অনলাইন ডেস্ক
: করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের উহান শহরে, যা এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশটি ছাড়াও অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এর পরও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। তবে সরকার এ বিষয়ে সতর্ক। দেশবাসীর উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বার্তায় আতঙ্কিত হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশে করোনা ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকাতে অধিদপ্তরের তরফে চীন ভ্রমণে সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশটিতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে দেশে যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়, তা হলে তাকে যেন পৃথকভাবে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়, সে জন্য সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে পৃথক কক্ষ খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে বাংলাদেশের জরুরি সতর্কতা নেওয়া প্রসঙ্গে বৈঠক হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক গভীর। দেশের বহু মানুষ বাণিজ্যিক কারণে চীনে যাতায়াত করেন। এ ভয়াবহ ভাইরাস বাংলাদেশে যে কোনো উপায়ে চলে এলে তা আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। আগামী ২৮ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে। এতে বাংলাদেশ থেকে চীনে ও চীন থেকে বাংলাদেশে সব ধরনের ভ্রমণ সাময়িকভাবে স্থগিতের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে যেন করোনা ভাইরাস প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য এরই মধ্যে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের পরীক্ষায় বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে থারমাল স্ক্যানার। রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিনটি থারমাল স্ক্যানারের মধ্যে দুটিতে এবং একটি হাতমেশিনে চীন থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। বিমানবন্দর সূত্র বলছে, অচিরেই আরও দুটি হাতমেশিন যুক্ত হবে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। সেই থেকে শুরু করে গতকাল রাত পর্যন্ত চীন থেকে আসা ২১৯০ জনের স্ক্রিনিং করা হয়েছে। আশার কথা, তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল না কেউই। অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার এ তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষায় ৯ জনের সর্দিজ্বর ও কাশি ধরা পড়েছে, তাদের আইইডিসিআরে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কারও শরীরেই করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়নি।
ডা. আয়শা আক্তার বলেন, চীন থেকে যারা দেশে ফিরছেন বিমানবন্দরে তাদের স্ক্রিনিং শেষে একটি হেলথ কার্ড দেওয়া হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে, ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেও যদি তারা কেউ সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হন, তা হলে যেন আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষকে জানান বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। এ ছাড়া চীনফেরতদের মধ্যে কারও সর্দিজ্বর ও কাশির লক্ষণ দেখা দিলে তাদের চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটি সেন্টার খোলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কোনো বাংলাদেশির যদি জরুরি প্রয়োজনে চীনে ভ্রমণ করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি সেটি পিছিয়ে দিতে কিংবা সম্ভব হলে না যেতে। এর পরও যদি একান্ত যেতেই হয়, তা হলে আমাদের যেন তা জানান। আমরা তা হলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেব।
এ ছাড়া আমাদের অনেক চীনা পার্টনার থাকে তাদের যদি বাংলাদেশে আসার দরকার হয়, সেটাও যেন তারা বিলম্বিত করেন। এর পরও যদি আসতে হয়, তা হলেও আমাদের যেন জানান। যারা চীন থেকে আসবেন আমরা নজরদারিতে রাখব। আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি, বিশেষ করে চীন থেকে যারা আসবেন তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। তাদের কয়েকদিন নজরদারিতে রাখব। আমরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা যেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা করে।
অভিজ্ঞ এ চিকিৎসক বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বাংলাদেশে সর্দি, জ্বর ও কাশিসহ ঠা-াজনিত রোগব্যাধি আছে। এগুলো থাকবেই। করোনা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
আইইডিসিআরে তথ্যকেন্দ্র
করোনা ভাইরাসের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা মোটেই উদ্বিগ্ন নই, প্রস্তুত। চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা দেওয়া করোনা ভাইরাস নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে সত্যি; কিন্তু এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে দেশে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ, মনিটরিং ও বিশ্লেষণের জন্য আইইডিসিআরে এ সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকেন্দ্রের (ইউএসসিডিসি) দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়মিত সভা করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করবেন। আপাতত চীন থেকে আসা ফ্লাইটের যাত্রীদের বিমানবন্দরে পরীক্ষা করা হবে। স্থলবন্দরগুলোকে সতর্ক রাখা হবে।
প্রতিনিধি