বছরে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড ছুঁইলো চট্টগ্রাম বন্দর। ২০১৯ সাল শেষ হওয়ার ১০ দিন আগে এই রেকর্ড অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের ভারপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, ২০১৯ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ২ হাজার ৪২টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। যা বিগত সময়ে এক বছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।
তিনি বলেন, বছর শেষ হতে আরো ১০ দিন বাকি আছে। প্রতিদিন বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় গড়ে ৮ হাজার। সে হিসেবে ৩০ লাখের সঙ্গে যোগ হবে আরো প্রায় ১ লাখ। যা বিশ্বের খুব অল্পসংখ্যক বন্দরের বছরে এত কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা আছে। সেই অল্পসংখ্যক বন্দরগুলোর কাতারে স্থান করে নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। এতে বৈশ্বিক ক্রম তালিকায় আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে বন্দরটি।
ভারপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধির স্বীকৃতি আসে বৈশ্বিক ক্রম তালিকায়। গত আগস্টে লন্ডনভিত্তিক শিপিং-বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্ট প্রকাশিত তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের ১০০ ব্যস্ত বন্দরের মধ্যে ৬৪ তম হিসেবে স্থান পায়। এক বছরের ব্যবধানে ছয় ধাপ এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম বন্দর।
২০১৮ সালে বিশ্বের বন্দরগুলোর কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে এই তালিকা করা হয়। তালিকা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ছিল ৭০তম অবস্থানে। এর আগে ২০১৬ সালে এই বন্দরের অবস্থান ছিল ৭১তম। ওই তালিকায় কনটেইনার পরিবহনে বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের মধ্যে শীর্ষস্থানে আছে চীনের সাংহাই বন্দর।
বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ২৯ লাখ ৩ হাজার কনটেইনার পরিবহন করেছে। ২০১৭ সালে তা ছিল ২৬ লাখ ৬৭ হাজার। ২০১৬ সালে হয়েছে ২৩ লাখ ৪৭ হাজার। বন্দরের জেটি, পানগাঁও টার্মিনাল ও কমলাপুর কনটেইনার ডিপো মিলে কনটেইনার পরিবহনের এই সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে। অর্থবছরের হিসেবে, ২০১৩-১৪ সালে ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৫০৯টি, ২০১৪-১৫ সালে ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ৬২, ২০১৫-১৬ সালে ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৯, ২০১৬-১৭ সালে ২৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৮১, ০১৭-১৮ সালে ২৭ লাখ ৫ হাজার ৯০৯ এবং ২০১৮-১৯ সালে ২৮ লাখ ৮ হাজার ৪৯৯ টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) মো. কামরুল আমিন বলেন, বিশ্বের বন্দরগুলোর মধ্যে কয়েক কোটি কনটেইনার বছরে হ্যান্ডলিং করে এমন বন্দর আছে। কিন্তু খুব বেশি নেই। আবার খুব বেশি বন্দর নেই যাদের বছরে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড আছে। যাদের আছে আমরা তাদের কাতারে পৌঁছলাম। এতে আমাদের র্যাংকিংটা বাড়বে। বিশ্বব্যাপী এখন এই মেসেজ যাবে যে, চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়ন ক্লাবের মেম্বার।
এটা প্রমাণ করে যে, আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ছে। শিল্পের উৎপাদনও বাড়ছে। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এটা অনেক বড় অর্জন। চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এ যাবৎকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রেকর্ড। চট্টগ্রাম বন্দরকে এই অগ্রযাত্রাটা ধরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। বে-টার্মিনাল হলে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ আরো বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রতিনিধি