আকাশে নীল সাদা মেঘ পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে, শরতের কাশফুল আর শিশির ভেজা শিউলী ফুল জানান দিচ্ছে মা আসছে। আর সেই মত মায়ের আগমণী বার্তা নিয়ে ২০০ বছর ধরে দুর্গাপুজো করে আসছেন বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার ডিহিপারা পঞ্চায়েতের পলাশডাঙ্গা গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবার। তবে এই বনেদি বাড়ির পুজো বিশালাক্ষী পুজো নামেই পরিচিত। এই বাড়ির মালিক দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায় তিনিই প্রথম এই দুর্গাপুজা শুরু করেছিলেন। দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায়ের নাতনি সুমনা দেবী আবার তার নাতি আদিনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রীয়নাথ চট্টোপাধ্যায় ও দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় নামে তিন ভাই বর্তমানে এই পুজোর হাল ধরেছেন।
চট্টোপাধ্যায় পরিবার সুত্রে জানা যায়, দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসগরের বুন্ধত্ব ছিল। আর সেই সুত্রে নাকি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই বাড়িতে চারদিন ছিলেন এবং ১৮৫৬ সালের ৭ ই ডিসেম্বর নিজের পুত্রের সাথে এই বাড়ির আশ্রিতা কালিমতি দেবীর প্রথম বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন।
তবে ইতিহাস বলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে নিজের উপস্থিতিতে প্রথম বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন চালু হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন জেলায় গিয়ে নিজের উদ্যোগে বহু ” বিধবা বিবাহ ” দিয়েছিলেন। হয়ত সেই সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পলাশডাঙ্গার এই দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে এসেও বিধবাবিবাহ দিয়েছিলেন। তবে দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে প্রথম বিধবাবিবাহ নাকি রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে প্রথম বিধবাবিবাহ দিয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তানিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বিতর্ক যাই থাক এখনও এই চট্টোপাধ্যায় পরিবার নিজেদের ইশ্বরচন্দ্রের বিয়াই বাড়ি বলেই মনে করে। বর্তমান এই বাড়ির সদস্য দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন , আমাদের বাড়ির এই পুজো ২০০ বছর ধরে চলে আসছে। কোন পরিস্থিতিতে আমরা এই পুজো বন্ধ করিনি। এছাড়াও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজের পুত্রের সঙ্গে এই বাড়ির আশ্রিতা কালীমতি দেবীর ১৮৫৬ সালে প্রথম বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন।
এই মুহূর্তে তারা সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ রাখেন সরকার তাদের এই বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে খুবই ভালো হয়। বাড়ির পুত্রবধূ মল্লিকা চ্যাটার্জী বলেন আমাদের বাড়িতে মহালয়ার দিন থেকেই পূজোর ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় গ্রামের সকল মানুষই আমাদের এই পুজোতে অংশগ্রহণ করে। পুজোর বিশেষত্ব হলো , সপ্তমীর দিন দোলা আসে নদী থেকে মাকে স্নান করিয়ে নিয়ে। এছাড়াও প্রতিবছরই একশো আটটি পিতলের প্রদীপ জ্বালানো হয়। জ্বালানো হয় একশ আটটি মাটির প্রদীপও জালানো হয়। এবং অষ্টমীর দিন কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে আমাদের বাড়িতে। আর প্রতি বছরই আমরা সেই রীতিনীতি মেনেই পুজো করি।