অনলাইন সংস্করণ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। রোববার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের নামে থাকা একটি ফেসবুক আইডির লেখাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছিল ক্যাম্পাসে। ফেসবুকের ওই লেখার জন্য ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং তাকে ‘দেখে নেয়া’র হুঁশিয়ারি দেয় ছাত্রলীগ। তবে আলোচিত এই ফেসবুক আইডিটি ‘ভুয়া’ বলে জানিয়েছেন ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। পরে ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ নেতারা মধুর ক্যান্টিনে যান। মধুর ক্যান্টিনে আগে থেকেই অবস্থান করছিল ছাত্রলীগ। ছাত্রদল নেতারা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও বসার জায়গা পাচ্ছিলেন না। পরে তারা ফ্লোরে বসে পড়েন।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এসময় ৫ ছাত্রদল নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ।
আহত ছাত্রদল নেতারা হলেন- ঢাকসু নির্বাচনে জিয়া হলের ভিপি পদে নির্বাচন করা তারেক হাসান মামুন, যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহাজান শাওন, ছাত্রদল নেতা মামুন খান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ওবায়দুল্লাহ নাঈম। এ সময় ছাত্রদলের নারী কর্মী কানেতালা ইয়া লাম লাম এবং মানসুরা আলমকেও লাঞ্চিত করা হয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের ওই ফেসবুক আইডির ‘বায়ো’তে লেখা আছে, ‘৭৫ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’। শনিবার সকাল থেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এছাড়াও ওই বায়ো’তে আরও উল্লেখ আছে, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’। তার কভার ফটোতে বুয়েটের নিহত শিক্ষার্থী আবরারের একটি ছবি দিয়ে লেখা লাল-সুবজ রঙে লেখা আছে ‘ভারত বিরোধী আন্দোলনের স্বাধীন বাংলার প্রথম শহীদ আবরার।’
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল যুগান্তরকে বলেন, ফেসবুকে আমার ব্যক্তিগত কোনো আইডি নেই। যে একটি আইডি ছিল নেতা হওয়ার পরপরই সেটি হ্যাক হয়ে যায়। এরপর আমার নামে ১০-১২টি ফেক (ভূয়া) আইডি খোলা হয়েছে। এ বিষয়ে গত ৬ অক্টোবর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। জিডি নাম্বার ২৯০। এছাড়া ফেসবুকে নেতাকর্মীদের অনেকে তখনই স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য একপক্ষ এই প্রচার করছে। আমাকে বিপদে ফেলতে এবং সংগঠনকে বিতর্কিত করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একটি মহল এটি করেছে। তিনি বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করিনা। আমি সুস্থ ধারায় রাজনীতি করতে চাই।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সাংবাদিক সমিতিকে সম্মেলন করে ছাত্রদল। বেলা সোয়া ১১টায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ছাত্রদল নেতারা তাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে মধুর ক্যান্টিনে গেলে ছাত্রদলের হামলার শিকার হন ছাত্রদল নেতারা। এসময় মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপসম্পাদক আল মামুন, মাস্টার দা সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাইসুল ইসলাম এবং হামলার নেতৃত্বদানকারী এই আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ নেতারা।
সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, ‘আমার কোনো ফেসবুক আইডি নেই। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৬টি আইডি চালু রয়েছে। এর জন্য আমি তেজগাঁও থানায় জিডি করেছি। ওইসব অ্যাকাউন্টের কোনো লেখার দায়ভার আমি নেব না।
হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা ৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার এই স্লোগান দেয় মধুর ক্যান্টিনে। আপনারা জানেন ৭৫ এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বিএনপির জন্ম হয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের যারা আছি ৭৫ এর হাতিয়ার নিয়ে যারা কাজ করবে আমরা ঘোষণা দিয়েছি তাদের প্রতিহত করব। সূত্র: যুগান্তর
প্রতিনিধি