Home » পাপিয়ার সব ওপেন সিক্রেট

পাপিয়ার সব ওপেন সিক্রেট

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ এবং তার স্বামী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন ওরফে মতি সুমনের থলে থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক বিড়াল। সুনির্দিষ্ট পেশা ছাড়াই তাদের দৈনিক লাখ লাখ টাকা ব্যয়ের বিলাসী জীবন যাপন, কিউ অ্যান্ড সি নামে বাহিনীর মাধ্যমে গড়ে তোলা নিজস্ব সাম্রাজ্য, অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, চাকরির তদবিরের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, অর্থপাচার, মাদক কারবার এমনকি দেহব্যবসা করা এবং অসহায় তরুণীদের এ কাজে বাধ্য করার মতো কাণ্ডকীর্তিতেও জড়িত পাপিয়া-সুমন দম্পতি।

সম্প্রতি গ্রেপ্তারকাণ্ডের পর গণমাধ্যমের বদৌলতে যারা তাদের এসব গল্প শুনছেন, তারা হয়তো বিস্মিত। কিন্তু পাপিয়া-সুমনের এসব কুর্কীতি এতদিন ছিল ওপেন সিক্রেট। কিন্তু প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তাদের বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। এ দম্পতি অনলাইন ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ র‌্যাবের। পাপিয়া-সুমনের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে একাধিক সংস্থা। এ দম্পতি বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করেছেন বলেও প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ বিষয়ে এরই মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অনুসন্ধান শুরু করেছে। র‌্যাবের চিঠি পেলে তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলাও করবে সিআইডি।
গত শনিবার সকালে দেশত্যাগের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া, সুমন, সাব্বির ও তায়্যিবাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার টাকা মূল্যের জালনোট এবং বিপুল পরিমাণ ভারতীয়, শ্রীলংকান ও মার্কিন অর্থসহ ৭টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ‘কিউ অ্যান্ড সি’ বাহিনীর মাধ্যমে গড়ে তোলা সাম্রাজ্য বিস্তারে যারা এ দম্পতিকে ‘শেল্টার’ দিতেন, নেপথ্যের সেসব কুশীলবসহ অনেক বিষয়ে, অনেকের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন এ দম্পতি। তাদের ১৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রিমান্ড শুনানির পর কাঠগড়ায় দ-ায়মান পাপিয়া আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছেন-এ ঘটনা আমার লাইফটাই শেষ করে দিয়েছে।

এদিন দুপুর দেড়টার দিকে পাপিয়াসহ চার আসামিকে প্রিজনভ্যানে বিমানবন্দর থানা থেকে সিএমএম আদালতে আনার পর হাজতখানায় রাখা হয়। এর পর বেলা সাড়ে ৩টায় তাদের সিএমএম আদালতের দ্বিতীয় তলার ২৭ নম্বর কক্ষে তিন মামলায় ১০ দিন করে ৩০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য কাঠগড়ায় ওঠানো হয়।

প্রথমে বিমানবন্দর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় চার আসামিরই ১০ দিনের এবং পরে শেরেবাংলানগর থানার অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুই মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর ১০ দিন করে ২০ দিন রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান ও হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ জামিনের বিরোধিতা করে এবং রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট জাহিদ হোসেন, ইলতুৎমিশ সওদাগর প্রমুখ আইনজীবী রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। গ্রেপ্তারের দুদিন পর আসামিদের আদালতে হাজির করায় আইন লঙ্ঘন হয়েছে মর্মে আইনজীবীরা প্রশ্নও তোলেন। একই সঙ্গে উদ্ধার দেখানো টাকা, অস্ত্র ও মাদক নাটক বলেও তারা উল্লেখ করেন। দুদিন পর আদালতে হাজির করায় রিমান্ডের আর প্রয়োজন নেই বলে যুক্তি দেখান আইনজীবীরা।

শুনানি শেষে সকল আসামির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান বিমানবন্দর থানার মামলায় ৫ দিনের এবং ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মাদ জসিম শেরেবাংলানগর থানার দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে মহিলা আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মহিলা পুলিশের উপস্থিতির নির্দেশও দেওয়া হয়।

শনিবারের অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত রবিবার সকালেও রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেকবই, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড জব্দ করে র‌্যাব। এ ঘটনায় রবিবার বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং শেরেবাংলানগর থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা করে র‌্যাব। মানিলন্ডারিংয়ের মামলার বিষয়ে র‌্যাব সিআইডিকে চিঠি দেবে।

সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, পাপিয়া এবং তার স্বামীর বিষয়ে র‌্যাব এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধের অনুসন্ধান এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। র‌্যাবের চিঠি পেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল আমাদের সময়কে বলেন, পাপিয়া, তার স্বামী এবং দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে। ওই তিনটি মামলার তদন্ত করতে আমরা (র‌্যাব) আবেদন করব। মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধের বিষয়ে সিআইডি ও দুদককে জানানো হবে।

র‌্যাব বলছে, নরসিংদীতে ‘কিউ অ্যান্ড সি’ নামে একটি ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি, মাসোহারা আদায়, অস্ত্র ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছিল পাপিয়া ও মফিজুর দম্পতি। চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আদায়, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স, অবৈধ গ্যাসলাইন সংযোগের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে এ দম্পতি।

এভাবে তারা কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিলেন পাপিয়া। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাম থেকে নারীদের ঢাকায় এনে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজেও বাধ্য করা হতো। সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকলেও তারা স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি ও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ আছে। বিদেশেও তারা অর্থপাচার করেছেন। সুত্র: আমাদেরসময়

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *