Home » প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ৭ হাজার ১৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ৭ হাজার ১৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়

দেশের ৭ হাজার ১৮টি প্রাইমারি স্কুল চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। প্রশাসনিক জটিলতায় শিক্ষকদের মধ্যেও বাড়ছে দ্বন্দ্ব। একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, দাপ্তরিক কাজে তাদের মাসে অন্তত ১০ কর্মদিবসে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। যেসব স্কুলে চার জন শিক্ষক, সেখানে বাকি তিন শিক্ষককে দিয়ে চলছে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ক্লাসসহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণির ক্লাস।

দেশে বর্তমানে প্রাথমিকের ২১ হাজার ৮১৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। এছাড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ করা, ভোট গ্রহণ, শিশু জরিপ, কৃষিশুমারি, আদমশুমারি, উপবৃত্তি তালিকা প্রণয়ন ও প্রাপ্তিতে সহযোগিতাসহ ১৩ ধরনের কাজ করতে হয় শিক্ষকদের। এর মধ্যে যদি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকে, তাহলে তো ভোগান্তির সীমাই থাকে না।

রফিকুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও মন্ত্রণালয়ের তেমন উদ্যোগ নেই। যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হলে এত বেশি শূন্য পদ থাকত না।

তথ্য অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মিলে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ২৮ হাজার ৮৩২টি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। অবশ্য সহকারী শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণে ইতিমধ্যে চূড়ান্ত নির্বাচিত প্রার্থীদের যোগদানের জন্য পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬৪টি জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৭ হাজার ১৮টি শূন্য পদের মধ্যে পদোন্নতিযোগ্য শূন্যপদ ৪ হাজার ১৬৬টি এবং সরাসরি নিয়োগের যোগ্য শূন্যপদ ২ হাজার ৮৫২টি। নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের ৩৫ শতাংশ পূরণ করা হয় সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে। আর বাকি ৬৫ শতাংশ পূরণ করা হয় পদোন্নতির মাধ্যমে। প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে নিয়োগের পদক্ষেপের বিষয়ে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন সংসদে জানিয়েছেন, সরাসরি নিয়োগযোগ্য ৩৫ শতাংশ পদে নিয়োগের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে (পিএসসি) চিঠি পাঠানো হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী এ নিয়োগ প্রক্রিয়া এগোচ্ছে ধীরগতিতে।

অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৩, অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরির শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৩ ও ননক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি বিধিমালা, ২০১১ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়।

একজন থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান, শিক্ষকদের মধ্য থেকে অস্থায়ীভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিলে অন্য শিক্ষকেরা তাকে মানতে চান না। তাদের বক্তব্য, প্রধান শিক্ষক হিসেবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি সহকারী শিক্ষক, আমিও সহকারী শিক্ষক। তার নেতৃত্ব কেন মানব?

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদোন্নতি নিয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেডেশন তালিকা সঠিক না হওয়ায় পদোন্নতি প্রত্যাশী সহকারী শিক্ষকেরা এসব মামলা করেছেন। এ কারণে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি আপাতত বন্ধ রয়েছে। সিনিয়রিটির ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

সূত্র অনুযায়ী, দেশের প্রাইমারি স্কুলে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েও যোগদানের তারিখ ভিন্ন হওয়ার কারণে অনেকে গ্রেডেশন তালিকার নিচে থাকছেন। এ কারণে তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এ কারণে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন শিক্ষকেরা।

তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছি। আগে প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির ভিত্তিতে এবং পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হতো। এখন শতভাগ পদোন্নতির ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। সচিব বলেন, অনেকে সহকারী শিক্ষক পদটাকে ‘ব্লক পোস্ট’ মনে করে থাকেন। তাই অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী এ পেশায় আসতে চান না। তাদের উত্সাহ দিতে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। সুত্র: ইত্তেফাক

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *