করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বই এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। করা যাচ্ছে না শিপমেন্ট। প্রতিদিনই বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন শিল্প মালিকরা।
গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর বিজয়নগরের শ্রম ভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, যে করেই হোক শিল্পের চাকা সচল রাখতে হবে।
এ পরিস্থিতিতে কারখানা বন্ধ করা হলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মঙ্গলবারের বৈঠকের আগে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে ব্যবসায়ীরা আহ্বান জানান গতকালের বৈঠকে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় আজ রবিবার শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ নেতারা বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে সংকট মোকাবিলায় আর্থিক প্রণোদনা চাইতে পারেন। সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে সামগ্রিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বৈঠকে শিল্প কারখানা বন্ধ না করে বরং শ্রমিকদের আরও সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন শিল্প মালিকরা। তারা বলেন, কারখানা বন্ধ করলেই সমাধান হবে না। বরং শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে ১০০ জনের কাজ ৫০ জন দিয়ে হলেও কারখানা সচল রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ১৪ দিনের কোয়ারেনটিনের পক্ষে মত দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন। তিনি বলেন, এ সংকট কেবল বাংলাদেশের নয়, পুরো বিশ্বের। বড় বড় ব্র্যান্ডের ক্রেতারা আউটলেট বন্ধ রেখেছে। ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করছে। এ বাস্তবতা মানতে হবে। তিনি বলেন, অনেক কারখানার মালিকরা বলছেন, আর চালাতে পারছি না। লে-আউট ঘোষণা করলে শ্রমিকদের পাওনা দিতে হবে সে টাকাও নেই।
বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বিকেএমইএর সভাপতি ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, রপ্তানিকারক শিল্প মালিকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী, এফবিসিসিআইর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, শিল্প পুলিশের ডিআইজি আবদুস সালাম, শিল্প সচিব কেএম আলী আজম প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এ মুহূর্তে কারখানা বন্ধ করা যাবে না। কেউ কারখানা বন্ধ করলে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কোনো মালিকের সমস্যা থাকলে তিনি যেন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন। তার সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো ডকুমেন্ট চায়। শিপমেন্ট হচ্ছে না।
শিল্প খাতের প্রণোদনা দিতে কিছু ফান্ড আছে। ওই ফান্ড জরুরিভাবে দেওয়া উচিত। যারা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না, পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের জরুরি ভিত্তিতে প্রণোদনা দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ পরিস্থিতি কবে শেষ হবে তাও জানি না। এ সমস্যা কেবল পোশাকশিল্পের নয়, সব শিল্পের। তাই সব শ্রমিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা বলতে হবে।
শ্রমিক নেতা ফজলুল হক মন্টু বলেন, কোনো অবস্থাতেই কারখানা বন্ধ করা যাবে না। ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কাছে সহায়তা চাইতে। ক্রেতাদের চাপ দিতে হবে। তারা আমাদের কাছ থেকে বছরের পর বছর ব্যবসা করছে। এ বিপদের সময় তারা আবার সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
সবার কথা শুনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, হতাশ হলে চলবে না, সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। ক্রেতাদের চাপ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের ১৪ দিনের হিসাব করলে চলবে না। আমাদের ভাবতে হবে, সামনে দুই ঈদ রয়েছে। মার্চের বেতন রয়েছে। তিন মাসের কথা ভাবতে হবে। মিলকারখানা বন্ধ করতে হবে এ চিন্তা যেন কারও মাথায় না আসে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি বলেন, আসলেই আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। কীভাবে এ সংকট মোকাবিলা করব। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে হয়তো কাটিয়ে ওঠা যাবে। কারখানা বন্ধ করলে চলবে না। বরং সচেতনতার সঙ্গে শ্রমিকদের কাজে রাখতে হবে। এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থা হয়নি। তবে অর্ডার না থাকলে তখন চিন্তা করা যাবে। আশা করি আমরা শ্রমিকদের রক্ষা করতে পারব। শ্রমিক না বাঁচলে শিল্প বাঁচবে না। তাই শ্রমিকদের কথা বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এফবিসিসিআই সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কারখানা চলছে, চলবে। যতক্ষণ চালিয়ে যেতে পারি ততক্ষণ চলবে। শ্রমিকদের সচেতনতার জন্য কাজ করছি। করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। শুধু বাংলাদেশের নয়। এ সমস্যা সবার একসঙ্গে মিলে মোকাবিলা করতে হবে।
প্রতিনিধি