অনলাইন ডেস্ক:
কাঠুয়ায় নাবালিকার ধর্ষণ ও খুন নিয়ে বিক্ষোভ বিলেতের মাটিতেও পিছু ছাড়ল না নরেন্দ্র মোদীর। লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে কার্যত মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্লোগান দিলেন মোদীর বিরোধী ও সমর্থকেরা। কিন্তু তারই মধ্যে ওয়েস্টমিনস্টার সেন্ট্রাল হলে ভারতীয়দের সঙ্গে কথাবার্তায় নোটবন্দি আর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা বলে হাততালি কুড়োলেন প্রধানমন্ত্রী।
গত কাল রাতে সুইডেন থেকে ব্রিটেনে আসেন মোদী। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান ব্রিটিশ বিদেশসচিব বরিস জনসন। আজ ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সফরের গোড়া থেকেই কাঠুয়া কাণ্ড নিয়ে বিক্ষোভের ছবি দেখেছে লন্ডন।
ডাউনিং স্ট্রিটে মোদীকে অভ্যর্থনা ও বৈশাখীর শুভেচ্ছা জানাতে এক দল মহিলা হাজির ছিলেন ঠিকই। কিন্তু জম্মুর কাঠুয়ায় নির্যাতিতার ছবি-সহ গাড়ি ঘোরাঘুরি করছিল সেখানে। সেই ছবির নীচে স্পষ্টই লেখা রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতারা ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পরে ওয়েস্টমিনস্টারে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী।
তার আগেই পার্লামেন্ট স্কোয়ার এবং ওয়েস্টমিনস্টার ক্যাথিড্রালের সামনে শুরু হয় বিক্ষোভ। এক দিকে জম্মুর নির্যাতিতার সুবিচার ও নিহত সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের খুনিদের গ্রেফতারির দাবিতে বিক্ষোভ। হাজির ছিলেন খলিস্তানপন্থীরাও। স্কোয়ারে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর মূর্তিও এক বার ঢেকে দেওয়া হয় খলিস্তানি পতাকায়। ভারতের ‘বেটি’দের বাঁচানোর ডাক দিয়ে মৌন বিক্ষোভ দেখান এক দল ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা। ‘গরু সুরক্ষিত, মেয়েরা নন’ প্ল্যাকার্ড নিয়েও হাজির ছিলেন অনেকে। অন্য দিকে ‘হর হর মোদী’ ও ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি দিয়ে আসরে নামেন মোদীর সমর্থক ‘ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়া সোসাইটি’-র সদস্যেরা। ভিড় বাড়াতে ওয়েম্বলি ও লেস্টার থেকে লোক নিয়ে এসেছিলেন মোদী-সমর্থকেরা।
ব্রিটেনে এমন বিক্ষোভের সম্ভাবনা যে রয়েছে তা অবশ্য আগেই বুঝতে পেরেছিল বিদেশ মন্ত্রক। কারণ, সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে কাঠুয়া প্রসঙ্গ তোলেন পাক বংশোদ্ভূত সদস্য লর্ড আহমেদ। এ দিনের বিক্ষোভে বড় ভূমিকা রয়েছে শিখ সংগঠন ‘ফেডারেশন অব শিখ অর্গানাইজেশনস’-এর।
এরই মধ্যে ‘ভারত কী বাত….সব কে সাথ’ অনুষ্ঠানে নোটবন্দি আর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক প্রসঙ্গ তোলেন মোদী। হাল্কা সুরে তিনি বলেন, ‘‘ভারতে নোটবন্দির কথা শুনে আমার বন্ধু আর্জেন্তিনার নেতা ভেবেছিলেন আমি বুঝি ডুবলাম। কিন্তু ভারতবাসী কালো টাকার বিরুদ্ধে এই অভিযানের জন্য স্বার্থত্যাগ করেছেন।’’ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মোদী মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারত কখনওই অন্যের জমি দখল করতে চায় না। কিন্তু ভারতে জঙ্গি পাঠানোর জন্য সন্ত্রাসের কারখানা চালালে তা বরদাস্ত করা হবে না। এ ভাবে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানকেও বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।
ব্রিটেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাতেও আজ যথেষ্ট লাভ হয়েছে বলেই দাবি বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের। সন্ত্রাস দমন, সাইবার সুরক্ষা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য-সহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু’দেশ। ব্রিটেনে রুশ চর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ের উপরে এবং সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টেরেসা। মোদী তাঁকে জানিয়েছেন, যে কোনও রাসায়নিক হামলার বিরোধী ভারত।
ব্রেক্সিটের পরেও যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের গুরুত্ব ভারতের কাছে কমেনি তা নিয়ে মে-কে আশ্বস্ত করেছেন মোদী। মে-ও জানিয়েছেন, ব্রেক্সিট সত্ত্বেও বর্তমান শর্ত মেনেই ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত ব্রিটেনের বাজারে ব্যবসা করতে পারবে ভারতীয় সংস্থাগুলি।
মে-র সঙ্গে বৈঠকের পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের অবদান নিয়ে এক প্রদর্শনীতে যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে হাজির হন মোদী। পরে বাকিংহাম প্রাসাদে দেখা করেন রানি এলিজাবেথের সঙ্গেও।
নির্বাহী সম্পাদক