‘নিউট্রন বোমা বোঝ মানুষ বোঝ না’। ছ’টি শব্দ মাত্র, কিন্তু বিসুভিয়াসের আগ্নেয়গিরির মতো উদগীরণ এর। কবি হেলাল হাফিজের কবিতা।
পৃথিবীর সকল দেশেই অস্ত্র মজুদ, অস্ত্র তৈরি এবং এগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহার বা ‘সফল পরীক্ষা’ – এতসব দম্ভ আর অহংবোধের ঝনঝনানি শুনা যায় প্রায়শই। চীনের ভয়ংকর যুদ্ধাস্ত্র ‘রেলগান’ এতই বিধ্বংসী যে, সেকেন্ডে আড়াই কিঃমিঃ বেগে দুইশ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে সে আঘাত হানতে পারে। কি, পিলে চমকাচ্ছেন! যুদ্ধের বিশ্বমঞ্চ চট্টগ্রামের লালদিঘীর মাঠ নয় যে এখানে জব্বারের বলিখেলা হবে। যুদ্ধবনিক বা যুদ্ধ খেলুড়েদের কাছে রেলগান, মেশিনগান এগুলো আমাদের আগেকার সাতঘাটি চাকুর মতো।
‘কালাশনিকভ’ – এই নামে অনেকের বিভ্রম লাগলেও একে-৪৭ রাইফেলের নাম শুনেননি এমন কাপুরুষ পৃথিবীতে বিরল। রাশিয়ান সেনা কর্মকর্তা মিখাইল কালাশনিকভ একে-ফোর্টি সেভেনের উদ্ভাবক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধাহত এ সৈনিক হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এই মারণাস্ত্রের নকশা তৈরি করেছিলেন। বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত এ অস্ত্র গিনেস রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে। কল্পনারও অধিক প্রাণঘাতী কালাশনিকভের বুলেটের আঘাতে বিশ্বে প্রতিবছর আড়াই লাখ মানুষের প্রাণ যায়। মিখাইল কালাশনিকভের উদ্ভাবিত এ রাইফেল কয়েকটি দেশের জাতীয় পতাকায় স্থান পেয়েছে। মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে, বুরকিনো ফাসো এবং পূর্ব তিমূরের জাতীয় পতাকায় এর ছবি আছে। লেবাননের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহর পতাকায়ও আছে কালাশনিকভের ছবি। মিখাইল কালাশনিকভ একজন কবিও বটে। রাইফেলের মতো আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করলেও আজীবন কবিতার সাধনা করেছেন তিনি। তবে আক্ষেপ করে বলেছেন, আগ্নেয়াস্ত্র না করে যদি কৃষকের কাজে আসে এমন কিছু উদ্ভাবন করতে পারতাম!
বলা যেতে পারে মিখাইলের বিখ্যাত কবিতা – একে৪৭ কালাশনিকভ।
নিজের কাছেই মনে হচ্ছে লেখাটি অস্ত্রের বিজ্ঞাপন। একটু টার্ন করে বলি রেলগান, কালাশনিকভ, স্নাইপার, ডিএসআর-৫০ এসব প্রাণঘাতীদের ছাড়িয়ে এই মুহূর্তে বিশ্বে প্রলয়ঙ্করী মারণাস্ত্রের নাম কোভিড-১৯। করোনা ভাইরাস নামে সর্বত্র পরিচিত এ লোমহর্ষক মারণাস্ত্র মাইক্রোস্কোপিক। এর কণার ব্যাস ১শ ২০ ন্যানোমিটার, উদ্ভাবক অজানা। অতি ক্ষুদ্রকায় এ ভয়ংকর অস্ত্রের টার্গেট কিন্তু নির্দিষ্ট কোন অঞ্চল নয়। টুইনটাওয়ার, হোয়াইট হাউস, ১০ ডাউনিং স্ট্রীট কিংবা আগ্রার তাজমহলও তার হিংসার অনলে পুড়বে না। কালাশনিকভ, স্নাইপার, রেলগানের মতো করোনারও টার্গেট শুধু হোমো সেপিয়েন্স – আশরাফুল মখলুকাত -মানুষ। তার আঘাতে গোটা বিশ্ব আজ লণ্ডভণ্ড। মারণাস্ত্রের কারখানায়ও শুনশান নীরবতা। করোনা নিজেও শব্দহীন, অথচ কী ভয়ংকর নিঃশব্দ প্রাণহন্তারক!
আহারে! এই আকালের সময়টায় যদি কেউ একজন থাকতেন রাশিয়ায়, মার্কিন মুল্লুকে, বৃটেন, জার্মানি অথবা আফ্রিকা মধ্যপ্রাচ্যে। যিনি হতে পারতেন এন্টি-করোনার শতাব্দীশ্রেষ্ঠ উদ্ভাবক।
গোটা বিশ্বের কোন প্রান্তে কেউ কি আছেন কোন মিখাইল কালাশনিকভ?
‘নিউট্রন বোমা বোঝ
মানুষ বোঝ না।’
লেখক :
জগলু চৌধুরী
সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক,সিলেট জেলা।
সাবেক সভাপতি-সিলেট জেলা ছাএলীগ।