১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া। এভাবে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত মানুষের ওপরঅত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কোনও বাহিনীর আক্রমণের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
এ দিবস উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ হলেও করোনা ভাইরাসের থাবা থেকে মুক্তি পেতে সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি বর্বরতম ও মর্মান্তিক ঘটনা।
শহীদদের স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ দিনকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। গণহত্যা দিবস বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ৩০ লাখ বাঙালির আত্মত্যাগের মহান স্বীকৃতির পাশাপাশি তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার বিরুদ্ধে চরম প্রতিবাদের প্রতীক।
তিনি বলেন, নানা ষড়যন্ত্র করেও বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে প্রতিহত করতে না পেরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করতেই ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদাররা এ দেশের গণমানুষের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব মানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। এমন গণহত্যা আর কোথাও যাতে না ঘটে, গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সে দাবিই বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হবে।
রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে আরও বলেন, সকল বাধা অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নতি আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। এ সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, বৈষম্যহীন সমৃদ্ধির ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে দেশ আজ ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই আমরা একাত্তরের গণহত্যায় জীবনদানকারী প্রতিটি প্রাণের প্রতি জানাতে পারি আমাদের চিরন্তন শ্রদ্ধাঞ্জলি।’
তিনি বলেন, এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প-২০২১’ ও ‘রূপকল্প-২০৪১’ ঘোষণা করেছেন। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশে সংঘটিত হয় বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ও নিষ্ঠুরতম গণহত্যাগুলোর একটি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ মহান জাতীয় সংসদে এ দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং ২০ মার্চ মন্ত্রীপরিষদ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ প্রণয়ন করেছিলেন। সেই আইনের আওতায় অনেকের বিচার শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধপরাধীদের বিচার কাজ বন্ধ করে দেয় এবং তাদের মুক্তি দেয়। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে। পরবর্তীকালে খালেদা জিয়াও গণহত্যার দোসর নিজামী-মুজাহিদদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করে আসছে। বেশকিছু বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকবে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারে সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন প্রকৃতার্থে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি জাতির চিরন্তন শ্রদ্ধার স্মারক এবং সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণহত্যা দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে ২৫ মার্চ কালরাতে নিহত সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্ব এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করেছে আওয়ামী লীগ।
তবে আওয়ামী লীগ সব প্রতিকূলতার মধ্যেও ইতিহাসের সত্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিশ্বসভ্যতার এক সংকটময় মুহূর্তে আমাদের জাতীয় জীবনে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস সমাগত।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের কারণে শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’-এর বছরব্যাপী কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে এবং ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে বাতিল করা হয়েছে। দেশবাসীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে আওয়ামী লীগও সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত করেছে। শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ত্রিশ লক্ষ শহীদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে ভয়াবহ এই বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করাই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশবাসীর সম্মিলিত সচেতনতা, সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি পালনই পারে ভয়াবহ এই সংকট থেকে আমাদের রক্ষা করতে।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ তথা বিশ্বমানবতার এই ক্রান্তিলগ্নে সবাইকে ধৈর্য্য, সতর্কতা, দায়িত্বশীলতা, মানবিকতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।