Home » সিলেটে বাড়তি দুই লাখ মানুষের চাপ

সিলেটে বাড়তি দুই লাখ মানুষের চাপ

রাত পোহালেই দেশের  অন্যতম বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি), সিলেটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্টিত হবে। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সিলেটে অতিরিক্ত দুই লাখ মানুষের সমাগম হচ্ছে। এসব মানুষকে সামাল দিতে সিলেটের প্রশাসনও নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ নানা সংগঠন অতিরিক্ত মানুষের সুবিধার্থে নিয়েছে বাড়তি উদ্যোগ।

আগামীকাল শনিবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ১৭০৩টি আসনের বিপরীতে মোট ৭০ হাজার ৫৪৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী সিলেটে এসে অবস্থান করছেন অভিভাবককে নিয়ে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক পরীক্ষার্থী অভিভাবক নিয়ে আগেভাগেই সিলেটে এসেছেন।  আজ শুক্রবার জুম্মার নামাযের পর সিলেটের শাহজালাল (রহঃ) এর মাজার এলাকায় অসংখ্য শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। ৭০ হাজার পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক মিলে সিলেটে প্রায় অতিরিক্ত দুই লাখ মানুষ হচ্ছে শনিবার।

নগরীর অনেক আবাসিক হোটেল এখন কোন সিট খালি নেই। দরগাহ এলাকার এক আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার কফিল আহমদ জানিয়েছেন, অনেক আগ থেকেই পরীক্ষার্থীরা হোটেল বুকিং করে রেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখন ফ্লোরিং করে অনেককে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হচ্ছে। অনেক হোটেলের সামনে নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সিট খালি নেই।

প্রতি আসনের বিপরীতে কতজন: এবার প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বেন ৪২ জন পরীক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ও বি ইউনিটে ১০০টি সংরক্ষিত আসনসহ মোট ১৭০৩টি আসনের বিপরীতে এ বছর আবেদন করেছেন মোট ৭০ হাজার ৫৪৩ জন শিক্ষার্থী।

এর মধ্যে এ-ইউনিটের ৬১৩টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ২৭ হাজার ৩৯ জন শিক্ষার্থী এবং বি-ইউনিটের ৯৯০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন মোট ৪৩ হাজার ৫০৪ জন শিক্ষার্থী। বি১-ইউনিটে আবেদন করেছেন ৪০ হাজার ৫৪১ জন ও বি২-ইউনিটে আবেদন করেছেন ২ হাজার ৯৬৩ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া ১০০টি আসন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আদিবাসী, পোষ্য, বিকেএসপি, প্রতিবন্ধী ও চা শ্রমিক সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ২৬ অক্টোবর (শনিবার) সকাল সাড়ে ৯টায় এ-ইউনিট ও দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে বি-ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ।

৪ স্থানে গাড়ি পার্কিং:  পরীক্ষা দিতে আসা যেসব শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাড়ি নিয়ে আসবেন তারা চারটি জায়গায় গাড়ি পার্কিং করতে পারবেন। পাশাপাশি সিএনজি চালিত অটো রিক্সা যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে অটোরিকশা শ্রমিক সমিতির সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মতবিনিময় সভায় আগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে অটোরিকশা শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের এ অনুরোধে অটোরিকশা শ্রমিকরাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবেনা বলে জানিয়েছেন।

যেসব স্থানে গাড়ি পার্কিং করা যাবে, সেগুলো হলো হুমায়ুন রশীদ চত্বর-শিববাড়ী-পারাইচক রোডের পাশে, চন্ডিপুল-ধরাধর পুর রোডের পাশে, কুমারগাঁও-তেমূখী-লামাহাজরাই রোডের পাশে ,ইসলামপুর বাজার-সুরমা বাইপাস-বিকেএসপি রোডের পাশে ও  হুমায়ুন রশীদ চত্বর-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক রোডের পাশে।

এছাড়া পরীক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়িগুলো সকাল ৭ টার ভিতর নগরীতে প্রবেশ করে নির্ধারিত কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে দ্রুত নির্ধারিত স্থানে এসে পার্কিং করার অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো.ফয়সল মাহমুদ।

ফ্রি ২০টি বাস:  ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে এবার এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। শিক্ষার্থীদের যাত্রীসেবায় নগরীর গুরুতপূর্ণ স্থান হতে ২০টি বাস সার্ভিস দেবে তারা।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব জানান, আমরা গতবারের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির কথা শুনে খুবই ব্যথিত হয়েছি। এবছর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আমাদেরকে বিষয়টি জানালে আমরা গুরুত্ব নিয়ে দেখেছি। যার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য আমরা এ বছর ২০টি বাস বরাদ্দ দিয়েছি। বাসগুলো পরীক্ষার্থীদেরকে তাদের গন্তব্যে পৌছে দিবে। এর মধ্যে ১০টি বাস কদমতলী বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশন, ৫টি বাস রিকাবীবাজার পয়েন্ট, ১টি জেলরোড পয়েন্ট, ১টি আম্বরখানা পয়েন্ট, ১টি সোবহানীঘাট পয়েন্ট, ১টি শহীদ মিনার পয়েন্টে, ১টি জিন্দাবাজার পানসী রেস্টুরেন্ট পয়েন্টে থাকবে। বাসগুলো এসব স্থান থেকে পরীক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে থামবে।

এসময় তিনি বলেন, আমরা আরো বেশী সংখ্যক বাস সরবারহ করতাম। তবে সামগ্রিক যানজট সামলাতে পুলিশ আমাদেরকে এর থেকে বেশী সংখ্যক বাস সরবারহ না করতে অনুরোধ করেছেন। অন্যদিকে সকালে এ সেবা থাকলেও বিকালে জনস্রোতত ও ট্রাফিক সামলাতে এ সেবা বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছে পুলিশ। তিনি আরো বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও পয়েন্টে পরীক্ষা নির্দেশিত সম্বলিত ব্যানার ও সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ভর্তি পরীক্ষার সময় সিএনজি চালকদের মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া দাবি সিন্ডিকেটের কারণে ভোগান্তিতে পড়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। পরীক্ষার্থীদের  জন্য ফ্রি মোটর বাইক: সিলেট বাইকিং কমিউনিটি (এসবিসি) ও বুস্টার্স নামে দুইটি সংগঠন পরীক্ষার্থীদের ফ্রি মোটর বাইক দিয়ে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে  পৌঁছে দিতে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সিলেটী বাইকাররা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হতে শিক্ষার্থীদের আশেপাশের কেন্দ্র সনাক্তকরণে ও নিরাপদে পৌঁছে দিবে। তারা শহরের ৯টি পয়েন্ট নির্বাচন করেছে এবং প্রত্যেকটি পয়েন্টে ১০-১৩টি বাইক থাকবে। যেখানে থাকবে তাদের স্বেচ্ছাসেবী ও প্রয়োজনীয় বাইকার্স।

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও স্বেচ্ছাসেবীদের নাম ও নাম্বার হলো- সুবিদবাজার পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবী সাগর আহমেদ ০১৭১০৫৬১৩৩৭, আব্দুল্লাহ আল মামুন ০১৭৪৫৯০৪৭৯১, চৌহাট্টা পয়েন্টে নুপুর দে- ০১৭৬৩৮০৩৯০০, পারভেজ- ০১৮৩৭৮৪৪১৭৯, মদিনা মার্কেট পয়েন্টে আফজাল নাঈম-০১৭৬৫৬৫৯০৯৩, পান্ডব ০১৭৩০০০৬০৩৬, বন্দরবাজার পয়েন্টে রাজিব কুমার রায় ০১৭১৮৫১৩৭৯৫, রশীদ- ০১৭১১৯১১০৩৮, জিতু মিয়ার পয়েন্ট ও কাজীরবাজার ব্রিজে অনুপম ০১৭৩৩৫০০৪২৬, নাইওরপুল পয়েন্টে সুব্রত হাজরা ০১৭২১৪২৩৫৮৭, এমাদ- ০১৭১৯৬৯৮০৩১, টিলাগড় পয়েন্টে জাহাঙ্গীর আলম ০১৭২৮৩৪২৯৭৫, প্রমথ ০১৭৩৯৭১৬৮৬০, আম্বরখানা পয়েন্টে আরিফ ০১৭২০১৪৬৩৩৭, নুরুল করিম ০১৭২৩৮৬৬০৪৯, রিকাবীবাজার পয়েন্টে সাইফুল ০১৭১২০১০১১০ এবং মুস্তাফিজুর রহমান ০১৭১৪৪০২৫২৪ এর সাথে যোগাযোগ করলেই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবেন মোটর সাইকেল। এছাড়া ০১৭৩৪-০০৪৬৩৬, ০১৭১৭-০৯২৭৭৯, ০১৭১০-২১১২৭২ এবং ০১৭২৯৮৮১৬৩২ কন্ট্রোল রুমের নাম্বার সমূহে কল করে যেকোনো তথ্য জানতে পারবেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। সূত্র: সিলেটভিউ

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *