Home » মৌলভীবাজারে আগুনে নিহত ৫, বেঁচে নেই বাবা ও বোন, মা-মেয়ে বাকরুদ্ধ

মৌলভীবাজারে আগুনে নিহত ৫, বেঁচে নেই বাবা ও বোন, মা-মেয়ে বাকরুদ্ধ

শুধু বেঁচে রয়েছেন মা ও মেয়ে। নেই ছোট বোন পিয়া ও বাবা সুভাষ রায়। পিংকি ছিল শ্বশুড় বাড়িতে। তাই বেঁচে যান। মা ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। এযেন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া। তবে এই বাঁচা জয়ন্তি রায়ের জন্য বাঁচা নয়।

কারণ স্বামী ও ছোট মেয়ে বেঁচে নেই। বাবা- ছোট বোনের জীবন অকস্মাৎ আগুন কেড়ে নিবে এটা হয়তো ভাবেননি পিংকি রায়। সাথে হারালেন মামা, মামী ও তিনবছরের মামাতো বোনকে। শুক্রবারেই বিয়ে শেষ হয়েছিল পিংকির, বৌভাতও শেষ। বিয়ের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টার দিকে পিংকি স্টোরের গ্যাসের রাইজার থেকে লাগা আগুনে পুড়ে অন্যান্য স্বজনদের সাথে মারা যান মা-মেয়ে দুজনেই। পিংকি স্টোর নামের যেই দোকানটি থেকে ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত হয় সেই দোকানের উপরের বাসাতেই আত্মীয়দের সাথে অবস্থান করছিলেন জয়ন্তি রায়।

তিনি বলেন, “আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, চা জ্বাল দেয়ার জন্য গুম থেকে উঠি। উঠেই দেখি আমার বাসায় থাকা এক আত্মীয় আগুন বলে চিৎকার করছেন। পরে আমি চিৎকার করে সবাইকে সজাগ করি। বাসায় আমরা নয় জন ছিলাম। পিংকির চাচা মনা রায়, দীপার ছেলে ও দোকানের কর্মচারী বাসা পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসি। বাকিরা সবাই বাসায় আটকা পড়েন”।

নিহত হন- দোকানের মালিক সুভাষ রায় (৬০), তার মেয়ে পিয়া রায় (১৪), তার ভাই মৃত প্রণয় রায়ের স্ত্রী দীপ্তি রায় (৪৫), শ্যালক সজল রায়ের স্ত্রী দীপা রায় (৩৫) ও দুই বছর আট মাসের শিশু বৈশাখী রায়।

আহত সুভাষ রায়ের ভাই মনা রায় (৪৫) একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে পিংকি সু ষ্টোরে গ্যাস লাইনের রাইজার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিক ভাবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে শ্রীমঙ্গলের আরও একটি ইউনিট সেখানে যোগ দেয়। দীর্ঘ দুই ঘন্টা তিনটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান চালায়। আটকা পড়াদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। তারা একই পরিবারের। এর মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। দুপুর ১২ টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিস মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা  বলেন, “আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব। ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত করে জানাবো। প্রাথমিকভাবে ধারণ করছি দোকানের ভিতরেই ছিল গ্যাস লাইনের রাইজার। এখান থেকেই আগুনের উৎপত্তি হয়েছে”।

এঘটনায় পুলিশের সিলেট রেঞ্জর ডিআইজি কামরুল আহসান, জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ, পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান, চেম্বার সভাপতি মো. কামাল হোসেন, বিজনেস ফোরামের সভাপতি নুরুল ইসলাম কামরানসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা।

পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ বলেন, “৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালি দিয়ে গ্যাসকে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। দু:খের বিষয় একই পরিবারের ৫জন নিহত হয়েছেন। শহর বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর সন্ধ্যায় দাহ করা হয়েছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *