প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পুরোপুরি ‘ই-লার্নিং’ শিক্ষাব্যবস্থা এখনও গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দক্ষ শিক্ষক, ইন্টারনেটের ধীর গতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠোমো উন্নয়নের অভাবে এ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ই-লার্নিং বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জিজিটাল ক্লাসরুম ব্যবস্থা তৈরি করতে গত ৯ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবে এখনও প্রযুক্তিভিত্তিক এই ব্যবস্থা দাঁড়া করানো সম্ভব হয়নি। দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে ডিজিটাল ক্লাসরুম ব্যবস্থা সফল করা গেলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম) কর্মসূচির মাধ্যমে ই-লার্নিং শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ‘পুরোপুরি ই-লার্নিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সম্ভব হয়নি। তাই বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি। সংসদ টিভিতে এখন শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হচ্ছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। তবে এক সময় ই-লার্নিংয়ে যাবো। ’
বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক বলেন, ‘ইন্টারনেটে ধীরগতি তো আছেই। আবার কোথাও কোথাও ইন্টারনেটও নেই। বিদ্যুৎও নেই অনেক জায়গায়। সব শিক্ষককে প্রযুক্তিগতভাবে এখন দক্ষ করে তোলা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষক দেওয়া হচ্ছে। আইসিটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এক সময় ই-লার্নিংয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করতে প্রথম প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১১ সালে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশে ২০ হাজার ৫০০ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় একটি করে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়। সে লক্ষ্যে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় একটি ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম, স্ক্রিনসহ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেম। তবে এই প্রকল্পে অগ্রগতি খুবই নগন্য।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে দেশের ৩১ হাজার ৩৪০টি ডিজিটাল ক্লাসরুম চালু করতে ‘আইসিটি ফেজ-২’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৭ সালে প্রকল্পটি যাত্রা শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পের শুরুতে কিনে রাখা কিছু ইন্টারনেট মডেম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জানানো হলেও এখন পর্যন্ত ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর কেনাই সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।
সর্বশেষ করোনার কারণে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি। এই ছুটিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘরে বসে ক্লাসের পাঠ গ্রহণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৯ মার্চ থেকে টিভিতে চালু হয়েছে ক্লাস।
একইভাবে প্রাথমিকে ই-লার্নিং শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ হিসেবে দেশে ১৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয় ২০১৬ সালে। ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘প্রাথমিক শিক্ষা কন্টেন্ট ইন্টারঅ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল ভার্সনে রূপান্তর’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত করা ডিজিটাল কন্টেন্টের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ক ১৭টি বইয়ের ইন্টারঅ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল শিক্ষা কন্টেন্ট তৈরি করা হয়।
বাংলা, গণিত, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ক ১২টি বই ব্র্যাক এবং ইংরেজি বিষয়ের ৫টি বইয়ের কন্টেন্ট তৈরিতে সেভ দ্য চিলড্রেন কারিগরি সহায়তা দেয়। তবে এই কর্মসূচিটিও উল্লেখযোগ্য কোনও ফল বয়ে আনেনি।
চলতি বছর জুনের মধ্যে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫০৯টি বিদ্যালয়ে ক্লাস চালু করা কথা রয়েছে। এটুআই প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে করা হবে বলে জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি হওয়া নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের অধীন মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাদেশে মাত্র ১২ শতাংশ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে। ইন্টারনেটের ধীরগতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠোমো উন্নয়নের অভাব রয়েছে। এছাড়া দক্ষ শিক্ষকের অভাব, ইন্টারনেট ব্যবহারে শিক্ষকদের দক্ষতার অভাব এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহারে শিক্ষকদের অবহেলার কারণে মাল্টি মিডিয়া ক্লাসরুম বাস্তায়ন ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
বার্তা বিভাগ প্রধান