সিলেট থেকে অভ্যন্তরীণ রুটসহ দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে দুপুর থেকে। এর আগে সকাল থেকে সিলেট-ঢাকা রুটের কয়েকটি কোম্পানির যাত্রীবাহী বাস চলাচল করলেও বন্ধ থাকে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল। এতে ভোগান্তির মুখে পড়েন জেলার বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী সহস্রাধিক যাত্রী।
এর আগে নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে মঙ্গলবার যাত্রীবাহী পরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় শ্রমিক সংগঠন। এদিকে বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলামসহ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
পরে রাত সোয়া একটার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় সংবাদ সম্মেলনে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতার ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া দিলেও বাস চালক ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা গাড়ি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করলে সিলেটের সাথে সারা দেশের বাস চলাচলে ঘটে সিডিউল বিপর্যয়। এমন কি কয়েকটি কোম্পানির তাদের যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফিরিয়েও দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়।
তবে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সময়মতো ছেড়ে গেছে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক এন্টারপ্রাইজ, লন্ডন এক্সপ্রেসের গাড়িগুলো। তবে রাস্তায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে কিছুটা ঝামেলা হলেও বড় কোন সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান এসব কোম্পানির কর্তৃপক্ষরা।
এ
ব্যাপারে কথা হয় এনা পরিবহনের সিলেটের কদমতলী বাস টার্মিনাল কাউন্টারের
ম্যানেজার রুজেলের সাথে। তিনি জানান, সকাল থেকে আমাদের নন-এসি কোন বাস
ঢাকার উদ্দেশ্যে সিলেট ত্যাগ করেনি। তবে সকাল সাড়ে ১১টায় আমাদের একটি এসি
কোচ সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং বেলা পৌনে দুইটায় আরেকটি এসি
বাস রয়েছে যা ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এছাড়া রাতে দুটো এসি বাস ছাড়ার
চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে কেন নন-এসি বাস ছাড়ছেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাড়ির চালক ও হেলপাররা যেতে চাইছেন না। তারা মনে করছেন গাড়ী রাস্তায় বের করলেই যদি সমস্যায় পড়তে হয়, তাই তারা যেতে চাচ্ছেন না। আমরাও বাধ্য হয়ে যাত্রীদের মধ্যে বিক্রি করা টিকিটের মূল্য তাদেরকে ফিরত দিয়ে হচ্ছে।
এদিকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক এন্টারপ্রাইজ, লন্ডন এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য পরিবহনের গাড়িগুলো সময় মতই সিলেট ত্যাগ করেছে বলে জানিয়েছে স্ব-স্ব কোম্পানিতে দায়িত্বরতরা।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের দরগাহ গেইট কাউন্টারের ম্যানেজার কাশেম জানান, সকাল থেকে নিয়মিত আমাদের গাড়িগুলো ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। কোথাও কোণ সমস্যা হয়নি। তবে রাস্তায় মাঝেমধ্যে আন্দোলনরত শ্রমিকরা গাড়ি আটকিয়ে ঝামেলা করলেও পরে আবার তা ছেড়ে দিচ্ছে। তাই বড় কোন সমস্যা না থাকায় আমরা সময় মতো গাড়ি ছাড়ছি ও ঢাকা থেকেও সময় মতো গাড়ি ছাড়ছে বলেও জানান তিনি।
একই কথা বলেন, শ্যামলী পরিবহনের দরগাহ গেইট শাখার ম্যানেজার জসিম ও লন্ডন এক্সপ্রেসের দরগাহ গেইট শাখার ম্যানেজার আদিল। তারও বলেন আমাদের পরিবহনে কোন সিডিউল বিপর্যয় নেই।
এদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে সকাল থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে বাসচলাচল করলেও সিলেট- হবিগঞ্জ, সিলেট- মৌলভীবাজার, সিলেট সুনামগঞ্জ রুটে বিরতিহীন সার্ভিস চলাচল বন্ধ ছিল। যা বেলা বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক হতে থাকে। তবে দুপুরের পরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিলেট সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কোষাধ্যক্ষ শামসুল হক মানিক।
তিনি জানান, এ আন্দোলন শ্রমিকদের। তবে আমরা আশাবাদী অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এর একটি সমাধান হবে।
প্রসঙ্গত, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে শ্রমিকদের ধর্মঘট, কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধে গতকাল বুধবার কার্যত অচল হয়ে পড়ে পণ্য পরিবহন ও যাত্রীসেবা। ভোর থেকে ট্রাক–কাভার্ড ভ্যানের ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে পণ্য পরিবহন প্রায় বন্ধ ছিল। দেশের বন্দর, কৃষি ও নিত্যপণ্যের মোকাম থেকে বিভিন্ন স্থানে মালামাল পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিনিধি