স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিলের পর এবার দুদেশের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকও বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে দুদেশের মধ্যে সহায়তা সম্প্রসারণে গঠিত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের ভারতের উদয়পুরের উদ্দেশে যাত্রার কথা ছিল। কিন্তু সেটিও বাতিল হয়ে গেছে; কর্মকর্তারাও তাই ঢাকাতেই রয়ে গেছেন। এ সময়কালে নেপালেও একই ধরনের আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেটিও বাতিল করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই ঢাকা-কাঠমান্ডু নির্ধারিত বৈঠকটিও বাতিল করা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ-নেপাল বৈঠকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে থাকার কথা ভারতের।
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। কোথাও কারফিউ, কোথাওবা ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এর পরও উত্তাল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও ভারত বলছে, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তবু প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেও এ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে; দৃষ্টি রয়েছে পরিস্থিতির দিকে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সৃষ্ট এ পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকা-দিল্লি যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়; পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্ধারিত ভারত সফর বাতিল হয়ে যায়। সর্বশেষ বিদ্যুৎ
খাতে দুদেশের মধ্যে সহায়তা সম্প্রসারণে গঠিত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকটিও বাতিল করা হলো। কেন বাতিল হলো? এমন প্রশ্নে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির এক সদস্য জানান, সরকারি আদেশ (জিও) হাতে না পাওয়ায় সফর বাতিল করা হয়েছে। কেন সরকারি আদেশ পাননি-এমন প্রশ্নে মুখ খোলেননি তিনি।
ভারত ও নেপালের সঙ্গে বৈঠক বাতিল হয়ে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রতিবেশী দেশ দুটোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, অনিবার্য পরিস্থিতিতে বৈঠকটি বাতিল করতে হলো। ঢাকা ও দিল্লি পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে বৈঠকের নতুন দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে। কিছু দিন পর বৈঠকের তারিখ পুনরায় উভয় দেশের সম্মতিতে নির্ধারণ করা হবে।
ভারতে সঙ্গে আজ ও আগামীকাল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এটি ভারত বাংলাদেশ যৌথ কমিটির ১৮তম বৈঠক ছিল। ভারতের উদয়পুরে বৈঠকটির ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছিল। অন্যদিকে নেপালের পোখারাতে ২৩ এবং ২৪ ডিসেম্বর নেপাল বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হওয়ার দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। এটি নেপাল-বাংলাদেশের তৃতীয় বৈঠক ছিল।
স্টিয়ারিং কমিটির অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুটি বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো আর ফেরত না আসায় অর্থাৎ অনুমোদন না হাওয়াতে বৈঠক দুটি বাতিল করে অন্য কোনো সময় এ বৈঠক করার নিদেকস করার বিষয়ে করতে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
প্রসঙ্গত ভারত ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশর বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবদের নিয়ে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর বিদ্যুৎ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে ওয়ার্কিং গ্রুপ। পৃথক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং পারস্পরিক সহায়তা বৃদ্ধির জন্যই এ যৌথ কমিটি কাজ করছে। বিগত সময়গুলো দুদেশের এ কমিটিগুলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বৈঠক করে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে দুদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ করেছেন।সুত্র: আমাদেরসময়
প্রতিনিধি