Home » বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে যাচ্ছে ৪ মে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে যাচ্ছে ৪ মে

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোরডটকম:

দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ আগামি ৪মে উৎক্ষেপণ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানারভাল স্পেস সেন্টারের লঞ্চপ্যাড থেকে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হবে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার (১১ এপ্রিল) সকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানান, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে যাবে।

এদিকে এ পর্যন্ত কয়েকবার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তারিখ বদলানো হয়েছে। প্রথমত, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরে নতুন তারিখ ঠিক হয় এ বছরের ১ মার্চ। আবারও পরিবর্তন হয় সম্ভাব্য তারিখ। নতুন তারিখ ধরা হয় মার্চের শেষ সপ্তাহ বা ২৬-৩১ মার্চের মধ্যে যেকোনও দিন। পরে গত ১৫-২২ এপ্রিল এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা ছিল। পরবর্তীতে তারিখ পরিবর্তিত হয়ে ২৪ এপ্রিল তারিখ নির্ধারিত হয়। পরে আবার এই তারিখটি পরিবর্তিত হয়ে সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল ছিল নির্ধারিত দিন। সর্বশেষ আজ স্যাটেলাইটটির উৎক্ষেপণ প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস এক্স’ মহাকাশে উড়ার দিনক্ষণটি জানিয়ে দেন।

স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্যাটেলাইটের কাঠামো তৈরি, উৎক্ষেপণ, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানটিরি। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। অন্যগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হয়েছে গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে।

উল্লেখ্য, ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রির অরবিটাল স্লটে (নিরক্ষরেখায়) উড়বে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ১৫ বছরের জন্য অরবিটাল স্লট বা নিরক্ষরেখা (১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি) লিজ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয়ে এ স্লট বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সে সময় উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়নি। ইন্টারস্পুটনিকের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তি হলেও এ চুক্তি তিন ধাপে ৪৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এই প্রকল্পে সরকারের যে টাকা খরচ হবে তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরে তুলে এনে এই প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) বাংলাদেশকে নিরক্ষরেখার ১০২ ডিগ্রি স্লট বরাদ্দ দেয়। কিন্তু প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ তাতে বাধা দেয়। দেশগুলোর আপত্তির মুখে বাংলাদেশ বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকে। বিকল্প হিসেবে ৬৯ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বিকল্প প্রস্তাবেও আপত্তি তোলে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন।

সর্বশেষ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে (পূর্ব) স্লট বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু এই স্লটটিও খালি ছিল না। স্লটটি ছিল ইন্টারস্পুটনিকের। কিন্তু অর্থের সংস্থান না হওয়ায় রাশিয়ার মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিকের নিজস্ব দুটি স্লটের বিপরীতে (৮৪ ও ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি) দুই মাসের একটি শর্তহীন চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প শুরুর আগেই বিদেশি বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রকল্প গবেষণায় সরকারের ব্যয় হয় ৮৬ কোটি টাকা। এই টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারলে বছরে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের। নিজস্ব স্যাটেলাইট না থাকায় এখন অন্য দেশের স্যাটেলাইট ভাড়া করে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। অন্যদিকে দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট ভাড়া করে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে আসছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট হলে ভাড়ার টাকা আর বিদেশে পাঠাতে হবে না। ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সরকার প্রতি বছর রাজস্ব হিসেবে আয় করতে পারবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *