মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: পাহাড়ি এলাকা অধ্যুষিত ও পানের ভান্ডারখ্যাত মৌলভীবাজারে খাসিয়া পানের দর আকাশ চুম্বী বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অসময়ে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা হতাশ হয়েছেন। ক্রেতারা বলেছেন পেঁয়াজের দরের মত পানের বাজারে ও সিন্ডিকেট কাজ করছে। পান চাষীরা জানিয়ছেন প্রতি বছরের মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে পানের দাম বেড়ে যায়। শীতকালে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত না হওয়াতে গাছ থেকে পান কুঁড়ি দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ কারণে এ ক’মাস খাসিয়া জাতের এসব পান তেমন একটা বাজারে দেখা যায়না। তখন ছুঁই ছুঁই কর দর বাড়ে। পরবর্তীতে বৈশাখ মাস থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে পান কুঁড়ি দিয়ে বাড়তে শুরু করে। একটি পান মোঠা আকার ধারণ করে পুর্ণরূপ নিতে মাস-দেড়-এক সময় লাগে। জৈষ্ঠ্য মাসে পান তার সরূপ ধারণ করে মোঠা হলে পানির দামে পাইকারী বাজারে বিক্রি করে খাসিয়ারা।
চলতি বাংলা বছরের আশ্বিন-কার্তিক মাসে হঠাৎ করে দর বাড়াতে খাসিয়া সিন্ডিকেট, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পান চাষীদের সাথে আলাপচরিতায় তারা জানান, এ বছর পান উৎপাদন কম হওয়াতে দাম বেড়েছে। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া পান পুঞ্জিতে গেল সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় পান চাষী সোহাগ “সুহাগ সুংউ” এর সাথে। সোহাগ জানায়, এবার বৃষ্টিপাত না হওয়াটাই পানের দাম বাড়ার প্রধান কারণ। সে জানায়, প্রতি ২০ কান্তায় ১ কুড়ি পান এখন ২ হাজার থেকে ২২শ টাকায় আমরা বিক্রি করছি। পান উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে প্রতি কুড়ি ৭শ থেকে ৮শ টাকায় বিক্রি হয়।
লাউয়াছড়া পান পুঞ্জির মন্ত্রী ফিলা পাট্নি জানান, জেলা জুড়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পান উৎপাদন কম হয়েছে। এজন্য হয়তো দাম বেড়েছে।পান চাষীরা আরো জানায়, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকায় ৭০টি পান পুঞ্জি রয়েছে। এসব পুঞ্জি থেকে পান ক্রয় করে পাইকারেরা রাজধানীসহ দেশ-বিদেশে বাজারজাত করে থাকে। এর মধ্যে লাউয়াছড়া পান পুঞ্জি,শ্রীমঙ্গলের নিরালা পুঞ্জি, কুলাউড়া উপজেলার ফানাই পুঞ্জি, একই উপজেলার রবিরবাজার এলাকার নুনছড়া পুঞ্জি ও রাজনগর উপজেলার ইনাই পান পুঞ্জি অন্যতম। প্রায় ২শ বছরের পুরোনো পান এক প্রকার লতা জাতীয় সবুজ উদ্ভিদ, যা পাহাড়ি এলাকার অরন্যে বৃক্ষের উপর ভর করে বেড়ে উঠে। একটি পান গাছ ২শ থেকে ৩শ পান পাতার জন্ম দিতে পারে। এসব পান তুলে নিলে আবার নতুন করে কুঁিড় দেয়া শুরু করে। আদী কালের এসব পান ভান্ডারখ্যাত ও খাসিয়া এলাকার পান পুঞ্জির নেতাকে বলা হয় মন্ত্রী। এখনো সেই মন্ত্রীদের দখলে খাসিয়া পুঞ্জি।