Home » কওমির পাঠ্যসূচিতে আসছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

কওমির পাঠ্যসূচিতে আসছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

এবার দেশের সব কওমি মাদ্রাসায় পাঠ্যভুক্ত হচ্ছে নতুন বিষয়। এর আওতায় কওমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, নীতিবোধ ও সর্বজনীন মানবাধিকার বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই ইংরেজি মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ও গ্লোবাল স্টাজিজ’ পাঠ্যভুক্ত করা রয়েছে। আর বাংলা মাধ্যমে আগে থেকেই দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ইংরেজি মাধ্যমে চালু হওয়া ‘বাংলাদেশ ও গ্লোবাল স্টাজিজ’র আদলে কওমি শিক্ষার্থীদের জন্যও কোর্স চালু করা হবে। এর মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমের সঙ্গে কওমি মাদ্রাসার অভিন্ন কোর্স তৈরি করবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কওমি মাদ্রাসা বোর্ড সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, নীতিবোধ ও সর্বজনীন মানবাধিকার স্বচ্ছ করতে অভিন্ন একটি কোর্স চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ইংরেজি মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ও গ্লোবাল স্টাজিজ’ পড়ানো হচ্ছে। এনসিটিবি কোর্সটি তৈরি করবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
এই প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘অভিন্ন একটি কোর্স চালুর করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে আগেই। একটি সেমিনারও করা হয়েছে। শিক্ষাবিদরা অভিমতও দিয়েছেন। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা কোর্স তৈরি নিয়ে কাজ শুরু করবো।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কওমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, নীতিবোধ ও সর্বজনীন মানবাধিকার স্বচ্ছ করতে মন্ত্রণালয় গত সেপ্টেম্বরে মাসিক সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি অভিন্ন কোর্স করে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে।
এনসিটিবি সূত্রে আরও জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করতে শিক্ষাবিদরা অভিমত দিয়েছেন। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের দেশি সংস্কৃতি শেখানোর বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দরকার। আর কওমি মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের ধারণাও স্বচ্ছ করা প্রয়োজন। তা না হলে কোর্স থাকলেও তা ঠিকমতো পড়ানো বা শেখানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। তাই কোর্স তৈরির পাশাপাশি শিক্ষকদের এখনই প্রশিক্ষণ শুরু করা দরকার।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসা তাদের নিজস্ব কারিকুলামে চলে। সরকারের কোনও সুযোগ-সুবিধা নেয় না। কিন্তু দেশের নাগরিক হিসেবে কওমি শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তোলা সরকারের দায়িত্ব। সে কারণেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল ইসলামিয়া’র সদস্য মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু বলেন, ‘আমাদের সাম্প্রতিক বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। আমার জানামতে, কওমি মাদ্রাসার সিলেবাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কোনও চিঠিও আসেনি।’
আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল ইসলামিয়ার আরেক সদস্য মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘হাইয়ার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা, আমি জানি না। তবে আরও অনেক আগে সরকারের কয়েকজন এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হলে তো খুবই ভালো ব্যাপার।’
উল্লেখ্য, এরআগে ২০১৩ সালের দিকে একাধিক গণমাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার সিলেবাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস না থাকা নিয়ে প্রতিবেদন হওয়ার পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সংশোধনের। ওই সংশোধনেও ত্রুটি ছিল, যা পরে বাংলা ট্রিবিউনের একাধিক প্রতিবেদনে উঠে আসে।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *