে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও পরিবার-পরিজন নিয়ে রোগমুক্তভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত করোনাই কেড়ে নিলো তার প্রাণ। চলে যেতে হলো পরিবার-পরিজন ছেড়ে। বুধবার (৮ এপ্রিল) লন্ডন সময় সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ব্রিটিশ বাংলাদেশি চিকিৎসক আব্দুল মাবুদ মারা যান। লন্ডনের রমর্ফোডের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তার স্ত্রী ডা. রানী চৌধুরীও লন্ডনের নিউহাম হাসপাতালের চিকিৎসক। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে ইন্তিসার চৌধুরীর বয়স ১৮ বছর। আর মেয়ে ওয়ারিশা চৌধুরীর বয়স ১১ বছর। গত ১৮ মার্চ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই চেয়ে এক ফেসবুক পোস্টে মাবুদ লিখেছিলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, দয়া করে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার (এনএইচএস) অধীনে কর্মরত সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য জরুরিভিত্তিতে পিপিই নিশ্চিত করুন।’ স্বাস্থ্যকর্মীদের সরাসরি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করেছিলেন তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। লিখেছিলেন, ‘মনে রাখবেন, আমরা হয়তো চিকিৎসক/নার্স/এইচসিএ/সহকারি স্বাস্থ্যকর্মী যারা সরাসরি রোগীর সংস্পর্শে আসছি, তবে একইসঙ্গে আমরা মানুষও। স্বাস্থ্যকর্মীদেরও অন্য সব মানুষের মতো পরিবার-পরিজন নিয়ে রোগমুক্তভাবে বাঁচার মানবিক অধিকার রয়েছে। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানরা মেডিক্যালে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে রোগীদের সহযোগিতা করতে আমাদের দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।’ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এই চিকিৎসকের ১৮ বছর বয়সী ছেলে ইন্তিসার চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাবা কারও ত্রুটি ধরিয়ে দিতে ভয় পেতেন না। কারণ তিনি মানুষের কথা ভাবতেন। তিনি তার সহকর্মীদের কথা ভাবতেন। পরিবারের কথা ভাবতেন। এমনকি যাদের সঙ্গে কখনও দেখা হয়নি তাদের কথাও ভাবতেন। তিনি সবার কথা ভাবতেন। সবার প্রতি তার যে ভালোবাসা ছিল তা তার জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছিল। তিনি একজন বীর।’ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে বাবার সঙ্গে কাটানো শেষ মুহূর্তের কথা উল্লেখ করে ইন্তিসার বলেন, আমি তার হাত ধরে বসে থেকেছি। তার পাশে বসে প্রার্থনা করেছি। তিনি খুব শান্ত ছিলেন। আমি শুধু তাকে বলেছি— আমি তোমায় ভালোবাসি, বাবা। ইন্তিসারের ছোট বোন ১১ বছর বয়সী ওয়ারিশা চৌধুরী  বলেছে, ‘বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম, তাকে ছাড়া আমার ফাঁকা লাগছে। তিনি খুব দ্রুত চলে গেলেন, এটা তার চলে যাওয়ার সময় নয়। তিনি ছিলেন এক আশীর্বাদ, এতো দ্রুত তার চলে যাওয়ার কথা ছিল না।’ ইন্তিসার ও ওয়ারিশা দু’জনই জানিয়েছে, বাবার মতোই তারাও বড় হয়ে স্বাস্থ্যকর্মী হতে চায়। মাবুদের পারিবারিক বন্ধু গোলাম রাহাত খান জানান, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাওয়ার অনেক আগে থেকেই তা নিয়ে ডা. মাবুদ চিন্তিত ছিলেন। ‘তিনি (মাবুদ) আমাকে ও অন্য বন্ধুদের বলতেন যে করোনাভাইরাস খুব বিপজ্জনক।’ ডা. মাবুদ জীবনপ্রিয় মানুষ ছিলেন উল্লেখ করে রাহাত বলেন, ‘তিনি গান গাইতে পছন্দ করতেন, আমাদের নিজস্ব বাঙালি সংস্কৃতিকে ভালোবাসতেন এবং ব্রিটিশ ঐতিহ্যগুলো পছন্দ করতেন। তিনি খুব যত্নবান মানুষ ছিলেন, প্রায়সময়ই তিনি আমাদেরকে তার বাড়িতে ডাকতেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি আমার সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়। ওইদিন আমার ছেলের অষ্টম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমাদের বাসায় এসেছিলেন।’ আব্দুল মাবুদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দ্য মুসলিম ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। এক বিবৃতিতে প্রয়াতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে তারা।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *