শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোরডটকম:
গত বছর অকাল বন্যায় ফসল হারানোর পর সুনামগঞ্জের কৃষকরা ধারদেনা করে বোরো আবাদ করেছিলেন। ভালো ফলনের আশায় তারা উচ্চ ব্রি-২৮ ধানের চাষ করেছেন। কিন্তু এই বছর আবার নতুন উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এবার বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্বরপুর উপজেলার অঙ্গারুলি, তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরে ও ধর্মপাশা উপজেলার বোয়ালিয়া, কাইলানী ও আহমদিয়া হাওরের বোরো জমিতে ছত্রাক জনিত রোগ ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। ধানের শীষ বের হওয়ার পর পরই ধান গাছগুলো এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এক জমি থেকে অন্য জমিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ছত্রাকবাহিত রোগ। গেল বারের আগাম বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য হাওর পাড়ের কৃষকরা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদ করছিলেন। জমিতে ধানের শীষ বের হওয়ার পর পরই ধান গাছের আগা হলুদ রং ধারণ করে সাদা হয়ে যায়। আর ধান গাছের গোড়া কালো রং ধারণ করে।
কৃষকরা জানান,এই প্রথম বারের মতো তারা জমিতে ব্লাস্ট রোগের মোকাবেলা করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যে প্রায় ২০০ হেক্টর জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হলেও কৃষকদের মতে এর পরিমাণ অনেক বেশি। প্রকৃতপক্ষে তিন উপজেলায় আক্রান্ত জমির পরিমাণ প্রায় এক হাজার হেক্টর বলে দাবি করেন কৃষকরা। আক্রান্ত জমিগুলোতে তারা ছত্রাক নাশক ছিটিয়েও কোনও ফল পাননি। বালিজুরি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াহিদ বলেন,‘গত কয়েক দিন ধরে আঙ্গারুলি হাওরে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগ এক জমি থেকে অন্য জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ধারদেনা করে আড়াই হাল (২৮ কেয়ার) জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার জমির পুরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। জমির সব ধান সাদা হয়ে গেছে।
তারা মিয়া বলেন, ‘জমি আগের দিন দেখে গেছি কিছু অংশ সাদা হয়েছে আর পরের দিন এসে দেখি পুরো জমির ধান সাদা হয়ে গেছে। গাছের ডগার ধানের শীষ সব চুচা হয়ে গেছে।’
মুক্তিযোদ্ধা আমির উদ্দিন বলেন,‘অনেক আশা নিয়ে মানুষ ঋণ করে ক্ষেত করছিল। এখন ব্লাটের আক্রমণে তারা সর্বশান্ত হওয়ার পথে। ছত্রাক নাশক পাম্প মেশিন কেনার ক্ষমতা কৃষকের নেই। এগুলো সরকার থেকে বিনা মূলে দিলে কৃষক কিছুটা হলেও ফসল রক্ষা করতে পারবে।
রমিহ উদ্দিন নামে এক কৃষক বলেন,‘প্রথমে ধান গাছ লাল রং ধারণ করে পরে পুরো ক্ষেত সাদা হয়ে যায়। এসব জমির ঘাস গরুও খায় না। চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, আঙ্গারুলি হাওরে ৫০০ হেক্টর জমির মধ্যে তিনশো হেক্টর জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আবহাওয়া এরকম থাকলে ব্লাস্ট আক্রমণ আরও বাড়তে পারে এবং অন্য হাওরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল কদ্দুছ বলেন,‘ আমরা হাওরের জমি পরিদর্শন করেছি। আঙ্গারুলি হাওরে ব্লাস্টের আক্রমণ হলেও অন্যান্য হাওরে এ রোগের আক্রমণ হয়নি। এটি দেখার পর আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। রাতে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও দিনে অতিরিক্ত গরমের কারণে জমিতে ব্লাস্ট রোগ হচ্ছে। আবহাওয়া এরকম থাকলে আরও বেশি জমি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছাত্রাক নাশক ওষুধ দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। একজনের জমিতে ছত্রাক নাশক দিলে অন্যজন যদি না দেন তাহলে এটি পাশের জমিতেও ছড়িয়ে যেতে পারে এবং ব্লাস মহামারী আাকারে দেখা দিতে পারে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন,‘ব্লাস প্রতিরোধের জন্য জমিতে পানি ধরে রাখতে হবে।’
জেলা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক স্বপন কুমার সাহা বলেন,‘জেলার বেশ কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ব্লাস্ট রোগ থেকে ধানগাছ রক্ষা করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। এবছর জেলায় দুই লাখ বাইশ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এ জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৮১ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমি। এর মধ্যে এক ফসলী জমি রয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৩ হেক্টর।
বার্তা বিভাগ প্রধান