বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বন্ধ ঘোষিত পিপলস লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক (এনআরবিসিবি)। ৬টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৮৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ৪ প্রতিষ্ঠানকে দেয়া প্রায় ৪৫ কোটি টাকাই মন্দমানের খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এই অর্থ আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটা নতুন ব্যাংকের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ফেরত না আসা কঠিন ব্যাপার। কীসের ভিত্তিতে এসব দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হল এ প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কোনো প্রভাবশালীর অনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া এ ধরনের ঋণ দেয়ার কথা নয়। ব্যাংকের পরিচালকদের কেউ এর সঙ্গে জড়িত আছেন কিনা তা বাংলাদেশ ব্যাংককে খতিয়ে দেখার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) কাছে ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা, এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কাছে ১৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের কাছে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা পাওনা। এই ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণের এক টাকাও আদায় হয়নি। পুরোটাই এখন মন্দমানের খেলাপি। এছাড়া বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডকে (বিএফআইসি) ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে ২৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার ঋণ দিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক।
সূত্র জানায়, গত ২৬ জুন পিপলস লিজিংকে অবসায়ন বা বন্ধ ঘোষণার অনুমতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে আদালতের নির্দেশে ১৪ জুলাই অবসায়ক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের বিরুদ্ধে প্রায় হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ আছে। এর আগে ১০ জুলাই আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছিলেন, পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান আমানত ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সম্পদ রয়েছে ৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত রয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। যা ফেরত পেতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সাধারণ আমানতকারীরা।
বাকি অর্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া আমানত। এমনই দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানকেও বড় অঙ্কের ঋণ দেয় এনআরবিসি ব্যাংক। এছাড়া ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৬ সালে বিআইএফসির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়। ২০১৭ সালেই প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ন করতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতসব জেনেও দেউলিয়ার পথে থাকা এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকেও ঋণ দেয় এনআরবিসি।
দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টেও বড় অঙ্কের ঋণ রয়েছে ব্যাংকটির। তবে বিএফআইসির ৯ কোটি ৪৬ লাখ এবং উত্তরা ফাইন্যান্সের ২৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা এখনও খেলাপি হয়নি। দেশে মোট ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (লিজিং কোম্পানি) আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই এ খাতের ১২টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান নামেই বেঁচে আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ৯৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গ্রাহকের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের সর্বশেষ স্থিতি ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বেশিরভাগ বিতরণ করা হয়েছে আবাসন খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, খেলাপি ঋণের ভারে এমনিতেই চাপে আছে এনআরবিসি ব্যাংক। গত জুন শেষে ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪৯ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৫ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।
সুত্র: অর্থসূচকডটকম
বার্তা বিভাগ প্রধান