অনলাইন সংস্করণ : রান্নাঘরের পেঁয়াজ আর রান্নাঘরে নেই। বাজার থেকে অফিস—সর্বত্রই এখন আলোচনার বিষয় এই পেঁয়াজ। ‘পেঁয়াজ না খেলে কী হয়, কিংবা চাপ কমাতে এক কেজির জায়গায় আধা কেজি কিনেন’—এমন কথা আলোচনায় বারবার উঠে এলেও পেঁয়াজ ছাড়া যেন চলছেই না। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
রাজধানীর কোনো বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আবার সেই একই পেঁয়াজ কোনো বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। আমদানিকৃত পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মানভেদে ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে আমদানিকৃত পেঁয়াজ। মাঝে পেঁয়াজের দরে কিছুটা লাগাম থাকলেও এখন আবার লাগামহীনভাবেই দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের প্রতিবেদনে পেঁয়াজের দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির তথ্য মতে, বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১২০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাত্র এক মাস আগে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এত পেঁয়াজ গেল কোথায়? বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেও দাম এতটা বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ টন। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ সংগ্রহকালীন ও সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩০ লাখ টন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ১০ দশমিক ৯১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এছাড়া চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২ দশমিক ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট পেঁয়াজের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২৯ দশমিক ৩৪ লাখ টন। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এই হিসেবে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে আছে তা চাহিদার অনেক বেশি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ দেশে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। প্রতিদিন সারাদেশে ৬ হাজার টন পেঁয়াজের চাহিদা। এই হিসেবে আগামী দুই মাসে পেঁয়াজ লাগবে সাড়ে ৩ লাখ টন। এই পরিমাণ পেঁয়াজ এখন দেশের ভিতরেই আছে। তাহলে এভাবে লাগামহীন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন? তাহলে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের অজুহাতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে? এ প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন করে আবার পেঁয়াজের দাম বাড়া প্রসঙ্গে পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, দেশি পেঁয়াজের যে মজুতটা ছিল তা এখন শেষের দিকে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে যে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে তার মান ভালো না। সবমিলিয়ে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এজন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী।
এক প্রশ্নের জবাবে এই আমদানিকারক বলেন, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে এবার ডিসেম্বরের শুরুতে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার সম্ভাবনা কম। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারত চলতি মাসের শেষের দিকে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। এটা হলে পেঁয়াজের দাম আবার আগের অবস্থায় চলে আসবে।
দাম কমবে না সহসাই: সরকারি নানা উদ্যোগেও কমছে না পেঁয়াজের দাম। টিসিবি পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বল্প মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করলেও তার কোনো প্রভাব নেই বাজারে। কারণ, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ৪৫ টাকা কেজি দরে এক ক্রেতাকে দেওয়া হচ্ছে দুই কেজি করে পেঁয়াজ। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকের কপালে তা জুটছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সারাদেশে প্রতিদিন পেঁয়াজের চাহিদা ৬ হাজার টন। এই হিসাবে রাজধানীতেই চাহিদা প্রায় দেড় হাজার টন; কিন্তু টিসিবি রাজধানীতে বিক্রি করছে মাত্র ৩৫ টন পেঁয়াজ। এই সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ দিয়ে কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব? বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত রবিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যা আরো এক মাস থাকতে পারে। মিশরের প্রডাক্টটা (পেঁয়াজ) বাজারে ঢুকলে দাম কমে আসবে বলে আশা করছি’।
প্রতিনিধি